জরুরি ফি দিলেও ইবির পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তর কাজ চলে সাধারণ গতিতে
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষানিয়ন্ত্রক দপ্তর নিয়ে ভোগান্তির শেষ নেই শিক্ষার্থীদের। সার্টিফিকেট, মার্কশিট, অ্যাকাডেমিক ট্রান্সক্রিপ্ট সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র উত্তোলন করতে গিয়ে চরম হয়রানির শিকার হয় তারা। কর্তৃপক্ষের অবহেলা, সমন্বয়হীনতা, জায়গা ও লোকবল সংকটের ফলে বছরের পর বছর ধরে এসব জরুরি কাজ করতে গিয়ে চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের। জরুরি প্রয়োজনে অতিরিক্ত চার্জের বিপরীতে জরুরি ভিত্তিতে কাগজপত্র হস্তান্তরের কথা থাকলেও বাস্তবে সেই সেবা পাচ্ছে না শিক্ষার্থীরা। স্বাভাবিকের চেয়ে অতিরিক্ত টাকা চার্জ দিলেও কাজ হয় সাধারণ গতিতেই।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মার্কশিট, ট্রান্সক্রিপ্ট, সার্টিফিকেট উত্তোলনের ক্ষেত্রে সাধারণভাবে আবেদনের ১৫ দিনের মধ্যে এবং জরুরি ভিত্তিতে ৫ দিনের মধ্যে কাগজপত্র প্রদানের নিয়ম রয়েছে। কাগজপত্র তোলার আবেদনের ক্ষেত্রে সাধারণ ক্যাটাগরি ও জরুরি ক্যাটাগরির অস্তিত্ব থাকলেও বাস্তবে তার কোন প্রয়োগ নেই বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের। এমনকি আছে আবেদনপত্র হারিয়ে ফেলার মতো ঘটনাও। জরুরি ভিত্তিতে কাগজপত্র তুলতে কাগজ ভেদে ১০০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত অতিরিক্ত ফি পরিশোধ করলেও জরুরি কাজও সাধারণ গতিতেই হয় বলে জানিয়েছে সনদ ও ট্রান্সক্রিপ্ট তুলতে যাওয়া শিক্ষার্থীরা।
আবার সার্টিফিকেট ও অ্যাকাডেমিক ট্রান্সক্রিপ্ট তুলতে টাকা জমা দিয়ে আবেদনপত্র সাবমিট করার পর দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের টেব্যুলেশন শিট বের করে দেওয়ার কথা থাকলেও অধিকাংশ সময় তা খুঁজে বের করে দিতে হয় স্বয়ং শিক্ষার্থীদেরই। অনেক সময় খোঁজাখুঁজির ঝামেলায় না গিয়েই শিক্ষার্থীদের বলা হয় টেব্যুলেশন শিট পাওয়া যায়নি, বিকল্প হিসেবে পাঠানো হয় নিজ নিজ বিভাগে। সামান্য একটি কাজে গিয়ে দিনের পর দিন ঘুরতে হয় এই টেবিল থেকে ওই টেবিলে, হজম করতে হয় কর্মকর্তাদের দুর্ব্যবহার।
এ বিষয়ে শিক্ষার্থী বদরুল আলম বলেন, ‘জরুরি ভিত্তিতে কাগজ তুলতে হবে বলে ৭০০ টাকা ট্রান্সক্রিপ্ট ফি জমা দিয়ে রুমে গিয়ে দেখি ওইখানেই সাধারণ ক্যাটাগরির ৪০০ টাকার সিরিয়াল রয়েছে, দুই ক্যাটাগরির কোনো পার্থক্য নেই। এরপর টাকা জমা দেওয়ার পরে বলে যে টেব্যুলেশন শিট পাওয়া যায়নি, বাধ্য হয়ে ডিপার্টমেন্ট থেকে টেব্যুলেশন শিট এনে ট্রান্সক্রিপ্ট করতে হয়েছে। আমার কথা হলো, এই সাধারণ ফি ও জরুরি ফি- এর মধ্যে পার্থক্য কী আসলে? পার্থক্য না থাকলে টাকা নেওয়ার ক্ষেত্র আলাদা কেন। আবার, ২ টা না বাজতেই একজন কাজ নাই তাই চলে যাচ্ছিলো অথচ তখনও অনেক ভাই, আপু টেব্যুলেশন শিট খুঁজতেছিলেন। সেই কর্মকর্তা ৪টা পর্যন্ত থাকলে অনেকেই কাজ শেষ করতে পারতো।’
আরেক শিক্ষার্থী ময়নুল বলেন, ‘ট্রান্সক্রিপ্ট লেখক মোটামুটি ১০ টা, সাড়ে ১০ টার দিকে এসে সাড়ে ১২ টার পরে লাঞ্চে যায়। এরচেয়ে বেশিক্ষণ থাকলেও সেটা দুপুর ১ টা পার হবে না। এরমধ্যে যেটুকু কাজ হবে সেটাই প্রাপ্তি। মজার ব্যাপার হচ্ছে, উনি লাঞ্চ থেকে আসেন প্রায় ৩ টার কাছাকাছি সময়ে। এসে কিছুক্ষণ কাজ করে ৩:৪০ বাজলেই গুছানো শুরু করে দেন। ৩:৪৫ এর পর উনাকে আপনি কোনোভাবেই আটকাতে পারবেন না। তাহলে উনি কাজ করেন কত ঘণ্টা? এর বাইরে উনার ব্যক্তিগত কাজ থাকলে আর অফিসেই আসেন না। আমার ট্রান্সক্রিপ্ট লিখার পর সে সেইভ না করেই ফাইল কেটে দিয়েছে। রাগে আমি আর ট্রান্সক্রিপ্ট আনতেই যাইনি। এছাড়া, ট্রান্সক্রিপ্ট লিখার রুমে প্রিন্টার মাত্র একটা।’
এবিষয়ে ভারপ্রাপ্ত পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক এ কে আজাদ লাভলু বলেন, ‘পর্যাপ্ত জনবল না থাকায় আমরা ছাত্রদের কাঙ্ক্ষিত সুবিধা দিতে পারছি না। যারাই আসে তারাই বলে আজকেই কাগজপত্র দেন। আমাদের কর্মচারীর খুব সংকট। পিয়ন এবং ক্লার্ক চেয়ে রেজিস্ট্রারের কাছে আমরা বারবার নোট দিয়েছি কিন্তু এখনো পাইনি। বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষার আগে শিক্ষার্থীদের আবেদন পত্র নিয়ে এসেছিল, কষ্ট হয়েছে তবুও চেষ্টা করেছি সঠিক সময়ে কাগজপত্র দিতে। একেকজনের এমনি ৪টি কাগজপত্র লাগে, এর সাথে যদি অনার্স বা মাস্টার্স থাকে তাহলে আরো ৪টি যোগ হয়। তারপরেও কিছুটা দেরি হয়েছে, এক্ষেত্রে আসলে আমাদের কিছু করার নেই।’
জরুরি ভিত্তিতে আবেদনের ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘জরুরি আবেদনের ক্ষেত্রেও ৫ দিনের একটি সময় দেওয়া আছে। ৭০০ টাকা দিলেও যদি কেউ বলে আজকে এসে আজকেই দিতে তা সম্ভব না। আমরা ৫ দিনের আগেই দেওয়ার চেষ্টা করি। এখন জনবল কম থাকায় সাধারণ আর জরুরি আবেদন আলাদা করা যায়না। তবে কেও যদি ৫ দিনের মধ্যে কাগজ না পায় সেক্ষেত্রে আমরা দেখবো।’
সার্টিফিকেট শাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত কোনো কর্মকর্তা কিংবা কর্মচারীর ২ টার বাসে চলে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই দাবি করে তিনি বলেন, ‘জরুরি কাজে কেও চলে যেতে চাইলেও আমার অনুমতি নিয়ে যায়। আমি অন্য কাউকে দিয়ে তার কাজ চালিয়ে নেই। শিক্ষার্থীদের টেব্যুলেশন শিট খুঁজে বের করার দায়িত্ব কর্মচারীদের। কিন্তু কর্মচারী সংকটের কারণে ২/১ জন পিয়ন দিয়ে আমি ৩৬ টা বিভাগের বালাম শিট বের করে দিতে গেলে ছাত্রদের কাঙ্ক্ষিত সার্ভিস আমরা দিতে পারিনা। এটা খুঁজে দেয়ার দায়িত্ব আমাদেরই কিন্তু পরিস্থিতির কারণে একটু সমস্যা হয়।’