আন্দোলনের মধ্যেই জবি ছাত্রীর পায়ের ওপর শিক্ষকের গাড়ি!
- জবি প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ২০ মার্চ ২০১৯, ০৬:৪০ PM , আপডেট: ২০ মার্চ ২০১৯, ০৭:৪২ PM
রাজধানীজুড়ে চলা নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের মধ্যেই ছাত্রীর পায়ের উপর দিয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষকের গাড়ি উঠে গেল। বুধবার দুপুরে পুরান ঢাকার রায় সাহেব বাজার এলাকায় শিক্ষার্থীদের আন্দোলন চলাকালীন এ ঘটনা ঘটে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ওই ছাত্রীর পায়ের হাড় ভেঙ্গে গেছে। সূত্রের তথ্য, এ ঘটনার পরপরই ওই শিক্ষকের গাড়ি ভাঙচুর করে শিক্ষার্থীরা।
গাড়ি চাপায় আহত ওই ছাত্রীর নাম আয়েশা মৌমিনিন আহত। বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষার্থী তিনি। বর্তমানে তিনি ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. নূর মোহাম্মদ জানান, যেহেতু শিক্ষক এবং মেয়েটি উভয়ে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের তাই বিষয়টি আমরা বসে মিমাংসা করব। শিক্ষক এবং শিক্ষার্থী উভয়ের সাথে কথা হয়েছে, তারা কেউই এ বিষয়ে আমাদের কাছে অভিযোগ দায়ের করেননি।
এদিকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থীরা নিরাপদ সড়কের দাবিতে সড়ক অবরোধ করে দিনভর আন্দোলন করেছেন। তাদের আন্দোলনে পুরান ঢাকার বিভিন্ন রাস্তাঘাটে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। অচল হয়ে পড়ে রাস্তাঘাট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। ভোগান্তির শিকার হন সাধারণ যাত্রীরা।
বুধবার সকাল দশটায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা একত্রিত হয়ে প্রথমে ক্যাম্পাসে মানববন্ধন করে। এরপর মিছিল নিয়ে রায় সাহেব বাজার ও তাঁতিবাজার মোড় অবরোধ করে আন্দোলন করেন শিক্ষার্থীরা। দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা অবরোধের পর বৃহস্পতিবারও আন্দোলন চালানোর ঘোষণা দিয়ে অবরোধ তুলে নেন।
শিক্ষার্থীরা নিরাপদ সড়কসহ আট দফা দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দিয়ে মুখরিত করে তুলে সড়কের বিভিন্ন মোড়। এতে সদরঘাট টু গুলিস্তান ও গুলিস্তান টু মাওয়া ঘাট সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। তাতে অচল অবস্থায় পরিণত হয় পুরান ঢাকার বিভিন্ন রাস্তাঘাট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। এদিকে, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের ফলে সড়কে যান চলাচল বন্ধ হওয়ায় ভোগান্তিতে পরে সাধারণ যাত্রীরা। পায়ে হেটে গন্তব্যে পৌঁছাতে হয় সাধারণ যাত্রীদের। আ. রহমান নামে এক ব্যাক্তি বলেন, আমি সদরঘাটে আসছিলাম। গুলিস্তান আসার পর দেখি শিক্ষার্থীদের অবরোধের কারণে রাস্তাঘাট বন্ধ হয়ে আছে। রাস্তায় কোন প্রকার যান চলাচল করছে না। এমনকি রিক্সাও চলছে না। তাই নিরুপায় হয়ে পায়ে হেঁটেই আসতে হলো।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বলেন, আবরারের নামে ওভারব্রীজ বানাবে মাননীয় মেয়র। আমরা তরুণেরাও সিদ্ধান্ত নিলাম, ট্রাক চাপায় মেয়র মরলে আমরা স্ট্যাচু বানাবো মোড়ে মোড়ে। রোজ নিয়ম করে সব স্ট্যাচুতে বকুলের মালা দিব। রুট পারমিট বাতিল করানোর মতো প্রহসন দিনদুপুরে মাতলামি করার মতোই ঘটনা। কিংবা বাস মালিকরা মন্ত্রীদের নির্দেশনা ঠেং দিয়াও মানেন না এই কথা সত্য প্রমাণের জন্য পারমিট বাতিল হওয়া বাসগুলো মাথা তুলে রাস্তায় দিব্যি চলছে ফিরছে।
