মেরিটাইম ইউনিভার্সিটির মাত্রাতিরিক্ত ফি’তে শিক্ষার্থীদের নাভিশ্বাস
দেশের ৩৭তম পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেরিটাইম ইউনিভার্সিটির সেমিস্টার ফি অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনায় দুই-তিন গুণ বেশি। দুই দফা সেমিস্টার ফি কমিয়েও সেমিস্টারভেদে ১২-১৫ হাজার টাকা ফি পরিশোধ করতে হয় শিক্ষার্থীদের। এতে নাভিশ্বাস উঠছে শিক্ষার্থীদের। অতিরিক্ত সেমিস্টার ফি হওয়ার কারণে অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী মেরিটাইম ইউনিভার্সিটি ছেড়ে বেছে নেন অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়।
২০১৩ সালে প্রতিষ্ঠিত বিশেষায়িত সরকারি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রেডিট ফি ৩০০ টাকা। প্রতি সেমিস্টারে ক্রেডিট ফি বাবদ ৪ হাজার ৫০০ থেকে ৫ হাজার ৫০০ টাকা পরিশোধ করতে হয়। পরীক্ষা ফি বাবদ পরিশোধ করতে হয় ১ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকা। এ ছাড়া এডুকেশন এন্যান্সমেন্ট ফি ১ হাজার টাকা, স্টুডেন্ট ওয়েলফেয়ার ফি ১ হাজার টাকা, ক্লাব ফি ৩০০, গ্রেড শিট ফি ৩৫০, আইসিটি সার্ভিস ফি ৩০০, লাইব্রেরি ফি ৬০০, মেডিকেল ফি ৫০০, স্পোর্টস ফি ১২৫ ও ট্রান্সপোর্ট ম্যানেজমেন্ট ফি ৮০০ টাকা নেওয়া হয়। কয়েকটি রুটে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস থাকলেও সীমিতসংখ্যক শিক্ষার্থী তা ব্যবহার করেন। কিন্তু ট্রান্সপোর্ট ম্যানেজমেন্ট ফি শিক্ষার্থীদের পরিশোধ করতে হয়।
আরও পড়ুন: প্রতিষ্ঠার ১১ বছরেও স্থায়ী ক্যাম্পাস পায়নি মেরিটাইম ইউনিভার্সিটি
বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সেমিস্টার প্রতি গড় খরচ পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, বুয়েট ৩ হাজার ৫০০, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় ৪ হাজার ৫০০, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ৫ হাজার ৫০০, বুটেক্স ৪ হাজার, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় ৩ হাজার , যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ৪ হাজার, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় ৪ হাজার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ৪ হাজার ৫০০, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ৪ হাজার ৫০০, হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ৫ হাজার, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় ৫ হাজার, কুয়েট ২ হাজার, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ৩ হাজার ৫০০ টাকা। কিন্তু এসব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া কয়েকটি বিশেষায়িত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সেমিস্টার ফি তুলনামূলক আরও বেশি। বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস (বিইউপি), বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অ্যাভিয়েশন অ্যান্ড অ্যারোস্পেস বিশ্ববিদ্যালয়ে সেমিস্টার ফি আনুমানিক ১৫-২০ হাজার টাকা।
এ বিষয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেরিটাইম ইউনিভার্সিটি ট্রেজারার বলেন, ‘ইউজিসির বাজেটের সঙ্গে আমাদের কিছু আয় দেখাতে হয়। আমরা সেটা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সেমিস্টার ফিসহ অন্যান্য কিছু খাত থেকে পেয়ে থাকি। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব ক্যাম্পাস না থাকায় প্রতি মাসে একটা মোটা অঙ্কের টাকা খরচ হয় ভবন ভাড়ায়। এ ছাড়া বিশেষায়িত কিছু সুযোগ-সুবিধার মধ্যে প্রতিবছর একটি স্টাডি ট্যুরের কারণে আমাদের খরচ বেশি হয়। তারপরও আমরা চেষ্টা করছি সেমিস্টার ফি কমানোর। পুরোটাই ইউজিসির ওপর। ইউজিসি আমাদের বরাদ্দ দিলে সেমিস্টার প্রতি খরচ কমানোর ক্ষেত্রে কোনো বাধা নেই।’ এ ছাড়া সেমিস্টার প্রতি খরচ বেশি হওয়ার পেছনে শিক্ষার্থী সংখ্যা কম থাকাকেও কারণ হিসেবে উল্লেখ করেন তিনি।
কয়েকটি রুটে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস থাকলেও সীমিতসংখ্যক শিক্ষার্থী তা ব্যবহার করেন
মেরিটাইম ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা বেশ কিছুদিন ধরেই সেমিস্টার ফি কমানোর জন্য দাবি জানিয়ে আসছেন। বিষয়টি আমলে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ফি সংশোধনের জন্য কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রায় দুই মাস হয়ে গেলেও কমিটি এখনো প্রতিবেদন না দেওয়ায় শিক্ষার্থীরা উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি জমা দিয়েছেন এবং ইউজিসি থেকে ফি কমানোর ব্যাপারে নির্দেশনা না আসা পর্যন্ত চলমান সেমিস্টারের ফি দেওয়া থেকে বিরত থাকবেন বলে জানিয়েছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়টির চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী আতিক ইশরাক রিজভী বলেন, সরকার বিশেষায়িত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে মেরিটাইম ইউনিভার্সিটি তৈরি করেছে। সে ক্ষেত্রে বাজেটও বিশেষায়িত হওয়া স্বাভাবিক। কিন্তু পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় হয়েও আমাদের ওপর অতিরিক্ত সেমিস্টার ফির বোঝা চাপিয়ে দেওয়া বৈষম্য। আমরা চাই সরকার এ বিষয়ে সুনজর দেবে।’
আরও পড়ুন: মেরিটাইম ইউনিভার্সিটির নারী শিক্ষার্থীকে অনৈতিক প্রস্তাব দেওয়ার অভিযোগ শিক্ষকের বিরুদ্ধে
চতুর্থ বর্ষের আরেক শিক্ষার্থী নেয়ামুর রহমান সৌরভ বলেন, ‘আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষার্থী অতিরিক্ত সেমিস্টার ফির জোগান দিতে টিউশন, পার্ট টাইম জব ও অন্যান্য কাজ করেন। যা আমাদের ওপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে। এ ছাড়া হল ফি অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনায় অনেক বেশি ও সিট সংকুলান না হওয়ায় মেস ভাড়া করে থাকা শিক্ষার্থীদের আরও বেশি চাপ সামলাতে হয়। সেমিস্টার ফি কমিয়ে আনা হলে শিক্ষার্থীদের ওপর চাপ কমে যাবে ও নির্বিঘ্নে পড়াশোনা করতে পারবে। আশা করি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের এই বিষয়গুলো বিবেচনা করে দ্রুততার সঙ্গে ইউজিসি ও প্রয়োজনে সরকারের উচ্চপর্যায়ে যোগাযোগ করবে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য রিয়ার অ্যাডমিরাল আশরাফুল হক চৌধুরী বলেন, ‘আমি ইউজিসির চেয়ারম্যান মহোদয়ের সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছি। দ্রুত বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণ ও অন্যান্য সমস্যা নিরসনে তিনি আমাদের সহযোগিতা করবেন।’