১১ জানুয়ারি ২০১৯, ১১:৫৪

মেধাতালিকার শীর্ষ ১২ জনই জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছে

আটক শিক্ষার্থীদের একাংশ  © টিডিসি ফটো

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে (বেরোবি) ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পরে সাক্ষাৎকার ও ভর্তি হতে আসা মেধাতালিকায় শীর্ষস্থান অর্জনকারী ১২ শিক্ষার্থীকে আটক করা হয়েছে। জালিয়াতির অভিযোগে তাদেরকে আটক করে পুলিশে দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

সাক্ষাৎকার বোর্ডে থাকা শিক্ষকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, আটককৃত শিক্ষার্থীরা কেউ ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেননি। তাদের ভর্তি পরীক্ষা অন্য কেউ এসে দিয়ে গেছে। প্রত্যেকের পরীক্ষার জন্য জালিয়াত চক্র প্রায় তিন লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে এমন তথ্য জানিয়েছে আটককৃত শিক্ষার্থীরা। তবে কারা এই জালিয়াত চক্রের সাথে জড়িত বা কে এসে তাদের পরীক্ষা দিয়ে গেছে এ ব্যাপারে তারা মুখ খুলেনি বলে জানিয়েছে সাক্ষাৎকার বোর্ডে থাকা শিক্ষকেরা এবং প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যগণ। গত বুধবার ও বৃহস্পতিবার সাক্ষাতকার ও ভর্তি চলাকালীন তাদের একের পর এক আটক হয়। 

প্রথম দিনআটককৃত শিক্ষার্থীরা হলেন, গাজীপুর কাপাশিয়ার হাবিবুর রহমানের ছেলে এস এম নাইম (ইউনিট- বি, শিফট, রোল- ২১৯৮৪৬, মেধাক্রম ৩), নীলফামারী কিশোরগঞ্জের মারুফ হাসান (ইউনিট- বি, শিফট-২য়, রোল- ২৭১১৮৯, মেধাক্রম ১), ঠাকুরগাঁও'র গোয়ালপাড়ার খাইরুল আহমেদের ছেলে শাফিন আহমেদ (ইউনিট-এফ, শিফট-৪, রোল- ৬৭০৩৮৪, মেধাক্রম ২), টাঙ্গাইল গোডাউন বাজারের শাহরিয়ার ইসলাম (ইউনিট- বি, শিফট-২য়, রোল- ২২০২০০, মেধাক্রম ৯), গাজীপুর শ্রীপুরের রাকিবুল ইসলাম শান (ইউনিট- বি, শিফট-২য়, রোল-২১১৯৮৬, মেধাক্রম ২), টাঙ্গাইল সদরের শোয়েব হাসান (ইউনিট- বি, শিফট-৪র্থ, রোল- ২৪৬৮৫৬, মেধাক্রম ৬), শেরপুরের মধ্যশ্রেরীর রাহাত মজুমদার (ইউনিট- বি, শিফট-৪র্থ, রোল- ২৪৭৬৬০, মেধাক্রম ৩৮) এবং নেত্রকোণা সদরের নুরুজ্জামানের ছেলে জুবায়ের মাহাতাব রাকিন ( ইউনিট-ই, শিফট-৪, রোল-৫১৫১৯৭- মেধাক্রম-২)।

বৃহস্পতিবার ভর্তি হতে এসে আটককৃতরা হলেন, ময়মনসিংহের মুক্তাগাছার আবুল কাসেমের ছেলে মোস্তাফিজুর রহমান(ইউনিট- ডি, শিফট-২, রোল- ৪১৬৫২৪, মেধাক্রম-৪), টাঙ্গাঈলের বিশ্বাস বেতকা এলাকার আব্দুস সোবহানের ছেলে রেজাউল করিম (ইউনিট- ই, শিফট-৪, রোল- ৫১৫১৭২, মেধাক্রম-৬), সিরাজগঞ্জ ভেওড়ামারার সাইফুল ইসলামের ছেলে মাহিদুল ইসলাম মৃদুল (ইউনিট- ই, শিফট-৪, রোল- ৫১৫১৭১, মেধাক্রম-১) এবং চাপাই নববাগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার আলতাফ হোসেনের ছেলে মাসুম হাসান (ইউনিট- বি, শিফট-২, রোল- ২২০০১৭, মেধাক্রম-১)

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তরের সহকারী প্রশাসক তাবিউর রহমান প্রধান প্রশাসনের বরাত দিয়ে বলেন, আমরা খুব সতর্কতার সাথে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার চেষ্টা করেছি। তারপরেও অনাকাঙ্খিতভাবে যারা পরীক্ষা দিয়ে গেছেন তাদেরকে সাক্ষাৎকারে এবং ভর্তি হতে এসে আটক করা হচ্ছে। তারা পরীক্ষার সময় খুব সূক্ষ্মভাবে কাজ করায় তাদেরকে ধরা সম্ভব হয়নি। তবে সাক্ষাৎকারে এসে প্রত্যেকের সাথে আলাদাভাব কথা বলে এবং তাদের বিস্তারিত দেখে সন্দেহজনক মনে হলে সাক্ষাৎকার বোর্ডে থাকা শিক্ষকেরা তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তারা জালিয়াতির কথা স্বীকার করে। আটকের পর তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। পরবর্তী ভর্তি পরীক্ষায় যেন কোন ধরণের জালিয়াত করতে না পারে সে ব্যাপারে অধিকতর কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

বিশ্ববিদ্যালয় পুলিশ ক্যাম্পের ইনর্চাজ মুহিব্বুল ইসলাম বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর ড. আবু কালাম মো. ফরিদুল ইসলাম বাদী হয়ে থানায় এজাহার দিয়েছেন। আটককৃতদেরকে থানায় পাঠানো হয়েছে। মামলা অনুযায়ী এখন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর আবু কালাম মো. ফরিদুল ইসলাম বলেন, এবারের ভর্তি পরীক্ষায় খুব গুরুত্বের সাথে জালিয়াত ধরার চেষ্টা করা হচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় গত দুই দিনে মোট ১২ জনকে আটক করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, আশা করি আটককৃতদের মাধ্যমে খুব দ্রুতই মূল জালিয়াত চক্রকে ধরা সম্ভব হবে।