উত্তাল জবি: ছাত্রলীগ সভাপতি-সম্পাদক তালাবদ্ধ
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি তরিকুল ইসলাম তূর্য ও সাধারণ সম্পাদক শেখ জয়নুল আবেদিন রাসেলকে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদে প্রায় আড়াই ঘন্টা অবরুদ্ধ করে রাখে শাখা ছাত্রলীগের সম্পাদক মন্ডলীর নেতৃত্বে শাতাধিক নেতাকর্মী। বুধবার তারা কর্মী নিয়ে ক্যাম্পাসের ছাত্র সংসদ কক্ষে প্রবেশ করলে তাদের তালাবদ্ধ করে দেয় বিদ্রোহী নেতাকর্মীরা। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয় বসন্ত বরণ অনুষ্ঠানে ভাটা পরে এবং ক্যাম্পাস জুড়ে উত্তাল পরিবেশের সৃষ্টি হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, তরিকুল রাসেলের কমিটির কর্যক্রম স্থগিত করার পর তারা তাদের অনুসারীদের নিয়ে ক্যাম্পাসে শোডাউন করেন। স্থগিত কমিটির শোডাউনে ক্ষিপ্ত হয় শাখা ছাত্রলীগের একটি গ্রুপ। পরে দুপুর দেড়টার দিকে তরিকুল রাসেল তাদের অনুসারীদের নিয়ে ছাত্র সংসদে গেলে ছাত্র সংসদের নিচে অবস্থান নেয় বিদ্রোহী ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। পরে প্রায় দুইটার দিকে ছাত্র সংসদ ভবনের কেচি গেটে তালা ঝুলিয়ে দেয় বিদ্রোহীরা। খবর পেয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর ড. নুর মোহাম্মদ ও কোতয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মশিউর রহমান ফোর্স নিয়ে তালা ভেঙ্গে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে উদ্ধার করেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, অবস্থানরত অবস্থায় বিদ্রোহী ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ‘তরিকুল রাসেল কমটি মানি না’, ‘ইয়াবা ব্যবসায়ী কমিটি মানি না’ ‘বিবাহিত কমিটি মানি না’ ‘চাঁদাবাজের কমিটি মানি না’ বলে শ্লোগান দিতে থাকে। পরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টরের অনুরোধে বিদ্রোহীরা ক্যাম্পাস ছেড়ে দিলে ক্যাম্পাস থেকে বেরিয়ে যায় তরিকুল-রাসেল।
এ বিষয়ে স্থগিত জবি শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি আশরাফুল ইসলাম বলেন, এখানে ছাত্রলীগের যারা বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ধারণ করে রাজনীতি করে তারাই আজ ক্যাম্পাসে স্থগিত কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের উপরে ক্ষিপ্ত হয়েছে। যেখানে কমিটির সব কার্যক্রম বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে, সেখানে তারা ক্যাম্পাসে শোডাউন দিয়ে ছাত্র সংসদ কেন্দ্রে প্রবেশ করায় সাধারণ শিক্ষার্থীরা ক্ষিপ্ত হয়। তাদের তালাবদ্ধ করে রাখেন।
তিনি আরো বলেন, কেন্দ্রীয় কমিটি জবি’র এই কমিটি স্থগিত করেছে। তারা তাদের আদেশ অমান্য করে ক্যাম্পাসে এসে ফের শোডাউন দিয়ে ছাত্র সংসদে বসেছে। তারা ক্যাম্পাসে আসবে কিন্তু তারা কমিটির অন্যান্যদের সাথে নিয়ে আসবে না, এটা হয় না। এমন কমিটি পুনর্বহাল না করে ভেঙ্গে দিয়ে, নতুন কমিটির মাধ্যমে জবি ছাত্রলীগের হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে দিতে অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি।
এ বিষয়ে স্থগিত কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ শাকিল বলেন, কেন্দ্র থেকে জবি শাখার সকল সাংগঠনিক কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশ থাকলেও আজ জবি ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ক্যাম্পাসে শোডাউন দেন। আমরা যারা সাধারণ ছাত্রলীগ কর্মী আছি তারা শুধু এর প্রতিবাদ জানিয়েছি। তারা কেন্দ্রের আদেশ অমান্য করতে পারেন না।
এ বিষয়ে স্থগিত জবি ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি জামালউদ্দিন বলেন, ‘ছাত্রলীগের পদ অপব্যবহার করে তরিকুল-রাসেল নিজের স্বার্থ হাসিলের জন্য সব ধরনের অনৈতিক কাজ করছে। তার প্রতিবাদে আজকের এই গণজোয়ার।
যুগ্ম সাধাণ সম্পাদক হোসেন মোবারক রিসাত বলেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে সবচেয়ে ব্যর্থ কমিটি তরিকুল-রাসেল কমিটি। মেয়াদ পার হয়ে গেলেও তারা এখন পূর্নাঙ্গ কমিটি করতে পারে নি। এই ব্যর্থ কমিটি পুণর্বহাল হোক এটা আমরা চাই না। এদিকে, জবি ছাত্রলীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে একাধিকবার ফোনে যোগাযোগ করা হলে তারা ফোন ধরেননি।
এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক আইন বিষয়ক সম্পাদক ও তরিকুল রাসেল কমিটির বিভিন্ন অপকর্ম তদন্তের দ্বায়িত্বে থাকা আল নাহিয়ান খান জয় বলেন, তাদের সকল কার্যক্রম স্থগিত করার পর তারা ক্যাম্পাসে সোডাউন দিয়ে ছাত্র সংসদে প্রবেশ করা ঠিক করেনি। তা ছাড়া আমার তাদের ক্যাম্পাসে সাংগঠনিক ভাবে যাবারমত এমন কোন কথাও বলিনি। আমাদের তদন্তের কাজ এখনও চলছে। আমরা আজকের ঘটনাটি নিয়ে কেন্দ্রীয় সভাপতি সাধারণ সম্পাদকের সাথে কথা বলবো। বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি রেজওয়ানুল চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদ গোলাম রব্বানীর সাথে একাধিকবার ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও তাঁরা ফোন ধরেন নি।
উল্লেখ্য, গত ৩ ফেব্রুয়ারি প্রেমঘটিত বিষয়কে কেন্দ্র করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষ হয়। হেলমেট পরিহিত ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের কর্মীরা লোহার রড, লাঠি, হাতুরী, চাপাতি, বডিসহ দেশীয় অস্ত্র নিয়ে ক্যাম্পাসে মহড়া দেয়। দুই গ্রুপের সংঘর্ষে প্রায় ৩০ জন আহত হয়। এ ঘটনার পর জবি শাখা ছাত্রলীগের কমিটি স্থগিত করা হয়।