ডাকসু নির্বাচন: কোন প্যানেল থেকে কারা আসছেন

উপরে বাঁ থেকে— রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন, গোলাম রাব্বানী, নুরুল হক নুর, হাসান আল আরিফ, মো. কাইউম উল হাসান, লিটন নন্দী, আলীম হায়দার ও ফয়েজউল্লাহ মানিক।
উপরে বাঁ থেকে— রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন, গোলাম রাব্বানী, নুরুল হক নুর, হাসান আল আরিফ, মো. কাইউম উল হাসান, লিটন নন্দী, আলীম হায়দার ও ফয়েজউল্লাহ মানিক।  © টিডিসি ফটো

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন ১১ মার্চ। নির্বাচনকে সামনে রেখে ইতোমধ্যেই মনোনয়ন ফর্ম বিক্রি শুরু হয়েছে। যা আগামী ২৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলবে। এদিকে নির্বাচন নিয়ে ইতোমধ্যেই কোন সংগঠন থেকে কারা মনোনয়ন পাবেন- তা নিয়ে নানা হিসাব-নিকাশ শুরু হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে শুধু বিভিন্ন সংগঠনের মনোনয়ন প্রত্যাশীরাই নয়, সজাগ দৃষ্টি রাখছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরাও।

দীর্ঘ ২৮ বছর পর হতে যাওয়া এ নির্বাচনে আলোচনায় আছে চারটি প্যানেলে। এর মধ্যে সরকার সমর্থিত জোট সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদভুক্ত সংগঠনগুলোর সাথে একসাথে প্যানেল দেয়ার কথা জানায় ছাত্রলীগ। পাশাপাশি ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে চেষ্টা আছে টিএসসির সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর শীর্ষ নেতাদের নিজেদের পক্ষে আনার। অন্যদিকে ছাত্রদলের পক্ষ থেকে দাবি দাওয়া পূরণ না হলে মনোনয়ন না নেওয়ার ঘোষণা দেয়া হলেও দলের শীর্ষ নেতাদের পরিকল্পনা রয়েছে একক প্যানেল দেয়ার। নির্বাচন ঘিরে আলোচনায় অন্য দুটি প্যানেল হলো প্রগতিশীল ছাত্র জোট ও সাম্রাজ্যবাদবিরোধী ছাত্র ঐক্যের সমন্বয়ে গঠিত প্যানেল এবং কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের একক প্যানেল। সাম্প্রতিক সময়ে আলোচনায় আসা স্বতন্ত্র জোট শেষ পর্যায়ে বাম সংগঠনগুলোর প্যানেলে যোগ দেবে বলে মনে করা হচ্ছে। পাশাপাশি আলোচনা আছে বাম জোট ও কোটা আন্দোলনকারীদের সমন্বিত জোট নিয়েও।

ছাত্রলীগ প্যানেল
ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় এবং ঢাবি শাখার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা আইন বিভাগের শিক্ষার্থী। তাদের বয়সও ৩০-এর মধ্যে। ফলে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন, সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস ও সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসাইনকে ভিপি-জিএস পদে ভাবা হচ্ছে। এদের বাইরে আলোচনায় আছেন শামসুন নাহার হলের সভাপতি নিপু তন্বী, বিশ্ববিদ্যালয়ের সদ্যবিদায়ী কমিটির সাধারণ সম্পাদক মোতাহার হোসেন প্রিন্স, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সদ্যবিদায়ী সহ-সভাপতি কেন্দ্রীয় আদিত্য নন্দী,  উপ কর্মসূচী ও পরিকল্পনা সম্পাদক সাদ বিন কাদের চৌধুরী, আইন সম্পাদক আল নাহিয়ান খান জয়, সহ-সম্পাদক খাদিমুল বাশার জয়, সাবেক সদস্য ফয়েজউল্লাহ মানিক।

ছাত্রলীগের নেতৃত্বে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের প্যানেল থেকে আলোচনায় থাকা অন্যান্যরা হলেন, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ (জাসদ, শরীফ নুরুল আম্বিয়া) থেকে মাহফুজুর রহমান রাহাত, শাহরিয়ার রহমান বিজয় প্রমূখ। ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস বলেন, ছাত্রলীগের থেকে কারা ডাকসু নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে তা প্রধানমন্ত্রী সিদ্ধান্ত নিবেন। ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা পূর্ণ প্যানেলে কেন্দ্রীয় ও হল সংসদে নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানান তিনি।

ছাত্রদল প্যানেল
দাবি দাওয়া পূরণ না হলে মনোনয়ন না নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে ছাত্রদল। সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক আকরামুল আহসান বলেন, আমাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত প্রশাসনের সাথে আলোচনা অব্যাহত থাকবে। তবে ডাকসু নির্বাচন নিয়ে আমরা সবসময় ইতিবাচক। ছাত্রদলের প্যানেল থেকে ছাত্রত্ব না থাকায় সংগঠনটির শীর্ষ চার নেতার কেউই নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না। ফলে সংগঠনটির প্যানেল থেকে আলোচনায় আছে জহুরুল হক হলের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ২০০৭-০৮ সেশনের শিক্ষার্থী ও ছাত্রদল নেতা হাসান আল আরিফ, সূর্য সেন হল ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক মো: কাইউম উল হাসান, সূর্য সেন হল ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মাহফুজ চৌধুরী, ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ হল ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সাইদুর রহমান রাফসান, ফজলুল হক মুসলিম হল ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য নুরে আলম ভূঁইয়া ইমন প্রমূখ। এদিকে ছাত্রদলের প্যানেলে বিষয়ে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সংসদের সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসান বলেন, ছাত্রদলের প্যানেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মাঝে জনপ্রিয় এবং নেতৃত্বের গুণাবলীতে উত্তীর্ণ দলের নেতাকর্মীরা গুরুত্ব পাবেন। তবে নির্বাচনের পরিবেশ এখনও তৈরী হয়নি দাবি করে ছাত্রদলের সাত দফা মেনে নিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

