০৪ নভেম্বর ২০২৪, ১৯:০০

ঢাকা কলেজে বাড়ছে মোবাইল-সাইকেল চুরি, বাদ যাচ্ছে না মসজিদের জুতাও

চুরির ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ  © টিডিসি ফটো

ঢাকা কলেজের আবাসিক হলে বেড়েই চলেছে চুরির ঘটনা। গত এক সপ্তাহে চুরি হয়েছে আটটি মোবাইল ফোন, একটি সাইকেল ও কয়েক জোড়া মূল্যবান জুতা। এছাড়াও গত মাসে চুরি হয়েছে দুটি মোবাইল ফোন। হলে ধারবাহিক এ চুরির ঘটনায় আতঙ্ক ও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন কলেজের আবাসিক শিক্ষার্থীরা।

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের অভিযোগ কলেজ কর্তৃপক্ষ এবং হল প্রশাসনকে চুরির বিষয়টি জানানো হলেও চুরি প্রতিরোধ ও উদ্ধারে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি তারা। এদিকে কলেজের মসজিদ থেকে নিয়মিত বিরতিতে ঘটছে জুতা উধাওয়ের ঘটনা।

গত শুক্রবার (১ নভেম্বর) সরকারি চাকরির পরীক্ষায় ঢাকা কলেজে পরীক্ষা কেন্দ্রে পরীক্ষা দিতে আসে এক মেয়ে পরীক্ষার্থী। সেখান থেকে পরীক্ষার্থীর একটি ব্যাগ সহ মোবাইল ফোন চুরির ঘটনা ঘটেছে। কলেজ প্রশাসন থেকে ফুটেজ দেখে মোবাইল ফোন উদ্ধারের প্রাথমিক উদ্যোগ নিলেও দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি নেই।

গত ৩০ অক্টোবর বিজয় ২৪ হলের এইচএসসি-২৫ ব্যাচের ঢাকা কলেজ শিক্ষার্থী কাজী ফাহিম আব্দুল্লাহর দুইটি ফোন চুরি হয়েছে। তিনি  বলেন, ৩০ তারিখ ভোর ৫টার দিকে লাস্ট আমি ফোন ব্যবহার করছি। তারপরে সকাল ১২টার দিকে আমি ঘুম থেকে উঠে দেখি আমার ফোন নেই। পরে খোঁজাখুজি করে ফোন পাইনি। তখন আমি ও আমার বন্ধু গেলাম কলেজে সিসিটিভি ফুটেজ কালেক্ট করার জন্য।সিসিটিভি ফুটেজে আমরা দেখি সকাল সাড়ে আটটার দিকে একজন লোক হলের বিভিন্ন রুম চেক করতে থাকে।

‘২০৪ নাম্বার রুম চেক করার পরে আমাদের রুমে এসে দেখে দরজা খোলা। এরপর আমাদের রুমে প্রবেশ করে। সে মোটামুটি ১৫ সেকেন্ড রুমের মধ্যে অবস্থান করে তারপর বের হয়ে সোজা চলে যায়। যাওয়ার সময় সে ব্যক্তি বার বার তার পকেটে হাত দিচ্ছিলো। এই লোককে আগে কখনও কলেজ ক্যাম্পাসে দেখিনি।’

এই শিক্ষার্থী আরও বলেন, ঢাকা কলেজ হলপাড়ায় ভুট্টোর দোকানে সকালে নাস্তা করতে এসে ভুলে খাবারের টেবিলে মোবাইল ফোন রেখে যায় এক ভদ্রমহিলা। পরবর্তীতে ফোনটি আর পাওয়া যায়নি।

আরও পড়ুন: 'রাতের আঁধারে মুছে ফেলা হচ্ছে ঢাকা কলেজের দেয়ালে আঁকা গ্রাফিতি'

ঢাকা কলেজ সমাজবিজ্ঞান বিভাগের খন্দকার ফাহিম থাকেন দক্ষিণায়ন ছাত্রাবাসের ৫০১ নাম্বার রুমে। ৩০ অক্টোবর সকালে তার রুম থেকে ৩টি মোবাইল ফোন চুরি হয়। ভুক্তভোগী ফাহিমের ভাষ্যমতে, আমাদের রুমের সবার ফোন বিছানায় ছিল। সকাল বেলা যেহেতু সবাই ওয়াশরুমে যায় যেহেতু দরজাটা খোলা রাখা হয়। এর মধ্যে সকাল ৮টার দিকে আমার পাশের বেডের বন্ধু সুমন ঘুম থেকে উঠে ফোন খুঁজতে থাকে কিন্তু ফোন পাইনি। 

‘পরে আমাকে ডাক দেয় আমি উঠে দেখি আমার দুইটা ফোন নাই। তখন আমরা ফোন দিলে ফোনে রিং যেতে থাকে কিন্তু কেটে দেয়। এরপরে আমরা নিচে এসে স্যারকে চুরির বিষয়টা বললাম। আমাদের হল পাড়ায় নিরাপত্তার একদমই নাই। সিসিটিভি তো নাই বলা যায়।’ 

