২৩ নভেম্বর ২০২৪, ১৯:২৮

বাকৃবির কৃষি শক্তি ও যন্ত্র বিভাগের শিক্ষার্থীদের বায়োগ্যাস প্লান্ট পরিদর্শন

বায়োগ্যাস প্লান্ট পরিদর্শনে বাকৃবির শিক্ষার্থীরা  © টিডিসি ফটো

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) কৃষি শক্তি ও যন্ত্র বিভাগের শিক্ষার্থীদের জন্য বায়োগ্যাস প্লান্ট পরিদর্শন ছিল এক ভিন্নধর্মী অভিজ্ঞতা। পাঠ্যবইয়ের জ্ঞানকে বাস্তব জীবনের সঙ্গে মেলানোর উদ্দেশ্যে তারা পরিদর্শন করেছিলেন মুন্সিগঞ্জের সাটঘাড়িয়ার লৌহজং এলাকায় অবস্থিত ডাচ ডেইরি লিমিটেডের বায়োগ্যাস প্লান্ট। এ প্রকল্পটি নবায়নযোগ্য শক্তির একটি সফল উদাহরণ এবং দেশের জ্বালানি নির্ভরতা কমানোর একটি সম্ভাবনাময় উদ্যোগ।

আজ শনিবার (২৩ নভেম্বর) দুপুর সাড়ে ১২ টার দিকে মুন্সিগঞ্জের সাটঘাড়িয়ার লৌহজং এলাকায় অবস্থিত ডাচ ডেইরি লিমিটেডের বায়োগ্যাস প্লান্ট পরিদর্শন করেন শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থায়নে এবং কৃষি শক্তি ও যন্ত্র বিভাগ এই সফরটির আয়োজন করে।

জানা যায়, ২০১৭ সালের ৫ মে ২৬ একর জমির উপর ২০ কোটি টাকা ব্যয়ে ডাচ ডেইরি লিমিটেড বায়োগ্যাস প্লান্ট প্রকল্পটি শুরু করে। সাত বছর পরে এটি একটি সফল অবস্থানে পৌঁছেছে। প্রকল্পের পরিচালক আসিফ মৃধা জানান, ১২০০ গরুর গোবর থেকে প্রতিদিন ২০০০ ঘন মিটার গ্যাস এবং ৪০০০ কেজি জৈব সার উৎপাদন করা সম্ভব হচ্ছে।

উৎপাদনকৃত গ্যাস থেকে ২৫০ কেভিএ ক্ষমতাসম্পন্ন জেনারেটরের মাধ্যমে প্রতিদিন ৪৪০ ভোল্ট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়। এতে কোম্পানির প্রতিদিনের বিদ্যুৎ চাহিদা ছয় ঘণ্টার জন্য পূরণ হয়। গোবর থেকে গ্যাস উৎপাদনের পাশাপাশি প্লান্টটি অত্যন্ত কার্যকরভাবে বায়ো স্লারি প্রক্রিয়া করে জৈব সার উৎপাদন করে, যা কৃষিক্ষেত্রে ব্যবহারযোগ্য।

শিক্ষার্থীদের এই  সফরের সময় উপস্থিত ছিলেন তাদের কোর্স শিক্ষক অধ্যাপক ড. চয়ন কুমার সাহা এবং কৃষি শক্তি ও যন্ত্র বিভাগের প্রধান সহযোগী অধ্যাপক ড. টুম্পা রানী সরকার। ডাচ ডেইরি লিমিটেডের প্রকল্প পরিচালক আসিফ মৃধা এবং সিড বাংলার ব্যবস্থাপক মোস্তফা কামাল প্লান্টের কার্যক্রম সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের বিশদ ধারণা দেন।

প্লান্টটি পরিদর্শন করে দেখা যায়, দুটি কালেকশন পয়েন্ট রয়েছে প্লান্টটিতে, যেখানে গরুর গোবর জমা করা হয়। এরপর পানির সঙ্গে মিশিয়ে মিশ্রণটি ২ ঘণ্টা বিরতিতে ঘুরানো হয়। এ মিশ্রণটি পরে প্লান্টে প্রবেশ করিয়ে অক্সিজেনহীন পরিবেশে ডাইজেশন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে গ্যাস এবং বায়ো স্লারি উৎপাদন করা হয়। গ্যাস উৎপাদনের পর এটি দুটি মেমব্রেন ব্যাগে জমা হয়। অন্যদিকে প্লান্টের ডোমে শুধু ৩০ শতাংশ গ্যাস সংরক্ষণ করা যায়। সংরক্ষিত গ্যাস থেকে পরে পানি দূর করে জেনারেটরে সরবরাহ করা হয় বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য। প্লান্টটির উচ্চতা ছিল ৮ মিটার এবং ব্যাস ২০ মিটার।

ডাচ ডেইরি লিমিটেডের কার্যক্রম শুধু বায়োগ্যাস উৎপাদনে সীমাবদ্ধ নয়। প্রতিষ্ঠানটির রয়েছে ১১০০ বোয়ার জাতের ছাগল এবং ৩০০০ ভেড়া রাখার সক্ষমতা। ১২০০ গরু থেকে  প্রতিদিন ২০০০ কেজি দুধ উৎপাদন হয়, যা প্রক্রিয়াজাতকরণ শেষে বিক্রি করা হয়। পাশাপাশি মাংস প্রক্রিয়াকরণ কার্যক্রমও পরিচালিত হয়।

প্রকল্প পরিচালক আসিফ মৃধা জানান, ‘আমাদের প্রতিষ্ঠান প্রতিদিন প্রায় ৭০০ গ্রাহকের কাছে দুধ এবং মাংস সরবরাহ করে থাকে। এছাড়া, বায়োগ্যাসের মাধ্যমে পরিবেশবান্ধব বিদ্যুৎ উৎপাদন আমাদের আরেকটি বড় সাফল্য।’

সিড বাংলার ব্যবস্থাপক মোস্তফা কামাল জানান, ‘আমরা এখানে একটি ট্রিটমেন্ট প্লান্ট স্থাপন করেছি, যা বায়ো স্লারিকে প্রক্রিয়া করে পুনরায় ব্যবহারযোগ্য করে তোলে। এ প্রযুক্তি পরিবেশ সুরক্ষার পাশাপাশি সাশ্রয়ীও।’

বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট পরিদর্শন শেষে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বায়োগ্যাস প্রযুক্তি নিয়ে উচ্ছ্বাস দেখা যায়। তারা নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেন এবং নিজেদের কর্মক্ষেত্রে এর প্রয়োগের সম্ভাবনা নিয়ে ভাবতে শুরু করেন।

কোর্স শিক্ষক ড. চয়ন কুমার সাহা বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের জন্য এ ধরনের পরিদর্শন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি তাদের বাস্তব জ্ঞানের সঙ্গে পাঠ্যপুস্তকের তাত্ত্বিক জ্ঞানকে মিলিয়ে চিন্তা করতে সাহায্য করবে।’

ডাচ ডেইরি লিমিটেডের বায়োগ্যাস প্লান্টটি বাংলাদেশের নবায়নযোগ্য শক্তি উৎপাদনের একটি অনন্য দৃষ্টান্ত। শিক্ষার্থীরা এখানে নতুন ধারণা অর্জন করেছেন, যা তাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।