বিশ্ববিদ্যালয় আইনে ছাত্র সংসদই নেই, আদায় হচ্ছে ফি
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় (বেরোবি) আইনে ছাত্র সংসদের কোনো অস্থিত্বই নেই। প্রতিষ্ঠার পর থেকে সংসদ গঠনের কোনো উদ্যোগও নেয়া হয়নি। তবে বছরের পর বছর ছাত্র সংসদ বাবদ শিক্ষার্থীদের থেকে লাখ লাখ টাকা ফি আদায় করছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। অস্তিত্বহীন সংসদের নামে ফি আদায়কে এক ধরণের প্রতারণা বলে মনে করছে শিক্ষার্থীরা।
জানা যায়, ২০০৮ সালে প্রতিষ্ঠিত বেগম রোকেয়া বিশবিদ্যালয়ের বর্তমান শিক্ষার্থী প্রায় ১১ হাজার। প্রতি শিক্ষাবর্ষে শিক্ষার্থীপ্রতি ছাত্র সংসদ বাবদ দু’শ টাকা করে ফি আদায় করা হয়। সে হিসাবে শিক্ষার্থীদের থেকে প্রতি বছরে ২০ লাখ টাকা আদায় করছে কর্তৃপক্ষ।
এদিকে, শিক্ষার্থীদের কল্যাণেই ছাত্র সংসদের ফি বাবদ আদায়কৃত টাকা খরচ করা হচ্ছে বলে দাবি করছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তবে এ যুক্তি মানতে নারাজ শিক্ষার্থীরা। তারা বলছেন, যে বিষয়ে কোন আইন নেই, সে বিষয়ে টাকা আদায় করে শিক্ষার্থীদের প্রতারণা করা হচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী বলেন, আমরা প্রতিবছর ছাত্র সংসদের ফি বাবদ দু’শ টাকা প্রদান করে আসছি। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনে সংসদের কোনো অস্তিত্ব নেই। তাহলে কেন আমাদের থেকে এই অন্যায় ফি আদায় করা হচ্ছে তা বোধগম্য নয়।
আরেক শিক্ষার্থী জানায়, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে তুললামূলকভাবে ফি’র পরিমাণ কম থাকার কথা। কিন্তু কর্তৃপক্ষ বেনামে অতিরিক্ত ফি আদায় করলে তা পরিশোধ করা আমাদের পক্ষে কষ্টসাধ্য হয়ে যায়। এভাবে শিক্ষার্থীদের ধোকা না দিয়ে অযথা ফি আদায় বন্ধ করার দাবি জানান তিনি।
এদিকে, বিশ্ববিদ্যালয় আইনে ছাত্র সংসদের অস্তিত্ব না থাকার প্রতিবাদ জানিয়ে শিক্ষার্থীরা বলেছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে সেশনজট, আবাসন সংকট ও পরিবহন সংকটসহ নানা সমস্যায় ভুগছেন তারা। এমতাবস্থায় ছাত্রদের অধিকার নিয়ে কথা বলার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ অপরিহার্য। এই প্রেক্ষিতে অবিলম্বে ছাত্র সংসদের আইন পাস করে নির্বাচনের দাবি জানান শিক্ষার্থীরা।
বিশ্ববিদ্যালয় রেজিস্ট্রারের সাথে ছাত্র সংসদ বাবদ ফি আদায় সম্পর্কে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের কথা হয়। তিনি বলেন, আমি নতুন এসেছি, এ বিষয়ে তেমন আমার জানা নেই। মাননীয় উপাচার্য এ বিষয়ে ভালো বলতে পারবেন।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য ও জনসংযোগ দপ্তরের সহকারী প্রশাসক তাবিউর রহমান প্রধান বলেন, ছাত্র সংসদের ফি বাবদ আদায়কৃত টাকা শিক্ষার্থীদের কল্যাণেই ব্যবহার করা হয়। এ ছাড়া ইউজিসি প্রতি বছর অভ্যন্তরীণ আয়সহ হিসাব করে বিশ্ববিদ্যালয়কে বাজেট দেয়।’
শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদের নির্বাচনের দাবি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ছাত্র সংসদ নির্বাচন সময় সাপেক্ষ। বিশ্ববিদ্যালয় আইনে ছাত্র সংসদের নাম সরাসরি উল্লেখ নাই, তাই আইন তৈরি করতে সময়ের প্রয়োজন। ছাত্র সংসদের আইনের খসড়া বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট সভায় পাস করে জাতীয় সংসদে পাঠাতে হবে। এরপর অনুমোদন পেলে ছাত্র সংসদের নির্বাচন করা যাবে।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রশাসনিক এক কর্তাব্যক্তি জানান, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রো-ভিসি কিংবা একাউন্টস ভিসি (উপাচার্য) নিজেই। তাই কত টাকা এ পর্যন্ত এসেছে এবং কোথায় খরচ হচ্ছে তার সব তথ্য উপাচার্যই দিতে পারবেন।’ এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহর সাথে যোগাযোগ করতে একাধিকবার চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি।