ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের ডাক

গাজায় চলমান ইসরাইলি গণহত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে ও ফিলিস্তিনিদের পক্ষে বিশ্বব্যাপী গড়ে ওঠা আন্দোলনের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে সোমবার (৭ এপ্রিল) ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। এসময় তারা ‘নো ওয়ার্ক, নো স্কুল’ কর্মসূচির ঘোষণা দেয়।
ঢাকা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ডুয়েট) শিক্ষার্থীরা ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে এক বিবৃতিতে জাতিসংঘ-ওআইসি সহ সব বিশ্ব নেতাদের এই বর্বরোচিত হত্যাযজ্ঞের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়ার আহ্বান জানান।
রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রুয়েট) শিক্ষার্থীরা ফিলিস্তিনে চলমান গণহত্যা একটি মানবিক সংকট ও বিশ্বব্যাপী সকলের বিবেকের এক সমষ্টিগত ব্যর্থতা উল্লেখ্য করে বিবৃতিতে বলেন, বছরের পর বছর সবার চোখের সামনেই এই গণহত্যা ঘটে চলেছে। এটা কেবল রাজনৈতিক ইস্যু নয়, এটি একটি মানবিক সংকট। বিশ্বব্যাপী সকলের বিবেকের এক সমষ্টিগত ব্যর্থতা।
এক জরুরি বিজ্ঞপ্তিতে ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) শিক্ষার্থীরা বলেন, আমরা গণহত্যার মুখে চুপ থাকতে পারি না এবং থাকবও না। গাজার নির্যাতিত জনগণের সাথে অটল সংহতি প্রকাশ করে, আমরা ৭ এপ্রিল, সোমবার বিশ্বব্যাপী ধর্মঘটের ডাকে সাড়া দিচ্ছি। এই দিনে, আমরা সকল শিক্ষা ও প্রশাসনিক কার্যক্রম স্থগিত রাখব - কোন ক্লাস নেই, কোন ল্যাব নেই, কোন অফিসের কাজ নেই। আমাদের প্রতিবাদ হল সেই গণহত্যার বিরুদ্ধে আমাদের কণ্ঠস্বর যা তথাকথিত সভ্য বিশ্ব উপেক্ষা করে চলেছে।
এছাড়াও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় স্টেট ইউনিভার্সিটির আইন বিভাগের শিক্ষার্থীরা এক বিবৃতিতে বলেন, গাজার নিরীহ বেসামরিক নাগরিকদের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করছি। বিশ্বব্যাপী ধর্মঘটের ডাকে সাড়া দিয়ে, আমরা এই আন্দোলনে যোগদানের জন্য আমাদের পূর্ণ প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করছি, কোনও ক্লাস, কোনও সহ-পাঠ্যক্রমিক কার্যকলাপ এবং অফিসের কোনও দায়িত্ব পালন করব না। দখলদার ইসরায়েলি বাহিনী এবং তার মিত্রদের দ্বারা শিশু এবং নবজাতক সহ নিরীহ বেসামরিক নাগরিকদের একটি সম্পূর্ণ জনগোষ্ঠীকে প্রকাশ্য দিবালোকে ক্রমাগত বোমাবর্ষণ, অনাহার এবং হত্যা করা হচ্ছে, আমরা চুপ থাকতে রাজি নই।
সংহতি প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ। এতে তারা আমেরিকা এবং অন্যান্য বিশ্বশক্তির সমর্থিত ইসরায়েলি দখলদার বাহিনীর দ্বারা গণহত্যার শিকার গাজার জনগণের প্রতি দৃঢ় সমর্থন জানান।
তারা আরও বলেন, মানবজাতির জন্য লজ্জাজনক বিষয় হল আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলির উদাসীনতা এবং ইসরায়েল ও আমেরিকার বিরুদ্ধে শক্তিশালী মুসলিম রাষ্ট্র এবং অন্যান্য বিশ্ব শক্তির নীরবতা। বিশ্বব্যাপী আহ্বানের প্রতিক্রিয়ায়, আমরা বিশ্বব্যাপী ধর্মঘট - গাজার জন্য বিশ্ব থেমেছে - এ যোগদান করি। যখন একটি সম্পূর্ণ জনসংখ্যা অনাহারে, বোমা হামলায় এবং নিশ্চিহ্ন হয়ে যাচ্ছে তখন আমরা চুপ থাকতে রাজি নই। এই কারণেই আমরা ন্যায়বিচার এবং মানবতার জন্য আমাদের সংহতি প্রদর্শন করতে বেছে নিই। ছাত্র হিসেবে, মানুষ হিসেবে এবং বিশ্ব সম্প্রদায়ের অংশ হিসেবে, আমরা যেখানেই নিপীড়ন ঘটুক না কেন তার বিরুদ্ধে দাঁড়াতে বিশ্বাস করি। আমরা আমাদের সহপাঠীদের - বিভাগ জুড়ে, বিশ্ববিদ্যালয় জুড়ে, সীমান্ত পেরিয়ে তাদের আওয়াজ তুলতে, সচেতনতা ছড়িয়ে দিতে এবং মানবতার পক্ষে দাঁড়াতে আহ্বান জানাই।
ঢাকা মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরাও একই দাবিতে ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন। তারা এক বিবৃতিতে বলেন, গাজার ওপর ইসরায়েলের পৈশাচিক হামলা, শিশুসহ সাধারণ মানুষকে নির্বিচারে হত্যাকাণ্ড, চিকিৎসা না পাওয়া এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের হত্যা মানবাধিকার লঙ্ঘনের চরম উদাহরণ। অথচ মুসলিম বিশ্ব নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছে।