ফেব্রুয়ারি মাস ছাড়া পরিষ্কার হয় না জবির শহীদ মিনার

ভাষার মাসকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন আয়োজন হয়, পরিষ্কার করা হয় শহীদ মিনারগুলো। অথচ বছরের অন্যান্য সময় অবহেলায়, অপরিচ্ছন্নতায় নষ্ট হয় শহীদ মিনারের পরিবেশ ও গাম্ভীর্য। একই চিত্র দেখা যায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শহীদ মিনারে। শুধু ফেব্রুয়ারি মাস এলেই পরিষ্কার করা হয় শহীদ মিনার।
বুধবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা শহীদ মিনারটি ধুয়ে-মুছে পরিষ্কার করছেন। শ্যাওলার আস্তরণ পরিষ্কার করে করা হচ্ছে রঙ। মিনারের আশপাশও পরিচ্ছন্ন করে একুশে ফেব্রুয়ারিতে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে।
আরো পড়ুন: এবার চুয়েটে সব ধরনের রাজনীতি নিষিদ্ধ
শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা মনে করেন, কেবল ভাষার মাসেই নয়, সারা বছরই শহীদ মিনার পরিপাটি রাখা উচিত। শহীদদের স্মৃতি বিজড়িত মিনার শোচনীয় অবস্থায় থাকা দুঃখজনক।
ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান বলেন, শহীদ মিনার শুধু একটি স্থাপনা নয়, এটি ভাষা আন্দোলনের আত্মত্যাগের প্রতীক। প্রতি বছর ফেব্রুয়ারিতে পরিষ্কার করা হলেও সারা বছর এটি অবহেলিত থাকে, যা জাতীয় স্মৃতির প্রতি দায়িত্বহীনতার পরিচয়। শহীদ মিনার পরিচ্ছন্ন রাখা এবং সেখানে জুতা পরিধান না করা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের সারা বছর শহীদ মিনারের মর্যাদা ও পবিত্রতা রক্ষায় সচেতন হতে হবে।
এ বিষয়ে ইতিহাস বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মুর্শিদা বিনতে রহমান বলেন, ‘সব শহীদ মিনারই সম্মান জানানোর জন্য তৈরি করা হয়েছে। আমরা বাঙালি, আমরা বাংলা ভাষা নিয়ে গর্ব করি। বাংলা ভাষার প্রতি শ্রদ্ধার পাশাপাশি শহীদ মিনারকেও আমাদের সম্মান করতে হবে। শিক্ষার্থীদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করা গেলে জবির শহীদ মিনারের অবমাননা বন্ধ করা সম্ভব হবে।’
বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রক্টর অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ তাজাম্মুল হক বলেন, ‘ক্যাম্পাস পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার দায়িত্ব বিশ্ববিদ্যালয় রেজিস্টারের। তার অধীনে পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা এই কাজগুলো করে থাকে। তাছাড়া আমরা একটি বজ্র নিষ্কাশন কমিটি করেছি। আমি এ কমিটির আহ্বায়ক। এই কমিটির উদ্যোগে কিছু কাজ হয়েছে এবং আরও কিছু কাজের পরিকল্পনা রয়েছে।’
উল্লেখ্য, দেশের অন্যান্য শহীদ মিনারের সঙ্গে জবির শহীদ মিনারের মিল না থাকায় অনেকেই এটিকে স্থাপত্যশিল্পের অংশ মনে করেন। ফলে শিক্ষার্থী ছাড়াও বহিরাগতরা সেখানে জুতা পায়ে উঠেন। আড্ডার পাশাপাশি শহীদ বেদীতে ফেলে যান খাবারের উচ্ছিষ্ট। সারা বছর এভাবে পড়ে থাকলেও শহীদ মিনারের গুরুত্ব বাড়ে শুধু ফেব্রুয়ারি মাসে, সেটিও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসকে কেন্দ্র করে।