২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১:৪৪

নামের মিলে একজনের শিক্ষকতার চাকরি পেলেন আরেকজন

চূড়ান্ত নিয়োগ পরীক্ষায় প্রথম হলেও চাকরি পাননি রাজশাহীর গোলাম রব্বানী (বাঁয়ে), রাজনৈতিক কারণে চাকরি পান ঠাকুরগাঁওয়ের গোলাম রব্বানী (ডানে)  © সংগৃহীত

রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে (বেরোবি) শিক্ষক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি অনুসারে আবেদন করেছিলেন বেশ কয়েকজন প্রার্থী। তাদের মধ্যে দুই প্রার্থীরই নাম মো. গোলাম রব্বানী। একজন প্রার্থী রাজশাহীর, অন্যজন ঠাকুরগাঁওয়ের। দুজনের নামের হুবহু মিল থাকলেও বাবা-মায়ের নাম, রেজাল্ট, ঠিকানা অন্য কিছুর মিল নেই। তবে সামান্য নামের মিল থাকার জেরেই রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে একই নামের অন্যের চাকরি বাগিয়ে নেওয়া নিয়ে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এটাকে ভয়াবহ জালিয়াতি হিসেবে অবহিত করছে অনেকেই। এ নিয়ে গোটা ক্যাম্পাসে তোলপাড় শুরু হয়েছে। 

শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় নানা ধাপ পেরিয়ে প্রথম হয়েছিলেন রাজশাহীর প্রার্থী মো. গোলাম রব্বানী। তবে তাকে বাদ দিয়ে বোর্ড নিয়োগ দেয় ঠাকুরগাঁওয়ের মো. গোলাম রব্বানীকে। বর্তমানে তিনি  ইতিহাস ও প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত। এ বিষয়ে রাজশাহীর বাগমারা থানার বালিয়াডাঙ্গা গ্রামের মো. গোলাম রব্বানী আসল দাবি করে তার চাকরি ফেরত পেতে বিশ্ববিদ্যালয় রেজিস্টার বরাবর দরখাস্ত দিয়েছেন।

অভিযোগ রয়েছে, তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রভাব বিস্তার করা হয়। সাবেক পানিসম্পদমন্ত্রী ও ঠাকুরগাঁও-১ (সদর) আসনের সাবেক এমপি রমেশ চন্দ্র সেন নিজ এলাকার প্রার্থী মো. গোলাম রব্বানীকে নিয়োগ দিতে সুপারিশ করেছিলেন।

রাজশাহীর গোলাম রব্বানী নামে চূড়ান্ত নিয়োগ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে তার বরাবর নিয়োগপত্র পাঠায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। কিন্তু তাকে বিএনপি-জামায়াত ট্যাগ দিয়ে যোগদান করতে না দিয়ে একই নামে আওয়ামী পন্থী আরেক মো. গোলাম রব্বানীকে নিয়োগ দেয় তৎকালীন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

রাজশাহীর মো. গোলাম রব্বানী তৎকালীন উপাচার্য প্রফেসর ড. মুহাম্মদ আবদুল জলিল মিয়ার সাথে একাধিকবার দেখা করলেও রাজনৈতিক কারণে যোগদানপত্র গ্রহণ সম্ভব নয় বলে জানান উপাচার্য । এমনকি তাকে বিএনপি-জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত উল্লেখ করে বলাবলি করেন। 

জানা গেছে, ২৫ নভেম্বর ২০২৪ (সোমবার) রেজিস্ট্রার ড. হারুন অর রশিদ  বরাবর বৈষম্যের শিকার দাবি করে রাজশাহীর মো. গোলাম রব্বানী তার দরখাস্ত দিয়েছেন। এতে তিনি জানান, তার নামের সঙ্গে হুবহু মিল রয়েছে এমন একজন প্রার্থী ঠাকুরগাঁও জেলার মো: গোলাম রব্বানীকে (বর্তমানে সহযোগী অধ্যাপক, ইতিহাস ও প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ) জালিয়াতি ও সুকৌশলের মাধ্যমে প্রভাষক পদে যোগদান করানো হয়।

এ ঘটনা ২০০৯ সালের। ওই বছরের ১৭ ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগে প্রভাষক পদে অনুষ্ঠিত নিয়োগ বাছাই বোর্ডে অংশগ্রহণ করেন রাজশাহীর প্রার্থী মো. গোলাম রব্বানী। বাছাই বোর্ডের সুপারিশ অনুযায়ী তিনি প্রথম হন। ১৯ ডিসেম্বরে  অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেটের একাদশ তম সভার অনুমোদনক্রমে তাকে ২২ ডিসেম্বরে  ইতিহাস বিভাগে প্রভাষক পদে যোগদানের জন্য তার গ্রামের ঠিকানায় নিয়োগপত্র পাঠানো হয়। নিয়োগপত্রে তাকে ১ জানুয়ারি থেকে ৪ জানুয়ারির ২০১০  তারিখের মধ্যে যোগদান করতে বলা হয়। সেই অনুযায়ী তিনি যোগদান করতে গেলে পরে আর যোগ দিতে পারেননি। তার জায়গায় নিয়োগ দেয়া হয় ঠাকুরগাঁওয়ের প্রার্থী
মো. গোলাম রাব্বানীকে।

নিজেকে ‘আসল’ মো. গোলাম রব্বানী দাবি করেন রাজশাহীর প্রার্থী। ১৫ বছর পর পুনরায় নিয়োগ চাওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন , ‘অনেকেই তখন আমাকে আদালতের শরণাপন্ন হতে বলেছিলেন। তবে ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হওয়ার আশঙ্কায় তা থেকে বিরত ছিলাম। তৎকালীন প্রশাসন রাজনৈতিক ভিন্ন মতাদর্শের হওয়ায় আমাকে ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করেছেন। তাই বর্তমান রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের ফলে ন্যায়বিচার পাব আশা করি।’  

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মাধ্যমে সৃষ্ট দুর্নীতিমুক্ত ও স্বাচ্ছ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে রাজশাহীর মো. গোলাম রব্বানী আবেদন করেন জানান, দীর্ঘ ১৫ বছর পূর্বে শুধু নামের সাথে মিল থাকার কারণে তার প্রতি যে অন্যায় করা হয়েছে, তার নিয়োগ লাভের মাধ্যমে এর সুষ্ঠু সমাধান চেয়ে আশা করছেন।

এ বিষয়ে বর্তমান শিক্ষকতায় থাকা মো. গোলাম রব্বানীর সঙ্গে দেখা করলে তিনি প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে পরে কথা বলবেন বলে প্রশাসনিক ভবন থেকে দ্রুত বেরিয়ে যান।

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্টার ড. হারুন অর রশিদ বলেন, ‘আমরা অভিযোগ গ্রহণ করেছি। তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। তারপর তদন্ত সাপেক্ষে তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’