বাম জোট 
বাম জোট থেকে আলোচনায় আছে ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক লিটন নন্দী, ঢাবি সভাপতি ফয়েজ উল্লাহ, সাধারণ সম্পাদক রাজিব দাস, ছাত্রফ্রন্টের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সালমান সিদ্দিকী, ছাত্র ইউনিয়ন বিশ্ববিদ্যালয় কমিটির সমাজকল্যাণ ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক ঐশ্বর্য আহমেদ, সদস্য কাজী মালিহা। তবে এ জোটে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে আন্দোলন সংগ্রামে নেতৃত্ব দেয়া সংগঠন, নিপীড়নবিরোধী শিক্ষার্থী ও আদিবাসী শিক্ষার্থীদের অন্তর্ভুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে।

ঢাবি ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি ফয়েজ উল্লাহ বলেন, আমরা জোটগতভাবে ডাকসু নির্বাচনে অংশ নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। প্রার্থী চূড়ান্ত করতে আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীদের সাথে আলোচনা করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দিব।

222
উপরে বাঁ থেকে— সনজিত চন্দ্র দাস, সাদ্দাম হোসাইন, মোতাহার হোসাইন প্রিন্স, নিপু তন্বী, আদিত্য নন্দী, মাহফুজ চৌধুরী, ফয়েজ উল্লাহ, ফারুক হাসান

 

কোটা সংস্কার আন্দোলন 
আন্দোলনের প্লাটফর্ম বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল হক নূর, রাশেদ খান, ফারুক হাসান, বিন ইয়ামিন মোল্লা, সোহরাব হোসেন, মশিউর রহমান নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারেন।

এ বিষয়ে কোটা আন্দোলনের যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল হক নুর দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যেসব অরাজনৈতিক শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছে তাদেরকে সাথে নিয়ে আমরা প্যানেল ঘোষণা করব। আমরা আশা করছি সাত কলেজের অধিভূক্তি বাতিল, কোটা সংস্কার, প্রশ্নফাঁসের বিরুদ্ধে যারা জোরালো ভূমিকা রেখেছিলো তাদের নিয়ে একটি শক্তিশালী ও গ্রহণযোগ্য প্যানেল দিতে পারবো।’

টিএসসির সংগঠন 
ডাকসু নির্বাচনকে সামনে রেখে টিএসসি ভিত্তিক বিভিন্ন সংগঠনের নেতাদের দলে ভেড়াতে চেষ্টা চালাচ্ছে রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনগুলো। এদের মধ্যে আলোচনায় আছে ডিবেটিং ক্লাবের সভাপতি এস এম রাকিব সিরাজী, সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মুতি আসাদ, স্লোগান’৭১ এর সাবেক সভাপতি ফয়েজউল্লাহ মানিক,  ঢাবি নাট্য সংসদের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম সবুজ তালুকদার, সাইক্লিং সোসাইটির সভাপতি মাহমুদুল হাসান প্রমুখ।

শিক্ষার্থী অধিকার মঞ্চ
ডাকসু নির্বাচনের দাবিতে ২০১২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘শিক্ষার্থী অধিকার মঞ্চ’ নামের একটি প্ল্যাটফর্ম গঠিত হয়। এই মঞ্চ প্যানেল করে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে কিনা সে ব্যাপারে এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে  মঞ্চের প্রচারণা সেলের প্রধান আলীম হায়দার ভিপি পদে নির্বাচন করবেন বলে জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন সময় রাজপথে সোচ্চার ছিলাম, তারপর বিশ্ববিদ্যালয়ে একাধিক সংগঠনের পদ অলংকৃত করেছি, শতভাগ প্রতিকূল পরিবেশে স্টাবলিসমেন্টের বিরুদ্ধে হেড টু হেড নির্বাচন করার অভিজ্ঞতা আছে।’ এজন্য ডাকসুর মতো সংগঠনের নেতৃত্ব দিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হারানো গৌরব ফিরিয়ে আনতে তিনি ভূমিকা রাখতে পারবেন বলে মনে করেন৷ 

প্রসঙ্গত, শিক্ষার্থী অধিকার মঞ্চে থাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৫ জন শিক্ষার্থী ডাকসু নির্বাচন বিষয়ে উচ্চ আদালতে রিট করেন। সেই রিটের পরিপ্রেক্ষিতে এবারের ডাকসু নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার নির্দেশ দেন আদালত। তারই ধারাবাহিকতায় দীর্ঘ ২৮ বছর পর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ডাকসু নির্বাচন। 


সর্বশেষ সংবাদ