১১ নভেম্বর ২০২৪, ১৯:৩৪

গুচ্ছের গতবারের কার্যক্রম শেষ হয়নি, এবারের ভর্তি পরীক্ষা কবে?

গুচ্ছভুক্ত বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের লগো  © সংগৃহীত

আহ্বায়কের পদ শূন্য থাকায় ২৪ বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে গঠিত সাধারণ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (জিএসটি) গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে নেতৃত্বে পরিবর্তন হয়েছে। গতকাল রবিবার (১০ নভেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উপাচার্যদের এক মিটিংয়ে নতুন আহ্বায়ক হিসেবে মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ারুল আজীম আখন্দকে রাখার সিদ্ধান্ত হয়।

এর আগে ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে জিএসটি গুচ্ছের নেতৃত্বে ছিল যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (যবিপ্রবি)। সেই সূত্রে আহ্বায়ক হিসেবে ছিলেন যবিপ্রবির তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ার হোসেন। তবে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগের পতনের পর শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আনোয়ার হোসেন পদত্যাগ করেন। ফলে জিএসটি গুচ্ছের আহ্বায়কের পদটি ফাঁকা হয়ে যায়।

জানা গেছে, গুচ্ছ পদ্ধতির ভর্তি পরীক্ষার ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের কার্যক্রম এখনও সম্পন্ন হয়নি। এখনও চূড়ান্ত মাইগ্রেশন বাকি রয়েছে। এই মাইগ্রেশন সম্পন্ন হলেও কৃষি গুচ্ছের ভর্তি শেষে অনেক শিক্ষার্থী সেখানে চলে যাবেন। ফলে এসব শিক্ষার্থীরা যে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি রয়েছে সেখানে আসন ফাঁকা হয়ে গেলে নতুন করে আসন পূরণের জন্য কাজ করতে হবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে।

তাই প্রশ্ন উঠেছে, গুচ্ছের চলতি কার্যক্রম সম্পন্ন না হলে নতুন বছরের (২০২৪-২৫) কার্যক্রম কবে শুরু হবে? বিষয়টি নিয়ে তথ্য জানাতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি) কিংবা গুচ্ছের আহ্বায়ক কমিটি।

ইউজিসি বলছে, নতুন বর্ষের কার্যক্রম কবে শুরু হবে, এটার বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। এখানে ইউজিসির কোনো হস্তক্ষেপের সুযোগ নেই। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ম্যানেজমেন্ট বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ জামিনুর রহমান বলেন, এখনও কোনো অগ্রগতি নেই। গুচ্ছ থাকবে কি-না বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়নি। আহ্বায়ক কমিটি গঠিত হলে তারা এটার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। কাজেই এটার বিষয়ে ইউজিসির কোনো তথ্য নেই। তবে আমরা জেনেছি, গুচ্ছ নিয়ে একটা জটিলতা রয়েছে, অনেক বিশ্ববিদ্যালয় এ পদ্ধতিতে থাকতে ইচ্ছুক নয়। 

২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে তিন গুচ্ছের ৩৬ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। ইতোমধ্যে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় বেরিয়ে যাওয়ার কথা জানিয়েছে। সম্প্রতি গুচ্ছ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেয় কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়। এ প্রসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হায়দার আলীর সাথে কথা হলে তিনি দ্যা ডেইলি ক্যম্পাসকে জানান, ‘আমরা ঘোষণা দিয়েছি গুচ্ছ পদ্ধতিতে যাব না। তবে আমাদেরকে ভাবতে হচ্ছে, আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো স্বাধীন কিনা। এখানে আইনি জটিলতা কতখানি সেটা বিবেচনা করেই আমরা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেব। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরবর্তী সভায় এ বিষয়ে আমরা আলোচনা করব।’

মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ারুল আজীম আখন্দ দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, এখানে কোনো জটিলতা তৈরি হয়নি। আগের কমিটির আহ্বায়ক হিসেবে ছিলেন যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (যবিপ্রবি)। তবে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে যবিপ্রবি উপাচার্য পদত্যাগ করেছেন। কাজেই আহ্বায়ক পদটি শূন্য হয়ে যাওয়ায় নতুন করে আহ্বায়ক করা হয়েছে। গতকাল উপাচার্যদের একটি মিটিংয়ে সর্বসম্মতিক্রমে আমাকে আহ্বায়ক করার সিদ্ধান্ত হয়।