শিক্ষার্থীরা আরও বলেন, অপরাধীরা শাস্তি পাবে, আইনের আওতায় আনা হবে, তদন্ত চলছে... এই বলে আসা প্রশাসনিক কর্মকর্তারা তাদের কাজ শেষ করতে না করতেই যেন না শুনে নিজ ছেলে কিংবা মেয়েটার নিথর দেহ জেব্রা ক্রসিংয়ের উপর পড়ে আছে। আর সব থেকে বড় প্রশ্ন- আন্দোলন করে লাভ কি হবে? খানিক চিল্লাচিল্লি। মিছিল, মিটিং, স্লোগান, অবরোধ। তারপর যে লাউ সেই কদু। কিন্তু না, লাভ আছে। আন্দোলনের বিশেষ জিত হলো সাহস। যা পুরো শহরে ছেয়ে গেছে। এখন আর কেউ মুখ লুকিয়ে রাখে না। বরঞ্চ অন্যায় হলেই ক্ষমতার বিপরীতে প্ল্যাকার্ড হাতে বেরিয়ে পড়ে বুক টান করে। এই সাহস যখন একদিন সবার বুক পকেটে জায়গা করে নিবে সেদিন ভেঙে যাবে সকল ক্ষমতার ত্রাস।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের আট দফা দাবি:
নিরাপদ সড়ক আন্দোলনে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীকর্তৃক প্রণীত ৮ দফা দাবি পেশ করা হলো। তা প্রশাসনের অতিসত্বর বাস্তবায়ন করতে হবে। আমরা অতিদ্রুত এসকল দাবী এবং আইনের বাস্তবায়ন দেখতে চাই বলেও জানান শিক্ষার্থীরা।
১. অবিলম্বে আবরার হত্যার বিচার করতে হবে এবং সেই সাথে দ্রুত পরিবহণ আইন সংস্কার করতে হবে।
২. প্রত্যেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সামনে অতিদ্রুত ফুট ওভার ব্রিজ এবং স্পিড ব্রেকার নির্মাণ করতে হবে।
৩. সকল ফুটপাত দখলমুক্ত করে সাধারণ জনগণের নির্বিঘ্নে চলাচল নিশ্চিত করতে হবে।
৪. সকল শিক্ষার্থীদের বাসে হাফ ভাড়া নিশ্চিত করতে হবে সেই সাথে সিটিং সার্ভিস নামক সকল প্রকার ভণ্ডামি বন্ধ করতে হবে।
৫. দেশের সর্বত্র নির্দিষ্ট গতিসীমার মধ্যে গাড়ি চলাচল নিশ্চিত করতে হবে এবং প্রতিটি স্টপেজে বাস থামানো নিশ্চিত করতে হবে।
৬. প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে সি সি ক্যামেরার মাধ্যমে গাড়ি চলাচলের নজরদারি এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
৭. প্রতিমাসে ড্রাইভারদের গাড়ি লাইসেন্স এবং গাড়ির ফিটনেস চেক করতে হবে এবং সেই সাথে প্রত্যেক গাড়ি চালকের সর্বনিম্ন এসএসসি/সমমান শিক্ষা যোগ্যতা নিশ্চিত করতে হবে।
৮. অতিসত্বর ট্রাফিক আইনের যথাযথ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে।
নিরাপদ সড়ক আন্দোলনে শুধু জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য ৩ দফা দাবী পেশ করা হলো-
১. অতিসত্বর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় বাসের ডাবল ট্রিপ চালু করতে হবে।
২. বিশ্ববিদ্যালয়ের গেইটের সামনে অতিদ্রুত ফুট ওভারব্রীজ নির্মাণ করতে হবে।
সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষে এম এ সাঈদ চৌধুরী ও আরবিন রাসেল দাবিগুলো উপস্থাপন করেন।