বিতর্কিত জাবি অধ্যাপকের নিয়োগ বাতিল, ডিজি নিয়োগে আলোচনায় যারা
ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব বায়োটেকনোলজির মহাপরিচালক (ডিজি) পদে গত ১৫ অক্টোবর নিয়োগ পান জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক শাহেদুর রহমান। তবে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল তিনি বিশ্ববিদ্যালয়টির বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদের নেতা ছিলেন। বিষয়টি নিয়ে গত ১৮ অক্টোবর ‘ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব বায়োটেকনোলজির ডিজি হলেন বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদের নেতা’ শীর্ষক শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস।
সম্প্রতি মহাপরিচালক পদে এই অধ্যাপকের নিয়োগ বাতিল করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। বিষয়টি দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে নিশ্চিত করেছেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সহকারী সচিব (প্রশাসন-১১ শাখা, বায়োটেকনোলজি সেল ও এনআইবি) মো. ইব্রাহীম মিয়াজী। তিনি বলেন, সম্প্রতি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপককে ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব বায়োটেকনোলজির মহাপরিচালক পদে নিয়োগ দেয়া হলেও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে তার নিয়োগটি বাতিল করা হয়েছে।
বিতর্কিত এই অধ্যাপকের নিয়োগ বাতিল হওয়ার পর মহাপরিচালক পদে নতুন করে নিয়োগের জন্য দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন অধ্যাপকের নাম আলোচনায় রয়েছে। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে তাদের নাম সরকারের সংশ্লিষ্টদের কাছে গেছে বলে জানা গেছে।
তারা দাবি করেন, ‘ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অফ বায়োটেকনোলজির প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে বায়োটেকনোলজি বিভাগের শিক্ষার্থীরা বৈষম্যের শিকার হয়ে আসছে। দেশের জীবপ্রযুক্তি খাতকে একমাত্র একজন দক্ষ জীবপ্রযুক্তিবিদই অগ্রগতির দিকে নিয়ে যেতে পারে। চায়ের দোকান থেকে প্রেসিডেন্ট দপ্তর এমন কোন দপ্তর নাই যেখানে জীবপ্রযুক্তিবিদদের স্কোপ তৈরি হয়নি। কিন্তু কোনো এক অজানা কারণে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বায়োটেকনোলজি বিভাগের শিক্ষার্থীরা সকল যোগ্যতা পূর্ণ করা সত্ত্বেও যথাযথ মূল্যায়িত হচ্ছে না।’
জানা যায়, আন্দোলনকারী শিক্ষক শিক্ষার্থীদের চাওয়া অনুযায়ী এবার ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অফ বায়োটেকনোলজির মহাপরিচালক পদে নিয়োগের জন্য আলোচিতদের মধ্যে রয়েছেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আবদুল্লাহ আল মামুন, একই বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. জাকির হোসেন এবং খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং (বিজিই) ডিসিপ্লিনের অধ্যাপক ড. মো. মোরসালিন বিল্লাহ।
তবে অন্য একটি সূত্রে জানা যায়, ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অফ বায়োটেকনোলজির মহাপরিচালক পদে নিয়োগের জন্য সরকারের পছন্দের তালিকায় রয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জিওলজি বিভাগের একজন অধ্যাপক। বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োটেকনোলজি বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। তারা জানান, বায়োটেকনোলজি বিষয়ে যারা অভিজ্ঞ, তাদের মূল্যায়ন না করে অন্যদের এসব দায়িত্ব দেয়া হলে আমরা হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ব।
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘আমার মনে হয় এই মুহূর্তে বায়োটেকনোলজি বিভাগের যারা আছেন, তাদের মূল্যায়ন করা উচিত। দেশের প্রায় ২৫ থেকে ২৬টি বিশ্ববিদ্যালয়ে বায়োটেকনোলজি বিভাগ আছে, এই সময়ে এসেও যদি তারা মূল্যায়িত না হয় তাহলে মান নিশ্চিতের প্রশ্ন থেকে যাবে।’
এদিকে ডিজি নিয়োগ হওয়ার পরেওে যোগদান না করা এবং পরিচালনা বোর্ড পুনর্গঠনের বিষয়ে জানতে চাইলে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বায়োটেকনোলজির মহাপরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) ড. মো. সলিমুল্লাহ বলেন, আমি এসব বিষয়ে কথা বলতে চাই না। মন্ত্রণালয় বিষয়গুলো নিয়ে মন্তব্য করার মতো যথাযথ কর্তৃপক্ষ।
আরও পড়ুন: ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব বায়োটেকনোলজির ডিজি হলেন বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদের নেতা
এদিকে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বায়োটেকনোলজির পরিচালনা বোর্ড পুনর্গঠন করেছে সরকার। গত ৪ নভেম্বর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সহকারী সচিব মো. ইব্রাহীম মিয়াজী স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে তিন বছরের জন্য পুনর্গঠিত বোর্ডের অনুমোদন দেয়া হয়।
১৮ সদস্য বিশিষ্ট এই বোর্ডের সভাপতি হিসেবে আছেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব অথবা সচিব। এছাড়া সদস্য হিসেবে আছেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের যুগ্মসচিব, আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগের যুগ্মসচিব, কৃষি মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের যুগ্মসচিব, শিল্প মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব, বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদের চেয়ারম্যান এবং বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের চেয়ারম্যান।
অন্য সদস্যদের মধ্যে রয়েছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জিন প্রকৌশল ও জীবপ্রযুক্তি বিভাগের অধ্যাপক ড. জেসমিন, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের পশু প্রজনন ও কৌলিবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. মুনির হোসেন, গাজীপুরের বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. মো. আব্দুল্লাহ ইউসুফ আখন্দ, বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক (রুটিন দায়িত্ব) ড. মো. খালেকুজ্জামান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. ছগীর আহমেদ। এছাড়াও সদস্য-সচিব হিসেবে থাকবেন ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বায়োটেকনোলজির মহাপরিচালক।