২৩ ডিসেম্বর ২০১৮, ১৪:৫০

ফিল্ড-ওয়ার্কের নামে লাখ টাকা চাঁদা আদায়!

শহীদ স্মৃতিসৌধ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) ফিল্ড ওয়ার্কের নামে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টাকা আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ফোকলোর স্টাডিস বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. সাইদুর রহমান স্বাক্ষরিত এক নোটিশের প্রেক্ষিতে শিক্ষার্থীরা এ টাকা দিচ্ছেন বলে জানা গেছে। এছাড়া বিভাগের নিজস্ব ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থাকা সত্ত্বেও অন্য অ্যাকাউন্টে এই টাকা জমা নিয়ে বিভাগের দুই শিক্ষক ভাগাভাগি করে নিচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন শিক্ষার্থীরা।

বিভাগীয় সূত্রে জানা যায়, ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফোকলোর স্টাডিজ বিভাগের যাত্রা শুরু হয়। বর্তমানে বিভাগটিতে তিনটি ব্যাচ রয়েছে। প্রতি শিক্ষাবর্ষে ফিল্ড ওয়ার্ক কোর্সের অধীনে শিক্ষার্থীদের দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর এসব স্থানের রিপোর্ট (ক্ষেত্র সমীক্ষা প্রতিবেদন) কোর্সের শিক্ষক অধ্যাপক ড. রবিউল হোসেনের কাছে জমা দিতে হয়। যা ওই বিষয়ের চূড়ান্ত পরীক্ষা হিসেবে বিবেচিত হয়।

বিভাগ খোলার পর হতে গত দুই বছরে ফিল্ড ওয়ার্ক রিপোর্ট যাচাই বাচাইয়ের জন্য কোন ফি ধার্য ছিল না। কিন্তু গত ৪ ডিসেম্বর ফিল্ড ওয়ার্কের জন্য ফিস জমা দিতে শিক্ষার্থীদের নোটিশ দিয়েছেন বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. সাইদুর রহমান ।

বিজ্ঞপ্তি

 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেশের অন্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে ফিল্ড ওয়ার্কের রিপোর্ট দেখতে কোনো টাকা নেওয়া হয় না। সকল কোর্সের জন্যই শিক্ষকদের আলাদা পারিশ্রমিক দেয়া হয়। কিন্তু ফোকলোর বিভাগে হঠাৎ করে কেন এই ফি ধার্য করা হলো তা নিয়ে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিভাগের তৃতীয় বর্ষের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া আর কোথাও এমন ফি ধার্য নাই। স্যাররা ফিল্ড-ওয়ার্ক ব্যবস্থাপনার জন্য শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টাকা নিতে পারেন না। এর জন্য তো বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে আলাদা বরাদ্দ দেওয়া হয়ে থাকে।’

নোটিশ অনুযায়ী বিভাগের প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীরা ১৬শ টাকা করে জমা দিয়েছে। ওই খাতে এ পর্যন্ত জমা হয়েছে প্রায় ২ লাখ ৫৪ হাজার টাকা। এছাড়া তৃতীয় বর্ষের ৬৩ শিক্ষার্থীকে ২ হাজার করে টাকা জমা দিতে বলা হয়েছে। যার মোট পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ১ লাখ ২৬ হাজার টাকা।

এদিকে নোটিশ মোতাবেক বিভাগের শিক্ষার্থীদের দেয়া এসব টাকা বিভাগের অ্যাকাউন্টে জমা হয়নি বলে জানা গেছে। বিভাগের নিজস্ব অ্যাকাউন্ট (নং-১১৫৭৫) থাকা সত্ত্বেও অন্য অ্যাকাউন্টে বিভাগীয় সভাপতি অধ্যাপক ড. সাইদুর রহমান টাকা জমার দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।

এ বিষয়ে অগ্রণী ব্যাংক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শাখায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নির্দেশিত ওই অ্যাকাউন্টটি খোলা হয়েছে ফিল্ড ওয়ার্ক ফোকলোর (নং-১৩৫২৪) নামে। এই অ্যাকাউন্টের তদারকি করেন বিভাগীয় সভাপতি নিজেই।

বিভাগের কয়েকজন শিক্ষার্থী অভিযোগ করে বলেন, ‘বিভাগের দুই শিক্ষক মিলে অবৈধভাবে তাদের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। ফিল্ড ওয়ার্ক কোর্সের ফি বাবদ টাকা নিলেও মূলত তারা নিজেরাই তা ভাগ-বাটোয়ারা করে নিচ্ছেন।’

এ বিষয়ে বিভাগের অধ্যাপক ও ফিল্ড ওয়ার্ক কোর্সের শিক্ষক ড. রবিউল হোসেন বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যেই মূলত এ ফি ধার্য করা হয়েছে। ফিল্ড-ওয়ার্ক মেইন্টেনেন্স ও অনেক সময় ফিল্ড-ওয়ার্কে যাওয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনেকে আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল থাকে। তাদের জন্য ব্যয় করতে এ ফি ধার্য করা হয়েছে। একই কারণে আলাদা একাউন্ট খোলা হয়েছে।’ ফোকলোর বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. সাইদুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করা হলে, তিনি এ বিষয়ে কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন এবং পরে দেখা করার কথা বলেন।

উপাচার্য অধ্যাপক ড. হারুন উর রশিদ আসকারী বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে যেহেতু শিক্ষার্থীদের আপত্তি আছে, আমি খোঁজ নেব। অতি দ্রুত বিষয়টি সমাধান করা হবে।’