কবি নজরুল কলেজে শুধু নেই আর নেই
কবি নজরুল সরকারি কলেজ রাজধানীর জনপ্রিয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হলেও শিক্ষার্থীদের জন্য পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা নেই দীর্ঘদিন ধরে। প্রাচীন কলেজটিতে তীব্র শ্রেণিকক্ষ সংকটে নিয়মিত পাঠদানের কার্যক্রম থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন শিক্ষার্থীরা।
এই প্রতিষ্ঠানে উচ্চমাধ্যমিক, স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায় পড়ানো হয়। সেমিনার কক্ষসহ শ্রেণিকক্ষ রয়েছে মোট ৩৭টি, যা প্রয়োজনের তুলনায় আশঙ্কাজনক হারে কম। শ্রেণিকক্ষের সমস্যায় সকালের দিকে উচ্চমাধ্যমিকের ক্লাস এবং পরে স্নাতক-স্নাতকোত্তরের ক্লাসের সময়সূচি রাখা হয়েছে। কোনো কোনো ডিপার্টমেন্টের রয়েছে মাত্র একটি শ্রেণিকক্ষ। শ্রেণিকক্ষ-সংকটের কারণে অনেক বিভাগের শিক্ষার্থীদের মাঝেমধ্যে দাঁড়িয়েও ক্লাস করতে হয়।
শিক্ষকদের অভিযোগ, শ্রেণিকক্ষের অভাবে তারা ঠিকমতো ক্লাস নিতে পারছেন না। প্রতিষ্ঠানে নেই পর্যাপ্ত সেমিনার কক্ষ। ফলে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা করতে পারছেন না সেমিনার কার্যক্রম। একটি ক্লাস চলাকালীন আরেকটি ক্লাসের শিক্ষার্থীরা বারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকেন। নামমাত্র সেমিনার কক্ষ থাকলেও নেই পর্যাপ্ত জায়গা ও চেয়ার-টেবিল। এখানে সেমিনার কক্ষ তো নয়, যেন পায়রার খোঁপ।
আবার অনেক সময় একই শ্রেণিকক্ষ ভাগাভাগি করে একই সময়ে ক্লাস করতে হচ্ছে বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীদের। এমন নানা সংকটের মধ্যেই চলছে নামকরা এই প্রতিষ্ঠানের শ্রেণি কার্যক্রম। এতে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করে বলেন, নিয়মিত ক্লাস ও পরীক্ষায় অংশগ্রহণে আমাদের বিঘ্ন ঘটছে। ২১টি বিভাগ থাকলেও সে তুলনায় ক্লাসরুম নেই। বিভাগগুলোর নিজস্ব ক্লাসরুম থাকলেও প্রয়োজনের তুলনায় সীমিত। কয়েকটা ডিপার্টমেন্টের নিজস্ব ক্লাসরুমও নেই। প্রতিটি বিভাগে কমপক্ষে ৪টি ব্যাচ থাকলেও ক্লাসরুম রয়েছে ১টি করে। ফলে এক ব্যাচের ক্লাস শেষ না হতেই অন্য ব্যাচের শিক্ষার্থীরা এসে দরজায় দাঁড়িয়ে থাকেন।
গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী মো. শাকিল ইসলাম বলেন, আমাদের তো ক্লাসরুমই নেই। সেমিনার কক্ষ তো অনেক পরে। অন্য ডিপার্টমেন্টের সঙ্গে সমন্বয় করে ক্লাস করতে হয়। একটা ল্যাব আছে, কিছু কম্পিউটার আছে। তবু প্রায় অর্ধেক কম্পিউটার বিকল। একে তো প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম, দ্বিতীয়ত অনেকগুলোর বিকল অবস্থা, পার্সোনাল ল্যাপটপ নিয়ে এসে ক্লাস করতে হয়।
বোটানি ডিপার্টমেন্টের এক শিক্ষার্থী বলেন, আমাদের ল্যাব রুমেও শ্রেণি কার্যক্রম চলে। আবার ল্যাব রুমের অবস্থাও জঘন্য। এক ব্যাচ ক্লাস করে, আরেক ব্যাচ বাইরে অপেক্ষা করে। বোটানি ডিপার্টমেন্টে সেমিনার কক্ষ বলতে কিছু নেই।
