ছাত্রদলের পোস্টারে ছেয়ে গেছে ইবি শিক্ষার্থীদের বাস
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) শিক্ষার্থীদের বহনকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব বাস, বিআরটিসির ডাবল ডেকার লাল বাস ও ভাড়ায় চালিত বাসের গায়ে ৭ নভেম্বরের বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের পোস্টার সাঁটানোর ঘটনায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে শিক্ষার্থীদের মাঝে। পোস্টার সাঁটানোর বিষয়টি সামনে আসার পর সমালোচনার ঝড় বয়ে যাচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও। নিজস্ব প্রোফাইল ও বিভিন্ন গ্রুপে পোস্ট করে নিজেদের ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
গত ৬ নভেম্বর ইবির পরিবহন পুলে শিক্ষার্থীদের বাসে জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবসের পোস্টারিং করলেও ৭ ও ৮ তারিখ সাপ্তাহিক ছুটি থাকায় বন্ধ ছিল অধিকাংশ বাসের নিয়মিত চলাচল। তবে ৭ তারিখে বিপ্লব ও সংহতি দিবস পালনের পর অনুষ্ঠানের ছবি ও আগের দিনের পোস্টারিংয়ের ছবি ফেসবুকে পোস্ট করেন ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। তারপর থেকেই বিভিন্ন গ্রুপে দেখা যায় শিক্ষার্থীদের সমালোচনা ও ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া। একই সাথে অনেকেই দাবি জানিয়েছে ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি আজীবন নিষিদ্ধ করার।
তাসলিমা আক্তার বিশ্ববিদ্যালেয়র এক শিক্ষার্থী বলেন, বিভিন্ন গ্রাফিতি, লাল বাস'সহ অন্যান্য সবকিছু পরিচ্ছন্ন থাকা আমাদের ক্যাম্পাসের সৌন্দর্যের মধ্যে পড়ে। তবে বিপ্লব ও সংহতি দিবসে ক্যাম্পাসের অন্যান্য স্থানের মতো ডাবল ডেকার লাল বাসেও পোস্টার লাগানো হয়েছে। যেহেতু ক্যাম্পাসটি রাজনৈতিক মুক্ত নয় তাই তাদের বাধা দেওয়ার কোন কারণ নেই। ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে রাজনৈতিক দলের পোস্টার মারাকে সহজভাবে নেওয়া হতো তবে এসব দলীয় পোস্টার মারাকে অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে দৃষ্টিভটু ভাবেই দেখছি। পূর্বের গতানুগতিক সংস্কৃতির মতো বয়স্কদের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলে লোক ভিড়ানো শিক্ষার্থীদের জন্য অমঙ্গল হবে।
আরেক শিক্ষার্থী এইচ এম মহসিন বলেন, ভার্সিটির বাসে, হলের গেটে, একাডেমিক ভবনের দেওয়ালে, মেইন গেটে কিংবা ল্যাম্প পোস্টের স্ট্যান্ড বা গ্রাফিতির উপরে যারাই পোস্টারিং করেছে/করছে তাদের রাজনৈতিক জ্ঞান কোন লেভেলে আছে তা নিয়ে কিছু বলার প্রয়োজন নেই। নূন্যতম রাজনৈতিক জ্ঞান থাকলে কেউ এগুলা করেনা। কোন পোস্টার কোথায় লাগানো যায়, লাগানো উচিত সেটি এখনো না বুঝলে আবারো সেই সময়টা ফিরে আসবে যখন কোথাও তাদের পোস্টার খুজে পাওয়া যেতোনা। একটা পলিটিক্যাল পার্টি তাদের ব্যানার, পোস্টার লাগাতেই পারে, এটা সাংবিধানিক অধিকার। কিন্তু ভার্সিটির বাসে পোস্টারিং করাটা অধিকার কিনা যানিনা তবে দেখতে দৃষ্টিকটু লাগে। পোস্টারিং করেই যদি মানুষের মন জয় করা যেত তাহলে আওয়ামী লীগের আজ এ অবস্থা হতো না।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক এস এম সুইট বলেন, এখন জোর করে আদর্শ গেলানোর সময় নেই। জুলাই অভ্যুত্থানে তাদের অবদান আমরা অস্বীকার করিনা। কিন্তু ছাত্রজনতার আন্দোলনে ছাত্রদলের নিহত ১৪০ জনের পোস্টার না লাগিয়ে দেশের বিভিন্ন জায়গায় জুলাই গ্রাফিতির উপরে কর্মসূচির পোস্টার লাগালে সমালোচনা হবেই। এক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজয় একাত্তর হলের গেটে কমপক্ষে দেড়শো পোস্টার লাগানো হয়েছে। কেন? ট্যাগিং পলিটিক্স, পোস্টার পলিটিক্সের বাইরে এসে নতুন ধারার পলিটিক্স নিয়ে ভাবতে হবে। সবাই চায় প্রচলিত ধারার রাজনীতি না থাকুক।
এবিষয়ে ইবি ছাত্রদলের সদস্য সচিব মাসুদ রুমি মিথুন বলেন, এই সমালোচনাকে আমি যৌক্তিক মনে করি না কারণ আমাদের মতে যেটা ভালো কাজ, অনেকের মতে সেটা খারাপ কাজ হতেই পারে। দেয়ালে পোস্টার মারলে রং নষ্ট হয়ে যায়, খারাপ দেখাবে, তার জন্য বাসের গায়ে লাগানো হয়েছে। কারণ বাস বিভিন্ন জায়গায় চলাচলা করে, এতে প্রচারণা বাড়বে ভেবে ছেলেরা লাগিয়েছে। একজনের পোস্টার ভালো লাগতে নাই পারে, সেক্ষেত্রে পরামর্শ দেওয়া যায় যে জিনিসটা ভালো হয়নি, ওভাবে করলে ভালো হতো। কিন্তু এনিয়ে এতো সমালোচনার তো কিছু নাই।
পোস্টার ছেড়ার ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের দোসর ছাড়া কারো এইকাজ কারো করার কথা না। কোন কোন লাল বাসের গায়ে পোস্টার লাগানো হয়েছে সেটাও জানা নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, যদি একটি বাসের গায়ে অসংখ্য পোস্টার লাগানো হয় তাহলে খারাপ দেখানোই স্বাভাবিক। ছেলেপেলে হয়তোবা না বুঝে লাগিয়ে দিয়েছে। ছাত্রসমাজ যে কাজ পছন্দ করবে না, আমরা সেটা কখনোই করতে যাবো না। ছাত্রসংগঠন সবাই সবাইকে ভালো কাজে পরামর্শ দিবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু তা না করে যদি সারাদিন একটি জিনিসের পেছনে লেগে থাকা হয় তাহলে ভালো কাজ করবো কখন? কাজ করলে ভুল হবে এটাই স্বাভাবিক, তবুও যারা কাজের তারা কাজ করবে আর যারা সমালোচনা করার তারা সমালোচনা করবেই।
এবিষয়ে শাখা ছাত্রদলের আহবায়ক সাহেদ আহম্মেদের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তিনি কল রিসিভ করেননি।