তিনি আরও বলেন, হলে সিকিউরিটি গার্ড থাকবে, মেইন গেইটগুলোতে থাকবে কিন্তু সেখানে কোথাও গার্ডের ব্যবস্থা নাই। হলে যারা প্রবেশ করছে তাদের নির্দিষ্ট কার্ড নাই। ফলে কেউ ঢুকলে সে কি আসলেই হলের শিক্ষার্থী এটা বুঝার কোন উপায় নেই। যার ফলে যে যার মতো করে রুমে ঢুকছে নিরাপত্তার ঝুঁকিতে পড়তে হচ্ছে। প্রতিটি হলের সামনে সিকিউরিটি গার্ড ও সিসিটিভি  ব্যবস্থা করার দাবি করেন এ শিক্ষার্থী।

ঢাকা কলেজ দক্ষিণ ছাত্রাবাসের আবাসিক শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ ওমর ফারুক। সাইকেলের তালা ভেঙ্গে সাইকেল চুরি হয়েছে তার। তিনি বলেন, গত ৩০ অক্টোবর হলের ডাইনিংয়ে আমি সাইকেল তালা দিয়ে রেখেছিলাম। আমার মনে হয় সাইকেল টার্গেট করেই চুরি করা হয়েছে। আমার সাইকেলের তালাটা ছিল মোটামুটি নরমাল। আমি সন্দেহ করিনি যে কেউ চুরি করবে। ৩০ তারিখ রাতে আমি দক্ষিণ হলের ডাইনিংয়ে সাইকেল রেখেছিলাম ৩১ তারিখ দুপুর পর্যন্ত আর খেয়াল করা হয়নি। 

‘যখন টিউশনি যাবো সাইকেল নিতে আসছি, এসে দেখি সাইকেলের তালা ভেঙ্গে পড়ে আছে। সাইকেলটা আর নেই। কিন্তু আমার পাশে যে সাইকেলগুলো ছিল সেগুলো ঠিকই আছে। আমরা হল প্রভোস্টকে বলেছি। স্যার বলেছে, বিষয়টা দুঃখজনক। স্যারকে আমরা সিসিটিভি স্থাপনের জন্য দাবি জানিয়েছি। তিনি জানিয়েছেন বলেছে নতুন বরাদ্দ হওয়া ছাড়া সিসিটিভি স্থাপন করা সম্ভব না। হলের আশেপাশে কোথাও সিসিটিভি নেই। স্যার বলেছে মসজিদের সামনে একটি সিসিটিভি আছে সেটার ফুটেজ দেখার জন্য যেতে বলেছে।’

এছাড়াও সেপ্টেম্বর মাসের শেষের দিকে ঢাকা কলেজে পশ্চিম ছাত্রাবাসের আবাসিক শিক্ষার্থী শুভ কুমার কুন্ডুর মোবাইল ফোন চুরি হয়। চুরি যাওয়া ফোন ফেরত পেতে নিউমার্কেট থানায় জিডি করেন তিনি। দেড় মাসের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও ফোনের কোন সন্ধান পাননি বলে জানান কুন্ডু। চুরি যাওয়া ফোন ফেরত পেতে কলেজের হল প্রশাসন থেকে সহযোগিতা পাননি বলে অভিযোগ করেন তিনি।

তালা ভেঙ্গে সাইকেল চুরির বিষয়ে দক্ষিণ হলের প্রভোস্ট আনোয়ার হোসেন বলেন, সিসিটিভি ফুটেজ দেখা হচ্ছে। আসলে ঢাকা কলেজে সরকার থেকে পরিমাণ কর্মচারী পাওয়ার কথা সে পরিমাণ নেই। কলেজের ১৮২ জন কর্মচারীর মধ্যে মাত্র ৩২ জন সরকারি কর্মচারী। বেসরকারি কর্মচারীদের বেতন ছাত্রদের পক্ষ থেকে যে বেতন নেওয়া হয় কলেজের মাধ্যমে তাদের সেই বেতন দেওয়া হয়। সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন কর্মচারী নিয়োগ হয়। 

সেক্ষেত্রে ঢাকা কলেজে কর্মচারী নিয়োগ দেওয়া হলে আমরা নিরাপত্তা প্রহরী বা গার্ড হিসেবে সেখানে দিতে পারি। সরকারের কাছে আমরা কর্মচারী নিয়োগের চাহিদা দিয়ে রেখেছি। জুলাই বিপ্লবের সময় দুষ্কৃতীকারীরা সিসিটিভি ক্যাবলের তার ছিড়ে ফেলেছে। শিক্ষা প্রকৌশলে এগুলো চাহিদার বিষয়ে লেখা হয়েছে আশা করি দ্রুত সময়ের মধ্যে আমরা পেয়ে যাব। ক্যামেরা লাগানোর বিষয়ে তো একটা খরচ রয়েছে। শিক্ষা প্রকৌশলে চাহিদা লেখা হয়েছে যদি দেয় সেক্ষেত্রে ক্যামেরা স্থাপন করা হবে।

এ প্রসঙ্গে ঢাকা কলেজ অধ্যক্ষ এ কে এম ইলিয়াস বলেন, চুরির বিষয়গুলো জানালে আমরা অবশ্যই ব্যবস্থা নিব। সাইকেল চুরির বিষয়ে আমি শুনেছি, ফোন চুরির বিষয়টা শুনিনি। কলেজের ২৮টি সিসিটিভি ডাউন আছে। চুরি প্রতিরোধে হলগুলোর নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় প্রতিটি ফ্লোরে ফ্লোরে সিসিটিভি দেওয়ার বিষয়ে আমরা চিন্তা করতেছি।