ক্যাম্পাসে উচ্চস্বরে গান-বাজনায় অতিষ্ঠ বেরোবি শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে এক বিভাগের ক্লাস চলাকালে বিভিন্ন বিভাগের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, ব্যাচ ডে, নবীন বরণ পালন এবং সন্ধ্যা ও গভীর রাত পর্যন্ত ক্যাম্পাসে বনভোজন আর বিভিন্ন অনুষ্ঠানের উচ্চস্বরে গান-বাজনায় অতিষ্ঠ আবাসিক এলাকার (ডরমিটরি এবং হল) শিক্ষক- শিক্ষার্থীরা। এতে ক্লাস-পরীক্ষায় শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা বিরক্তি অনুভব করেন এবং রাতে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় মনোযোগ দিতে পারেন না,অভিযোগ তাদের।
বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইনে বলা আছে, কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষের অনুমতি না পেয়ে আবাসিক এলাকায় শব্দের সর্বোচ্চ মানমাত্রা অতিক্রম করতে পারবে না। সে ক্ষেত্রে আবাসিক এলাকায় দিনের বেলায় ৫৫ ডেসিবেল ও রাতের বেলায় ৪৫ ডেসিবেলের বেশি শব্দ অতিক্রম করতে পারবে না। তবে কর্তৃপক্ষের অনুমতি সাপেক্ষে খোলা বা আংশিক খোলা জায়গায় বিয়ে বা অন্য কোনো কোনো সামাজিক অনুষ্ঠানে গান, ক্রীড়া প্রতিযোগিতা, কনসার্ট, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, রাজনৈতিক বা অন্য কোনো ধরনের সভা, মেলা, যাত্রাগানের অনুষ্ঠান করতে পারবেন।
এ আইনের ১৮ ধারায় বলা আছে, কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান আবাসিক এলাকায় শব্দের মানমাত্রা অতিক্রমকারী যন্ত্র বাজালে বা আইন অমান্য করলে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা এবং এক মাসের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবেন। পুনরায় একই ধরনের অপরাধ করলে ১০ হাজার টাকা জরিমানা এবং ৬ মাসের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
এ বিষয়ে গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী আরেফা খাতুন বলেন, প্রতিদিন সকাল থেকে রাত ১২ টা পর্যন্ত উচ্চশব্দে গান বাজানো হয়। এত শব্দে আবাসিক এলাকায় আমরা অতিষ্ঠ। অতিরিক্ত মাত্রার শব্দ দূষণের কারণে শিক্ষার্থীদের মাথা ব্যথা হচ্ছে, পর্যাপ্ত ঘুম হচ্ছে না,পড়াশোনার পরিবেশ বিঘ্নিত হচ্ছে। শিক্ষার্থীরা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হচ্ছে।
রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শিক্ষার্থী শাহরিয়ার বলেন, আমার পরীক্ষার দিনে মাইকের উচ্চ শব্দে সারারাত পড়াশোনা হয়নি। সকালের পড়াশোনা দিয়েই পরীক্ষা দিতে হয়েছে। এভাবে আবাসিক এলাকায় গভীর রাতে উচ্চস্বরে মাইক বাজানো কতটুকু যৌক্তিক সেটা প্রশাসনের অনুমতি ছাড়া হয় কিনা তারাই ভালো জানেন। বিষয়টা গুরুত্ব সহকারে দেখার জন্য কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্সটিটিউশনাল কোয়ালিটি অ্যাসিউরেন্স সেল (আইকিউএসি) এর পরিচালক গণিত বিভাগের প্রফেসর ড. মো. তাজুল ইসলাম বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা আসলে বিশ্ববিদ্যালয়ের মানেই বোঝে না। এখনকার বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ দেখে নবাগত শিক্ষার্থীরা হয়ত এটাই ভাববে যে, বিশ্ববিদ্যালয় মানেই আনন্দ ,ফুর্তি আর হৈ হুল্লোড়ের জায়গা। বিশ্ববিদ্যালয় যে গবেষণার জায়গা এ বিষয়ে সবাই উদাসীন। মাঝে মাঝে উচ্চস্বরের বাদ্যযন্ত্রের আওয়াজ শুনে মনে হয় ক্যাম্পাসটা ভেঙে চুরমার হয়ে যাচ্ছে। এরকম পরিবেশ বিশ্ববিদ্যালয় কখনোই কাম্য না। আসলে বাংলাদেশের অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়েরই এমন অবস্থা। দেশের বাইরের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষাগত পরিবেশ থেকে আমাদের শিক্ষা নেওয়া উচিত।’
এ সম্পর্কে জানতে চাইলে ড. মো. ফেরদৌস রহমান বলেন, ‘আমরা বিষয়টা পরিলক্ষিত করেছি। এখন যারা এসব অনুষ্ঠান করার জন্য আমাদের কাছে পারমিশন নেন তাদের আমরা বলে দেই যে, ক্যাম্পাসে কোন অবস্থাতেই মাইক বাজানো যাবে না। কারণ বিশ্ববিদ্যালয়ের ২২ টি বিভাগ যদি এভাবে কালচারাল অনুষ্ঠান করতে থাকে তাহলে ক্যাম্পাসের পরিস্থিতি অস্থিতিশীল হয়ে যাবে। আর রাত আটটার মধ্যে প্রোগ্রাম শেষ করার অনুমতি দেয়া হয়। এখন থেকে এসব নিয়ম যদি কেউ না মানে তাহলে তার কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।