ইবিতে ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করে দুই বিভাগের শিক্ষার্থীদের মারামারি, আহত ৪
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তঃবিভাগ ও আন্তঃহল ফুটবল প্রতিযোগিতা-২০২৪ এর প্রথম কোয়ার্টার ফাইনালের খেলা শেষে অংশগ্রহণকারী দুই বিভাগের শিক্ষার্থীদের মধ্যে মারামারির ঘটনা ঘটেছে।
আজ রবিবার (৮ ডিসেম্বর) দুপুর ১ টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইইই বিভাগ বনাম ফলিত রসায়ন ও কেমিকৌশল বিভাগের ম্যাচ শেষে ফলিত বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি অনুষদের সামনে এই মারামারির ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, দুপুর সাড়ে ১২ টায় দুই বিভাগের টাইব্রেকারের সময় ফলিত রসায়ন ও কেমিকৌশল বিভাগের এক শিক্ষার্থী গায়ের জামা খুলে নাচানাচি করছিল তখন ইইই বিভাগের সিনিয়র শিক্ষার্থীরা বিষয়টা দৃষ্টিকটু মনে করে সামনে তেড়ে আসে। এ সময় উভয় দলের শিক্ষার্থীদের মধ্যে কথাবার্তা একপর্যায়ে হাতাহাতিতে রূপ নেয় ও ফলিত রসায়ন বিভাগের সভাপতির গায়ে ধাক্কা লাগে। এই ইস্যুকে কেন্দ্র করে পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ঝাল চত্বরে ফলিত রসায়ন ও কেমিকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থী ইমন (১৮-১৯) ও ইইই বিভাগের শিক্ষার্থী শাওন সরকার (২২-২৩) এর মধ্যে বিষয়টি মীমাংসা ও ক্ষমা চাওয়ার ব্যাপারে কথা বলতে গেলে পুনরায় তর্কাতর্কি বাঁধে। এসময় উভয়পক্ষের শিক্ষার্থীরা লাঠিসোঁটা নিয়ে মারামারিতে জড়িয়ে পড়ে। মারামারিতে ফলিত রসায়ন বিভাগের ১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের ইমন, ১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের আশিকুর এবং ২১-২২ শিক্ষাবর্ষের মাহফুজ ও রাকিবুল আহত হয়। পরে প্রক্টরিয়াল বডির উপস্থিতিতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।
ফলিত রসায়ন ও কেমিকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, খেলার মাঠে ধাক্কাধাক্কির মতো ঘটনা ঘটলেও যার যার মতো করে সবাই চলে গেছিলাম। কিন্তু স্যারকে ধাক্কা দেয়ার বিষয়ে মীমাংসা করতে যেয়ে আমরা তাদের বলছিলাম যে ক্ষমা চাইতে তখন তারা উদ্যত আচরণ করে। কয়েকজনকে লাঠিসোঁটা নিয়ে আঘাত করে জখম করে দেয়। প্রক্টর স্যার তাদের ডিপার্টমেন্টের বলে ক্ষমতা দেখায়। আমাদের ডিপার্টমেন্টের ল্যাবে ঢুকে পর্যন্ত মারার হুমকি দিয়ে গেছে। একটা অনুষদ থেকে অন্য অন্য অনুষদে মারতে আসার মতো কারো ইন্ধন আছে কিনা খতিয়ে দেখতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টরিয়াল বডি দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না দিলে আমরা পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হবো।
এদিকে ইইই বিভাগের শিক্ষার্থীরা জানান, টাইব্রেকারে তারা গোল দেয়ায় ফলিত রসায়ন ও কেমিকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থী সাইমুন ইসলাম মুন (২০২৩-২৪ সেশন) জামা খুলে ওদের সাইড থেকে আমাদের সাইডে এসে অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি দেখালে সিনিয়ররা কিছুটা উদ্যত হই। কারণ সে একসময় আমাদের বিভাগের জুনিয়র ছিল, কিছুদিন আগে মাইগ্রেশন হয়ে কেমিক্যালে গেছে। তাই আমাদের সিনিয়রদের সামনে এভাবে নাচানাচি করাটা কেউ মেনে নিতে পারেনি। এখান থেকে উভয়ের মধ্যে ধাক্কাধাক্কি হলেও কেউ ইচ্ছে করে স্যারকে ধাক্কা দেয়নি। প্রক্টর স্যার আমাদের ডিপার্টমেন্টের হওয়ায় কেউ কিছু করতে পারবে না বলে তারা যে অভিযোগ আনছে তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। আমরা তাদের ডিপার্টমেন্টে প্রবেশ করিনি। আমরা জয়ী হওয়ার পর তাদের অনুষদের সামনে দিয়ে স্লোগান দিতে দিতে আসছিলাম। সিসিটিভি ফুটেজ দেখলে বিষয়টি বোঝা যাবে।
এবিষয়ে ফলিত রসায়ন বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. শরিফ মো. আল-রেজা বলেন, আমাদের ছেলেপেলে হেরে যাওয়ায় ওদের মন খারাপ ছিল। ওদের এখানে চা বিস্কিট খেতে দিয়ে বিভাগে গেছি। এর মধ্যে ওরা এসে আমাদের ছেলেদের উপর আক্রমণ করছে। তাদের হাতে লাঠিসোঁটা ছিল, আমাদের ছেলেদের মারছে। আমাদের টিচারদের উপরেও আক্রমণ করছে। আগামীকাল সব ডকুমেন্টস সাবমিট করে প্রক্টরিয়াল বডির কাছে লিখিত অভিযোগ পত্র দেওয়া হবে। যদি উপযুক্ত সমাধান না হয়, তাহলে আমরা পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হবো। আপাতত শিক্ষার্থীরা বিচারের আশায় চুপ থাকবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইইই বিভাগের সভাপতি এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. শাহীনুজ্জামান বলেন, দোষ যেই করুক না কেন শাস্তি অবশ্যই পাবে। কাল প্রক্টরিয়াল বডি দুই পক্ষের সাথে বসে সিদ্ধান্ত নিবে। উভয় পক্ষ তাদের ডকুমেন্টস সাবমিট করবে। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা লিখিত অভিযোগ দিলে পরবর্তী পদক্ষেপে যাওয়া যাবে।