উপাচার্য আরও বলেন, বিষয়টি এখনও লিখিতভাবে জানানো হয়নি। এছাড়াও অর্থসংক্রান্ত আহ্বায়কসহ আরও বেশ কয়েকটি পদেও পরিবর্তন আনা হয়েছে। আমরা গতকালই মিটিং করেছি, এ সংক্রান্ত রেজ্যুলেশন লেখা হলেই আমরা সেটা গণমাধ্যমে প্রকাশ করব। নরমাল প্রসেসে যেহেতু কোন আহ্বায়ক ছিলেন না, তাই মিটিংয়ের মাধ্যমে আহ্বায়ক মনোনীত করা হয়েছে।

অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ারুল আজীম আখন্দ, উপাচার্য, মাভাবিপ্রবি

এই কমিটির কার্যক্রম নিয়ে অধ্যাপক আনোয়ারুল আজীম জানান, এখনও একটি মাইগ্রেশন বাকি আছে, সেটার কার্যক্রম সম্পন্ন হবে। এছাড়া কৃষি গুচ্ছের কার্যক্রম সম্পন্ন হলে আরও কিছু শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে চলে যাবে। সেখানে ফাঁকা আসনগুলো নিয়েও কার্যক্রম বাকি আছে। সকল কার্যক্রম সম্পন্ন হলে নতুন শিক্ষাবর্ষে নেতৃত্বের পরিবর্তন আসবে কিনা সেটার বিষয়ে নতুন করে সিদ্ধান্ত হবে। এখন অন্তর্বর্তী সময়ের জন্য এই কমিটি গঠন করা হয়েছে।

এদিকে গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলো একসঙ্গে রাখার বিষয়ে চেষ্টা করবেন বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এস এম এ ফায়েজ।

সোমবার (১১ নভেম্বর) দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে অধ্যাপক এ ফায়েজ বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আলাদা সিদ্ধান্ত নেওয়ার স্বাধীনতা আছে। তবে তারা ছাত্রদের কষ্টের বিষয়টি বিবেচনায় নেবে বলে আমরা আশা করি। আমরা কোনোকিছু চাপিয়ে দেব না। তবে আমরা বিশ্বাস করি, তারা অবশ্যই ছাত্রদের আর্থিক ও কষ্টের বিষয়টি বিবেচনায় রাখবে। এখানে তাদের থাকার বিষয়টিও আছে।’ ইউজিসি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে একসঙ্গে রাখার চেষ্টা করবে বলে জানান তিনি।

গুচ্ছভুক্ত ২৪ বিশ্ববিদ্যালয়
প্রসঙ্গত, গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় থাকা আগের ২২টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ১১টি সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয়, বাকি ১১টি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। সাধারণ ১১টি বিশ্ববিদ্যালয় হলো- জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়, রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয়, শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয় (কিশোরগঞ্জ)।

১১টি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় হলো- শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, মাওলানা ভাষানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, নোয়াখালি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, পটুয়াখালি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।

এছাড়াও গুচ্ছতে যুক্ত হওয়া নতুন দুই বিশ্ববিদ্যালয় হলো- সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, পিরোজপুর। তবে সম্প্রতি বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় গুচ্ছ পদ্ধতির ভর্তি পরীক্ষায় না থাকার ঘোষণা দিয়েছে। তবে বিষয়টি নিয়ে এখনো চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। 

যদিও ইউজিসি বলছে, তারা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে এ প্রক্রিয়ায় রাখার চেষ্টা করবে। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এস এম এ ফায়েজ সোমবার (১১ নভেম্বর) দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে এ প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আলাদা সিদ্ধান্ত নেওয়ার স্বাধীনতা আছে। তবে তারা ছাত্রদের কষ্টের বিষয়টি বিবেচনায় নেবে বলে আমরা আশা করি। আমরা কোনোকিছু চাপিয়ে দেব না। তবে আমরা বিশ্বাস করি, তারা অবশ্যই ছাত্রদের আর্থিক ও কষ্টের বিষয়টি বিবেচনায় রাখবে। এখানে তাদের থাকার বিষয়টিও আছে।’ ইউজিসি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে একসঙ্গে রাখার চেষ্টা করবে বলে জানান তিনি।