০৬ মার্চ ২০২৫, ১২:০৪

শিক্ষকদের বিরুদ্ধে আপত্তিকর মন্তব্য, তোপের মুখে বেরোবির সেই কর্মকর্তা

অশালীন অঙ্গভঙ্গি করেন রোকনুজ্জামান  © সংগৃহীত

নিজেই অফিস ফাঁকি দিয়ে শিক্ষকদের বিরুদ্ধে আপত্তিকর মন্তব্য করায় তোপের মুখে পড়েছেন রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) সেই কর্মকর্তা রোকনুজ্জামান। এমনকি তাকে জবাবদিহির আওতায় এনে শাস্তির দাবি জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. ওয়াজেদ ইনস্টিটিউটের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে অনিয়মিত অফিস করার অভিযোগ পাওয়া গেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিক সমিতির সদস্যরা তা সরেজমিনে দেখতে গেলে কর্মকর্তা রোকনুজ্জামান সাংবাদিকদের ওপর চড়াও হন।

গত রোববার অফিস শুরুর পর বেলা সাড়ে ৯টায় এবং বিকেল ৩টায় একজন কর্মকর্তা ছাড়া বাকি কাউকে অফিসে পাওয়া যায়নি। পরের দিন সোমবার বেলা সাড়ে ১১টায় দুই-তিনজনকে উপস্থিত পাওয়া গেলে তারা সাংবাদিকদের দেখে চড়াও হয়ে সবাই একত্র হয়ে তেড়ে আসেন।

এ সময় কর্মকর্তাদের মধ্যে রোকনুজ্জামান রোকন সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে মোড় ঘুরিয়ে বলেন, ‘শিক্ষকরা ভর্তি পরীক্ষায় ৮০ হাজার টাকা করে নেয়, কর্মকর্তাদের ২, ৩ বা ৫ হাজার টাকা করে দেয়, রিপোর্ট করো। ডিপার্টমেন্টে যাও, কোন শিক্ষক কয়টার দিকে আসে, ১০টার সময় আসে, এইগুলা রিপোর্ট করো। ছয় মাসের ক্লাস দুই দিনে শেষ করে দিবে, এটা হবে না, কোন শিক্ষক পরীক্ষা না নিয়ে নম্বর দিছে, এইগুলা রিপোর্ট হবে। ঐগুলা রিপোর্ট তো তোমরা করতে পারবা না, নম্বরের ভয় আছে, ফেল করায় দিবে।’

এ সময় সাংবাদিক সমিতির এক সদস্য তার এই আক্রমণাত্মক বক্তব্যের ভিডিও ধারণ করে সাংবাদিক সমিতির পেজে প্রকাশ করলে শিক্ষক শিক্ষার্থীদের মাঝে মালোচনার ঝড় ওঠে।

ভূগোল ও পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক জাকিউর রহমান তার ফেসবুক ওয়ালে ভিডিওটি শেয়ার দিয়ে লেখেন, ‘২০২৩-২৪ GST পারিতোষিক সংক্রান্ত থলের বিড়াল অবশেষে বাইরে আসলো! মাসে মাসে শিক্ষক সমিতির চাঁদা কি এসব তামাশা দেখার জন্য দিচ্ছি! ডিয়ার ফ্যালাস, দেখেন আপনারা যেটা ভালো মনে করেন।’

পরিসংখ্যান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক বিপুল হোসেন তার ফেসবুক ওয়ালে ভিডিওটি শেয়ার দিয়ে লেখেন, ‘একজন কর্মকর্তার এ রকম ধৃষ্টতাপূর্ণ বক্তব্য কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়! সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।’

ইমরানুল হাসান ইমন নামের এক শিক্ষার্থী মন্তব্যের ঘরে লেখেন, ‘ভিডিওর লোকটাকে বিচারের আওতায় আনা হোক।’

শিক্ষার্থী রিপন আহামেদ লেখেন, ‘কথাবার্তার টোন দেখে তো মনে চোর-বাটপার এরা। জিজ্ঞেস করলে দুর্নীতিবাজদের গায়ে লাগে।’

এখন টিভির সাংবাদিক কে এম হিমেল আহামেদ লেখেন, ‘এই বাটপারকে ইদানীং রিসার্চার বা গবেষক হিসেবে ‘সট’ দিতে দেখা যাচ্ছে বিভিন্ন গণমাধ্যমে।’

এ বিষয়ে ভূগোল পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক জাকিউর রহমান জানান, একজন কর্মকর্তা হয়ে শিক্ষকদের নামে এ রকম অপবাদ কোনোভাবেই মেনে নেওয়ার নয়। সব শিক্ষক তো এক না। বিষয়টা নিয়ে সব শিক্ষকই কনসার্ন। আমরা প্রশাসনকে বিষয়টা অবগত করেছি। কী কারণে তিনি শিক্ষকদের নিয়ে এমন আপত্তিকর মন্তব্য করলেন, প্রশাসন এটার সঠিক জবাব না দিতে পারলে আমরা কঠোর হতে বাধ্য হব।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পরিসংখ্যান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক বিপুল হোসেন বলেন, ‘আমরা ক্যাম্পাসে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে চাই। এমন মুহূর্তে তার (রোকনুজ্জামানের) ক্যাম্পাসকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা কোনোভাবেই কাম্য নয়। তাকে জবাবদিহির আওতায় নিয়ে আসার জন্য প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।’

এ বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড.শওকাত আলী বলেন, ‘শিক্ষকদের নিয়ে এমন আপত্তিকর মন্তব্য করার পরও তিনি আমার কাছে অনুতপ্ত হননি।কোন সাহসে তিনি এসব কথা বলেছেন, এর সঠিক জবাব তাকে দিতে হবে। আর সাংবাদিকদের সঙ্গে অশোভনীয় আচরণের জন্য অবশ্যই তাকে ক্ষমা চাইতে হবে। এ বিশ্ববিদ্যালয়ে গায়ের জোরে কোনো কিছু হবে না।’

উল্লেখ্য, ড. ওয়াজেদ রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের রিসার্চ অফিসার ড. রোকনুজ্জামান রোকন গবেষণার চেয়ে রাজনীতিতে বেশি সক্রিয় । এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে হয়েছেন জিয়া পরিষদ রংপুরের সাংগঠনিক সম্পাদক।