বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়

দুদকের মামলা গোপন করে কর্মকর্তার চাকরি বহাল ও পদোন্নতির অভিযোগ

রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) তিনজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলার আসামি হয়েও তথ্য গোপন করে পদোন্নতি নিয়ে বহাল তবিয়তে থাকার অভিযোগ উঠেছে।

অভিযুক্তরা হচ্ছেন, পরিকল্পনা ও উন্নয়ন বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালক এটিজিএম গোলাম ফিরোজ, উপ-রেজিস্ট্রার মোর্শেদ-উল আলম রনি ও উপ-পরিচালক (বাজেট) খন্দকার আশরাফুল আলম।এ বিষয়ে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়টির রেজিস্ট্রার, শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনেও (ইউজিসি) চিঠি পাঠানো হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র থেকে জানা যায়, বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৬জন কর্মকর্তার স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত চিঠি ও সংশ্লিষ্ট ডকুমেন্ট শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনে পাঠানো হয়।

ডকুমেন্টস থেকে জানা যায়, ওই তিন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তদন্ত শেষে দুদক বিভাগীয় বিশেষ জজ আদালত রংপুর বরাবর অভিযোগপত্র দাখিল করেন। আদালতে বিচারাধীন মামলার নম্বর: স্পেশাল কেস নম্বর- ৮/২০১৭, কোতয়ালী থানার মামলা নম্বর- ৪০/২০১৩, জি আর কেস নম্বর ১০৯৮/১৩ ধারা: ৪০৯/১০৯ দ-বিধি তৎসহ ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন এর ধারা ৫(২)।

ওই বিচারিক আদালতে ২০১৭ সালের ২১ অক্টোবর ৮ নম্বর আদেশে উল্লেখিত অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের অভিযোগ হতে অব্যাহতি দেওয়া হয়। তবে দুদক কর্তৃপক্ষ বিচারিক আদালতে ওই আদেশের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের ক্রিমিনাল ডিভিশন মামলা (নম্বর ৩৮৯/২০১৮) দায়ের করেন। ওই রিভিশন মামলায় দ্বৈত বেঞ্চ গত বছরের ৩১ জানুয়ারি রুল ইস্যুর আদেশ দেন এবং অভিযুক্ত কর্মকর্তাগণকে রংপুরের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে আত্মসমর্পণের নির্দেশনা দেন এবং আদালতকে জামিন দেওয়ার আদেশ দেন।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, উল্লেখিত কর্মকর্তাগণ ওই মামলার আসামি হিসেবে নিম্ন আদালতে হাজির হয়ে জামিন লাভ করেন। হাইকোর্টে ক্রিমিনাল রিভিশন মামলাটি বর্তমানে বিচারাধীন। ওই কর্মকর্তারা উচ্চ আদালতে পরবর্তী বিচারিক কার্যক্রম কৌশলে গোপন রেখে অব্যাহতির কাগজ দেখিয়ে তারা পদোন্নতিপ্রাপ্ত পদে যোগদান করে অদ্যাবধি কর্মরত রয়েছেন, যা চাকরি বিধির পরিপন্থী।

অভিযোগপত্র থেকে আরো জানা যায়, ওই মামলা চলাকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্য প্রফেসর ড. নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করলে ২০১৭ সালের ১৬ জুলাই অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেটের ৫৩তম সভায় তারা পদোন্নতি পান।
তবে পরবর্তী সভায় একই বছরের ৩ অক্টোবর সিন্ডিকেট সদস্যদের আপত্তির মুখে তাদের পদোন্নতি স্থগিতসহ সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। কিন্তু নিম্ন আদালত থেকে আসামিদের অব্যাহতি দেওয়া হলে সিন্ডিকেটের কোন অনুমতি ছাড়াই তৎকালীন রেজিস্ট্রার ইব্রাহীম কবির তাদের কাজে যোগদান করান। পরবর্তী সময় উচ্চ আদালত আসামিদের নিম্ন আদালতে হাজির হয়ে জামিন নেওয়ার আদেশ দেন। কিন্তু উচ্চ আদালতের এ তথ্য গোপন করে তারা চাকরিতে বহাল তবিয়তে রয়েছেন। কিন্তু চাকরি বিধি অনুযায়ী, আত্মসমর্পণের পর জামিনে মুক্তি লাভ করলেও সাময়িক বরখাস্ত বহাল থাকার নিয়ম রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ পরবর্তী সময়ে আর কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় তারা বহাল তবিয়তে রয়েছেন। তবে সিন্ডিকেটে তাদের যোগদানের কোনো বিষয় ছিল না বলে অভিযোগ করেন অভিযোগকারী কর্মকর্তারা।

এ বিষয়টি অনেক দিন আগের। সিন্ডিকেটের অনুমোদনের পরিপ্রেক্ষিতে তাদের কাজে যোগদান করানো হয়েছিল বলে দাবি সাবেক রেজিস্ট্রার ইব্রাহিম কবীরের।

অভিযুক্ত মোরশেদ-উল আলম রনি অভিযোগটি অস্বীকার করে জানান, সে সময় এ বিষয়ে বিভিন্ন পেপfর পত্রিকায় সংবাদ হয়েছিলো, যেখানে উপাচার্য এবং এক্সপার্টদের কমেন্টসও ছিলো। তাহলে এটা কিভাবে গোপন করা হলো? তখন বিষয়টি নিয়ে মামলা হয়েছে এটা আমাদেরকে আন-অফিসিয়ালি জানানো হয়েছিলো। এমনকি তখন আমাদেরকে মৌখিক বরখাস্ত করা হয়েছিলো। পরবর্তিতে আমরা এটা থেকে অব্যাহতিও পেয়েছি। বিষয়টি নিয়ে আমাদের মধ্যে দুইজন উপাচার্যের সাথে কথা বললে তিনি অভিযোগের কথা শুনে অবাক হয়েছেন। তবে তিনি জানান, বিষয়টা নিয়ে কেউ জল ঘোলা করতে চাইছেন। এ বিষয়ে উপাচার্যের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান রেজিস্ট্রার আবু হেনা মুস্তফা কামাল অভিযোগ পাওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, প্রশাসনের সঙ্গে পরামর্শের পর এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

২৬জন কর্মকর্তার স্বাক্ষরিত চিঠি ও সংশ্লিষ্ট ডকুমেন্ট:


সর্বশেষ সংবাদ