০৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২১:১৩

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সংকট নিরসনে ১২ দফা দাবি শিক্ষার্থীদের 

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়  © লোগো

বাংলাদেশের নিম্নমধ্যবিত্ত ও দরিদ্র পরিবার থেকে উচ্চশিক্ষায় আসা সর্বোচ্চসংখ্যক শিক্ষার্থীদের আশ্রয়স্থল জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। অনেক শিক্ষার্থী আছেন, যারা টাকার অভাবে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তিযুদ্ধে নামতে পারেন না। আর প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া তো অনেক দূরের কথা। তাই বাধ্য হয়ে অবহেলা আর উদাসীনতার শিকার হয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েন। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নানা সংকট ও সমস্যা নিয়ে হতাশায় দিন পার করছেন। এ অবস্থায় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সংকট-সমস্যা নিরসনে ১২ দফা দাবি জানিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। 

বুধবার (৪ ডিসেম্বর) ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, গাজীপুর, দিনাজপুর সহ বেশ কয়েকটি জেলার প্রশাসকের মাধ্যমে এ স্মারকলিপি দেন শিক্ষর্থীরা। 

স্মারকলিপিতে শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘যে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হয়েছিল, ৩২ বছরেও সে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জন সম্ভব হয়নি। প্রয়োজনীয় সংখ্যক শিক্ষক, শ্রেণিকক্ষ, গবেষণা ছাড়াই অনার্স-মাস্টার্স-ডিগ্রী কোর্সসমূহ চালু রয়েছে। এছাড়াও নেই মানসম্মত এবং কর্মমুখী কারিকুলাম, কর্তৃপক্ষের যথাযথ মনিটরিং, উত্তরপত্রের সঠিক মূল্যায়ন।জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত বেশিরভাগ কলেজে নেই পর্যাপ্ত সংখ্যক শিক্ষক, শ্রেণিকক্ষ, ল্যাব, আবাসন সুবিধা, যাতায়াত সুবিধা।’

স্মারকলিপিতে ইউজিসির তথ্য যুক্ত করে তারা বলেন, ‘বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী প্রতি ব্যয় করে ৩ হাজার ৪১৫ টাকা। সেখানে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী প্রতি ব্যয় করে মাত্র ৭৪৩ টাকা। যার কারণে কমেছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মান। উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা ও অবহেলার কারণে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সবচেয়ে বেশি বৈষম্যের শিকার হচ্ছে। নিম্ন-মধ্যবিত্ত ও দরিদ্র পরিবার থেকে আসা শিক্ষার্থীদের একমাত্র ভরসার স্থান জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়কে দ্রুত সংস্কার করে বৈষম্য দূর করার জন্য বিনীত নিবেদন করেন শিক্ষার্থীরা ।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সংকট নিরসনের জন্য শিক্ষার্থীদের পক্ষ হতে ১২ টি দাবি তুলে ধরা হয়। দাবিগুলো হলো-

১. জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সেশনজট নিরসনের জন্য যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। সেই সাথে সেশনভিত্তিক অ্যাকাডেমিক ক্যালেন্ডার প্রকাশ এবং তা বাস্তবায়ন করে যথাসময়ে কোর্স সমাপ্ত করতে হবে।

২. জরুরি ভিত্তিতে শ্রেণিকক্ষের পরিমাণ বৃদ্ধি করতে হবে। শ্রেণিকক্ষের জন্য পর্যাপ্ত আসবাবপত্র, ভিজ্যুয়াল এবং ফ্যানের ব্যবস্থা করতে হবে। হল ও সেমিনারের জন্য আলাদা কক্ষের ব্যবস্থা করতে হবে।

৩. জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত প্রতিটি কলেজে পর্যাপ্ত শিক্ষক নিয়োগ এবং শিক্ষকদেরকে নিয়মিতভাবে বিষয়ভিত্তিক প্রশিক্ষণ দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।

8. কলেজের লাইব্রেরি নিয়মিত খোলা রাখা। লাইব্রেরিতে নতুন অ্যাকাডেমিক বই-পত্র এবং জার্নাল নিয়মিত সরবরাহ করা।

৫. আবাসনের জন্য ছাত্র-ছাত্রী হোস্টেল নির্মাণ এবং হোস্টেলের নিয়মিত তদারকি এবং সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। কলেজ থেকে দূরের শিক্ষার্থীদের জন্য কলেজ বাসের ব্যবস্থা করতে হবে।

৬. গবেষণা ও ল্যাবের উন্নয়নের জন্য পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ দিতে হবে।

৭. প্রয়োজনীয় সংখ্যক শিক্ষক, কলেজ অবকাঠামো ছাড়া যত্রতত্র অনার্স-মাস্টার্স অনুমোদন দেওয়া বন্ধ করতে হবে।

৮. কর্মসংস্থান ও সময় উপযোগী কারিকুলাম প্রণয়ন, বিশেষজ্ঞ শিক্ষকদ্বারা মানসম্মত পাঠ্যবই রচনা এবং প্রকাশ করতে হবে।

৯. জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উত্তরপত্র মূল্যায়ন নিয়ে অনেক অভিযোগ রয়েছে। উত্তরপত্র সঠিকভাবে মূল্যায়নের জন্য দ্বৈত পরীক্ষক দ্বারা সঠিকভাবে উত্তরপত্র মূল্যায়ন করতে হবে।

১০. দরিদ্র-মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষাবৃত্তির ব্যবস্থা করতে হবে।

১১. জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর শুধুমাত্র একবার ২০১৭ সালে সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়েছে। ধারাবাহিকতা বজায় রেখে নিয়মিত সমাবর্তন আয়োজন করতে হবে।

১২. প্রতিটি কলেজে শিক্ষক-শিক্ষার্থী-কর্মচারীদের চিকিৎসা সেবার জন্য স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে।