৩০ অক্টোবর ২০২৪, ১০:০৮

ডিবি পরিচয়ে ঢাকা কলেজ শিক্ষার্থীকে অপহরণ

আশিকুজ্জামান বাপ্পি  © সংগৃহীত

রাজধানীর নীলক্ষেত মোড় থেকে জোর করে মাইক্রোবাসে উঠিয়ে ঢাকা কলেজের এক শিক্ষার্থীকে ডিবি পরিচয়ে একদল লোক অপহরণ করে। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর নাম আশিকুজ্জামান বাপ্পি। তিনি ঢাকা কলেজের মনোবিজ্ঞান বিভাগের ২০২১-২২ সেশনের শিক্ষার্থী ও কলেজের উত্তর ছাত্রাবাসের ২০৪ কক্ষের আবাসিক শিক্ষার্থী।

মঙ্গলবার (২৯ অক্টোবর) বিকাল ৫ টায় শিক্ষার্থীকে তুলে নিয়ে ৩০ হাজার টাকা অর্থের বিনিময়ে রাত ১টার দিকে ছেড়ে দেন ডিবি পরিচয়ে একদল দূর্বৃত্ত।

বাপ্পির সহপাঠীরা জানান, সন্ধ্যা থেকে বাপ্পিকে খুঁজে পাচ্ছিলাম না। তার ফোন বন্ধ ছিল। পরে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে অপরিচিত নাম্বার থেকে কল দিয়ে তার বোনের কাছ থেকে বাপ্পির মুক্তি দিতে ডিবি পরিচয় দিয়ে ১ লক্ষ টাকা দাবি করে। তার বোন ২০ হাজার টাকা দেয় অপহরণকারী লোকগুলোকে। একপর্যায়ে বাপ্পির বন্ধুদের কাছ থেকেও ১০ হাজার টাকা নিয়ে আশুলিয়ার দিকে ছেড়ে দেয় দুর্বৃত্তরা। বাপ্পিকে আশুলিয়ায় ছেড়ে দিলে সোহেল নামে এক পথচারীর কাছে সাহায্য চান। এ সময় সোহেলের ফোন দিয়ে বাপ্পি তার পরিবার ও বন্ধুদের ঘটনাটি জানায় সে।

সোহেলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, বাপ্পির সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক নেই। হঠাৎ আশুলিয়ায় তার সঙ্গে দেখা হলে আমাকে বলে খুব বিপদে পড়েছি, একটু সহযোগিতা করেন। তখন আমার ফোন দিয়ে তার বন্ধু ও পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। জানতে পেরেছি, বাপ্পিকে নীলক্ষেত থেকে ধরে কালো কাপড় দিয়ে চোখ বেঁধে মুক্তিপণ চান দুর্বৃত্তরা। টাকা দেওয়ার পর তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

বাপ্পির ভগ্নীপতি রিপন বলেন, হঠাৎ রাতে বাপ্পির ফোন থেকে ডিবি পরিচয় দিয়ে ৫০ হাজার টাকার মুক্তিপণ চান এবং টাকা দিলে ছেড়ে দেওয়ার কথা বলে। আমার স্ত্রীর ফোনে ২০ হাজার টাকা ছিল, সঙ্গে সঙ্গে তা দিয়ে দেই। পরে আরও টাকা চাইলে সে রাজি হলেও আমি নিষেধ করি।

অপহরণকৃত শিক্ষার্থী আশিকুজ্জামান বাপ্পি বলেন, আমি লালবাগ টিউশন থেকে কলেজে আসার সময় বিকাল ৫টার পর ‘গভর্নমেন্ট কলেজ অব অ্যাপ্লাইড হিউম্যান সাইন্স’-এর সামনে এক লোক নাম-ঠিকানা জানতে চায়। আমি বলার পর তারা আমাকে গাড়িতে উঠতে বলে। রাজি না হলে জোর করে গাড়িতে তোলে। কোথায় নিয়ে যাচ্ছে এটা আমি জানতাম না। এরপর আমাকে টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দেওয়ার কথা বলে। কখনো এক লাখ আবার কখনও ৫০ হাজার টাকা চায়। পরে আমার ফোন দিয়ে আপুকে টাকার কথা বললে ২০ হাজার পাঠায়। তারা জোর করে আমার ফোনের বিকাশ পিন নিয়ে অন্য জায়গা থেকে টাকা তুলে আনে।

তিনি আরও বলেন, সাভারের একটি রুমে আমাকে আটকে রাখে। সেখান থেকে চোখ বেঁধে আবার অন্য জায়গায় নিয়ে গাড়ি থেকে ফেলে দেয়। কলেজে ফিরে আসার জন্য ৫০০ টাকা দেয় তারা। আমি গাড়ির নম্বর দেখার চেষ্টা করলে শেষ দুটি সংখ্যা (২৪) দেখতে পাই। আর আমার কাছে থাকা মানিব্যাগ থেকে টাকা ও মোবাইল ফোন কেড়ে নেয় তারা।

এ বিষয়ে নিউ মার্কেট থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. ফিরোজ আহমেদ বলেন, থানায় একটি জিডি করেছে বাপ্পির ক্যাম্পাসের বড় ভাই ও বন্ধুরা। ঘটনাটি আমরা শুনেছি এবং জানতে পেরেছি যে তার কাছ থেকে ২০ হাজার টাকা নিয়েছে। আজকে সকাল থেকে তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।

উল্লেখ্য, এ দিকে এই ঘটনায় বাপ্পি পূর্বে হলে থেকে ছাত্রলীগের কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার সন্দেহে তাকে আটক করার কথা বলেন দূর্বৃত্তরা। এবং বাপ্পির বন্ধুর কাছে টাকা চাওয়ার একটি কল রেকর্ড বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, বাপ্পিকে গালাগালি দিয়ে টাকা ম্যানেজ করতে বলা হয়। বাপ্পি তার বন্ধুকে কল দিলে ১ লাখ টাকা চাই দূর্বৃত্তরা। তবে তার বন্ধু ১০ হাজার টাকা দিতে রাজি হন।