সরকারি বাঙলা কলেজ মাঠে খেলাধুলায় নিষেধাজ্ঞা, শিক্ষার্থীদের মিশ্র প্রতিক্রিয়া
সরকারি বাঙলা কলেজ মাঠে শিক্ষার্থীদের খেলাধুলার কার্যক্রমে নিয়ন্ত্রণ আরোপের সিদ্ধান্ত ক্যাম্পাস এবং সামাজিক মাধ্যমে তীব্র আলোচনা ও বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। প্রশাসনের দাবি, এই নীতির উদ্দেশ্য অ্যাকাডেমিক কার্যক্রমে বাধা প্রতিরোধ এবং শিক্ষার পরিবেশ সংরক্ষণ। তবে শিক্ষার্থীদের একটি বড় অংশ এটিকে সহশিক্ষা কার্যক্রমে অযাচিত হস্তক্ষেপ হিসেবে দেখছেন।
প্রশাসনের জারি করা বিজ্ঞপ্তিতে বিভাগীয় প্রধান ও শিক্ষকদের উদ্দেশ্যে বলা হয়েছে, ‘কলেজের অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম গতিশীল করার লক্ষ্যে সকলকে পাঠদানে আরও সক্রিয় হতে হবে। অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম বিঘ্নিত করে (ক্লাস, অভ্যন্তরীণ পরীক্ষা ও পাবলিক পরীক্ষা চলাকালীন) কলেজ মাঠে খেলাধুলা সম্পূর্ণ নিষেধ। বিভাগ ভিত্তিক শিক্ষার্থীরা কলেজ মাঠে খেলাধুলা করতে ইচ্ছুক হলে বিভাগীয় প্রধানের মাধ্যমে কর্তৃপক্ষের অনুমতি সাপেক্ষে খেলাধুলা করার জন্য নির্দেশ প্রদান করা হলো।’
এই সিদ্ধান্তের পরপরই কলেজের ফেসবুক গ্রুপ, পেজ এবং ম্যাসেঞ্জার গ্রুপগুলোতে তা আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়। শিক্ষার্থীদের অনেকে অনুমতি প্রক্রিয়ার জটিলতা এবং সময়সূচির অভাব নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সরকারি বাঙলা কলেজ শাখার আহ্বায়ক এ এম মুত্তাকী বিশ্বাস লিখেছেন, ‘শিক্ষার মান বাড়াতে মাঠ ব্যবহারে কড়াকড়ি নয়—দরকার: শিক্ষকদের পড়ানোর মান বৃদ্ধি, নিয়মিত ক্লাসে উপস্থিতি নিশ্চিতকরণ ও কমপক্ষে ৬০% ক্লাস উপস্থিতির নিয়ম কঠোরভাবে বাস্তবায়ন, উন্নত ক্যান্টিন ও অবকাঠামো, অ্যাকাডেমিক পরিবেশে স্বচ্ছতা ও উন্নয়ন। মাঠের খেলা থামিয়ে নয়, কমপক্ষে ৬০% ক্লাস উপস্থিতির নিয়ম মেনে মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করেই শিক্ষার্থীদের মন একাডেমিকে ফেরানো সম্ভব।’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র শাওন আহমেদ সৈকত তার ফেসবুক পোস্টে প্রশাসনের সমালোচনা করে লেখেন, ‘স্যার, ক্লাসে মনোযোগ বাড়াতে খেলার মাঠে খেলা বন্ধ করার প্রয়োজন নেই, প্রয়োজন কোয়ালিটিফুল শিক্ষার! ৭৫% এটেন্ডেন্স খাতা কলমে সীমাবদ্ধ না রেখে হেড অব ডিপার্টমেন্টদের প্রয়োগ করতে বলুন। ডিসকলেজিয়েট/ননকলেজিয়েটদের জন্য আপনার টেবিলে যেই রাস্তা দিয়ে সুপারিশগুলো যায় সেই রাস্তাটা দেখেন বন্ধ করতে পারেন কিনা। দেখবেন আপনার উপস্থিতির জন্য নোটিশ দিতে হবেনা বরং ক্লাস রুম বরাদ্দ চেয়ে মন্ত্রণালয় আবেদন করতে হবে। কাজের কাজটাও একটু করুন স্যার’
সমাজবিজ্ঞান বিভাগের এক শিক্ষার্থী মন্তব্য করেন, ‘মাঠে খেলাধুলা আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য খুবই প্রয়োজনীয়। দৈনন্দিন স্ট্রেস কমাতে মাঠে সময় কাটানো জরুরি। মাঠ ব্যবহারে নিয়ম চালু করা যেতে পারে, কিন্তু সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা দেওয়া উচিত নয়।’
রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী বলেন, ‘শিক্ষার মান উন্নয়নের জন্য মাঠের ব্যবহার বন্ধ করা কোনো সমাধান নয়। বরং শিক্ষার পরিবেশ উন্নত করে এবং সময় ভাগ করে মাঠ ব্যবহারের সুযোগ রাখলেই শিক্ষার্থী ও অ্যাকাডেমিক উভয়দিকেই ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।’
শিক্ষার্থীরা প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, যেন শিক্ষা ও সহশিক্ষা কার্যক্রমের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষার জন্য আরও সহজ, শিক্ষার্থীবান্ধব নীতি প্রণয়ন করা হয়।
বিষয়টি নিয়ে কলেজ অধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. কামরুল হাসান ‘দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘সরকারি বাঙলা কলেজের শিক্ষার্থীরা আমাদের গর্ব ও ভবিষ্যতের আলোকবর্তিকা। তাদের শারীরিক, মানসিক ও বৌদ্ধিক বিকাশের সুযোগ অক্ষুণ্ন রাখা আমাদের দায়িত্ব। তবে অ্যাকাডেমিক পরিবেশের শৃঙ্খলা ও গতি রক্ষাও সমান গুরুত্বপূর্ণ। আমরা কখনোই খেলাধুলাকে নিরুৎসাহিত করছি না। বরং নিয়মতান্ত্রিক ব্যবস্থার মাধ্যমে খেলাধুলার কার্যক্রম যেন অ্যাকাডেমিক কার্যক্রমের সঙ্গে সাংঘর্ষিক না হয়, সেটি নিশ্চিত করতে চাইছি।
তিনি আরও বলেন, ‘বিভাগীয় প্রধানের সুপারিশের মাধ্যমে মাঠ ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হবে। যাতে সকলের জন্য একটি ভারসাম্যপূর্ণ, সুন্দর ও ইতিবাচক পরিবেশ বজায় থাকে। প্রশাসন সবসময় শিক্ষার্থীদের সার্বিক উন্নয়ন ও মঙ্গলকেই সর্বাগ্রাধিকার দিচ্ছে এবং ভবিষ্যতেও শিক্ষার্থীবান্ধব নীতি প্রণয়ন অব্যাহত থাকবে।’