কী এমন ছিলো রাবির আগের লোগোতে!
স্বাধীনতা যুদ্ধের আগে বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠিত উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের একটি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। দেশ স্বাধীনের পর পরিবর্তন করা হয় এই প্রতিষ্ঠানটির মূল লোগো (প্রতীক)। বর্তমানে পরিবর্তিত রূপ ব্যবহার হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়টির দাপ্তরিক কার্যক্রমে। কি এমন ছিলো রাবির আগের লোগোতে? আর কেনই বা পরিবর্তন করা হয় প্রতিষ্ঠাকালীন লোগো? এই প্রশ্নের জবাবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন ভূ-রাজনৈতিক কারণে পরিবর্তন করা হয়ে থাকতে পারে।
সূত্রে জানা যায়, এ পর্যন্ত দুইটি লোগো পাওয়া যায়। একটি স্বাধীনতার আগে ব্যবহার হয়েছে। সেটি ছিলো বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাকালীন লোগো। বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি বাসে ১৯৭৪ সালে তোলা একটি ছবিতেও লোগোটি পাওয়া যায়। অন্যটি দেশ স্বাধীনের পর, যা বর্তমান। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাকালীন লোগো সূত্রে জানা যায়, তাতে ছিলো পাঁচটি তারকা। হরিণের মাথার আকৃতি এবং সবুজ ও নেভি-ব্লু রং। যার উপরে ছিলো পবিত্র আল কুরআনের সূরা ইউসুফের আয়াত “ওয়া ফাওকা কুল্লি জি ইলমিন আলিম’’ এবং নিচে ব্যানারে ছিলো বাংলাতে লেখা ‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়’।
লোগোটির উপাদান ব্যাখ্যা দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. ইয়াকুব আলী বলেন, পাঁচটি তারকা দিয়ে ইসলামের মূল ৫টি স্তম্ভ কালাম, নামাজ, রোজা, হজ্জ, যাকাতকে বোঝানো হয়েছে। সবুজ রংয়ের কারণ হলো ইসলাম ধর্মের শেষ নবী হযরত মুহাম্মদ (স:) এর পবিত্র রং ছিলো সবুজ। এছাড়া কুরআনের আয়াত দিয়ে জ্ঞান অর্জনের মহত্ব বুঝাতে বলা হয়েছে কেউ যেনো জ্ঞান নিয়ে অহংকার না করেন। ‘যার অর্থ প্রত্যেক জ্ঞানীর জন্য রয়েছে মহাজ্ঞানী’।
এই প্রতীক পরিবর্তনের কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের এই প্রবীণ অধ্যাপক বলেন, ইসলাম ধর্মের মূল্যবোধের উপর প্রতিষ্ঠা লাভ করে তৎকালীন পাকিস্তান। সেই মূল্যবোধেই ১৯৫৩ সালে পূর্ব পাকিস্তানে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। যখন দেশ স্বাধীন হয় তখন নতুন মূল্যবোধ নিয়ে বাংলাদেশ যাত্রা শুরু করে। তাই পাকিস্তানের কোন চিহ্ন না রাখতেই হয়তো তৎকালীন প্রশাসন লোগো পরিবর্তনের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। প্রতীক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে পাকিস্তানের মূলবোধ মুছে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। এর বেশি জানাতে পারেন নি তিনি।
এদিকে লোগো পরিবর্তনের সঠিক তারিখ জানা যায়নি কারও থেকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. অরুন কুমার বসাক জানান, ‘প্রতীক যখন পরিবর্তন করা হয় সেই সময়টা অর্থাৎ (১৯৭২ থেকে ১৯৭৬) এর মধ্যে। নিদিষ্ট কোন তারিখ বলতে পারব না। আমি দেশ থেকে যাওয়ার সময় আগের প্রতীক দেখেছি। দেশের ফেরার পর নতুন প্রতীক দেখেছি।’
সম্প্রতি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদের একটি ফেসবুক গ্রুপে শেয়ার করেন পুরাতন লোগোটি শেয়ার করা হয়। পোস্ট দেওয়া শিক্ষার্থী লিখেন ল্যাব পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করার কাজ করতে গিয়ে লোগোটি পেয়েছেন তারা।
একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে অভ্যুদয়ের পরপরই বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন প্রতীকের জন্য পুরস্কার ঘোষনা করা হয়। শিল্পী গোলাম সারোয়ারের আঁকা মূল নকশা নির্বাচনের পর কিছুটা পরিবর্তন করে বর্তমান প্রতীকে রূপ দেন শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন ও শিল্পী হাশেম খান।
বতর্মান প্রতীকের ব্যাখ্যা: পরিবর্তিত প্রতীকে রয়েছে একটি বৃত্ত। তা বিশ্বের প্রতীক। একটি উন্মুক্ত গ্রন্থ যা জ্ঞানের প্রতীক এবং আকাশ দৃষ্টি থেকে শাপলা ফুল সৌন্দর্য্য, পবিত্রতা ও জাতীয় প্রতীক। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রকাশিত মুক্তিযুদ্ধের স্মারককে উল্লেখ্য করা হয়েছে, একটি সূর্য অর্থাৎ প্রাণ ও শক্তির উৎস। প্রতীকের রং বৃত্ত ও মূল গ্রন্থ কোবাল্ট ব্লু তা আকাশ নদী ও উদারতার রং।
এছাড়া গ্রন্থের বহিঃরেখা রক্তলাল, জাতীয় পতাকার রং। গ্রন্থের মধ্যরেখা সোনার মতই মূল্যবান শিক্ষার গুণগত মান নির্দেশ করে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কর্তৃক প্রকাশিত মুক্তিযুদ্ধের স্মারক থেকে এই তথ্য পাওয়া যায়। এ নিয়ে মোট দুইটি লোগো পাওয়া যায়। আর ইতিহাস রক্ষার্থে পুরাতন লোগো সংরক্ষণের দাবি শিক্ষক শিক্ষার্থীদের।
বিশ্ববিদ্যালয় চিত্রকলা, প্রাচ্যকলা ও ছাপচিত্র বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. বনি আদম বলেন, আমরা নতুন লোগোতে অভ্যস্ত হয়েছি। কারণ এটি দেখেই বড় হয়েছি। আমি বিশ্ববিদ্যালয় উপ-উপাচার্যের কাছে পুরাতন লোগোটি দিয়েছি। তারা সংরক্ষণের ব্যবস্থা করতে পারেন।