দর্শন বিভাগের শিক্ষার্থী তামান্না বলেন, আমাদের ক্লাসরুম যে কার, সেটা বিগত তিন বছরেও বুঝলাম না। দেখা যায় ১১৭ নম্বর রুমে স্যার আমাদের ক্লাস নিচ্ছেন। এর মধ্যে উচ্চমাধ্যমিকের শিক্ষার্থীরা এসে দাঁড়িয়ে আছে। বাধ্য হয়ে আমাদের ক্লাস শেষে বেরিয়ে আসতে হয়। আর সেমিনার কক্ষ আয়তনের তুলনায় অনেক ছোট, গাদাগাদি করে বসলেও জায়গা হয় না।
উদ্ভিদবিজ্ঞানের শিক্ষার্থী ফজলে রাব্বি বলেন, রুম সংকটের কারণে ল্যাব রুমে অ্যাক্সেসরিজ, আলমারি ল্যাবরুমের বাইরে রেখে, ল্যাব রুমেই বাধ্য হয়ে ক্লাস করতে হয় আমাদের। কারণ ইন্টারমিডিয়েটের জীববিজ্ঞান ক্লাস দুইটা হয় আমাদের শ্রেণিকক্ষে আর মাস্টার্সের ক্লাস তো আছেই। তবে আমাদের আরেকটা রুম ছিল, যেটা এখন রসায়ন বিভাগ ব্যবহার করে বেশির ভাগ সময়।
এভাবে কক্ষের প্রয়োজনী সরঞ্জাম, আলমারি বাইরে রাখা, এক শ্রেণিকক্ষের শিক্ষার্থীদের বের করে আরেকটি ক্লাস শুরু করা, সেমিনার কক্ষের অভাবসহ নানা সংকট থেকে উত্তরণ পেতে চান প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থীরা। তারা বলছেন, পর্যাপ্ত শিক্ষার্থী ভর্তি নেয়, কিন্তু সুযোগ-সুবিধা না বাড়ালে ভর্তি নিয়ে লাভ কী? এর সমাধানে কারও কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই।
এ বিষয়ে গণিত বিভাগের প্রভাষক আবু তাহের বলেন, শ্রেণিকক্ষের অভাব অনেক আগে থেকেই। এই কলেজে যোগদান করার পর থেকে শুনে আসছি ভবন হবে, ক্লাসরুম হবে। শ্রেণিকক্ষের কারণে ভূগোল ডিপার্টমেন্টের সঙ্গে সমন্বয় করে ক্লাস নিতে হয়। একটা ল্যাব থাকলেও প্রায় অর্ধেক কম্পিউটার বিকল। ফলে শিক্ষার্থীদের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।
উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক হাছিনা আক্তার বলেন, বিভাগের ৪ ব্যাচের জন্য মাত্র একটি শ্রেণিকক্ষ রয়েছে। এ সংকটের কারণে শিক্ষার্থীরা নিয়মিত ক্লাস করতে পারছে না। অন্য বিভাগের ক্লাস রুম শেয়ার করে শ্রেণি কার্যক্রম পরিচালনা করতে হয়। আবার অনেক সময় ল্যাব রুমেও ক্লাস নিতে হয়। একটি ল্যাবরুম থাকলেও নেই প্রয়োজনীয় অ্যাক্সেসরিজ। জায়গার অভাবে ল্যাবের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র বারান্দায় রাখতে হয়। ফলে ল্যাবের কাজও করতে পারছে না শিক্ষার্থীরা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অধ্যক্ষ হাবিবুর রহমান দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, শ্রেণিকক্ষ, ল্যাবসহ নানামুখী সংকটে রয়েছে আমাদের এই প্রাচীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি। বিগত সরকারের আমলে কলেজে একটি ১০ তলা বিজ্ঞান ভবন হওয়ার কথা ছিল। নানা জটিলতার মধ্যে তা আর হয়ে ওঠেনি। সাত কলেজের মধ্যে সবচেয়ে অবহেলিত আমাদের কলেজ। কবি নজরুল কলেজে শুধু নেই আর নেই।
তিনি আরও বলেন, যে ১০ তলা ভবনটি হওয়ার কথা ছিল, এটি নিয়ে আমরা কাজ করেছি। আশা করি এক মাসের মধ্যে ভবনটির কাজ শুরু করতে পারব।