দাবি মেনে না নেওয়ায় তীব্র কর্মসূচির ঘোষণা সাত কলেজ শিক্ষার্থীদের
উচ্চশিক্ষায় বিভিন্ন সংকট থেকে মুক্তি পেতে স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবিতে আন্দোলন করছেন ঢাবি অধিভুক্ত সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা। গত সোমবার (২১ অক্টোবর) সাইন্সল্যাবে অবস্থান কর্মসূচি থেকে সরকারের কাছে দাবি মেনে নিতে ২৪ ঘন্টার আল্টিমেটাম দেন তারা। তবে দাবি মেনে না নেওয়ায় আজ থেকে তীব্র কর্মসূচি পালন করবে সাত কলেজ শিক্ষার্থীরা।
সরকারের পক্ষ থেকে সাত কলেজকে স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় রুপান্তরের দাবির বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় আজ বুধবার (২৩ অক্টোবর) সকাল ১১ টা থেকে থেকে তীব্র কর্মসূচির পালন করবে বলে জানিয়েছেন সাত কলেজ সংষ্কার আন্দোলনের প্রতিনিধিরা।
তারা বলছেন দাবি মেনে নিলে এক মিনিটের মধ্যে কর্মসূচি প্রত্যাহার করা হবে। সরকারের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ সিদ্ধান্ত না আসা পর্যন্ত আন্দোলন চলমান রাখার ঘোষণা দিয়েছেন তারা।
আল্টিমেটাম শেষে আন্দোলন চলমান রাখার বিষয়ে সাত কলেজ সংষ্কার আন্দোলনের অন্যতম পৃষ্ঠপোষক আব্দুর রহমান বলেন, গতকাল শিক্ষা সচিব মহোদয় আমাদের ফোন দিয়েছিলেন, শুনেছেন আমাদের সমস্যাগুলি। সমাধানের পথ হিসেবে তিনি সেই অনুপাতে আবারো আমাদের ফোন দিয়ে জানাবেন বলেছিলো। কিন্তু এখন পর্যন্ত তাদের পক্ষ থেকে কোন কথা আসেনি। সেজন্য আমাদের আবার পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচিতে ফিরে যেতে হচ্ছে।
আজ সকাল ১১ টা থেকে শিক্ষার্থীদের অবস্থান কর্মসূচি ও আলোচনা সভা রাস্তা অবরোধ করে চলতে থাকবে। আমাদের তো দেয়ালে পিঠ থেকে গেছে পিছনে ফেরার সুযোগ নেই। যেখানে লক্ষ লক্ষ শিক্ষার্থী ঐক্যবদ্ধ সেখানে ভুল সিদ্ধান্ত নেওয়ার অপশন নেই। সামষ্টিক সিদ্ধান্তের পথে রাষ্ট্রকে আসতে হবে। আমরা জানি রাষ্ট্রে অনেক সংকট চলছে। সংকট থেকে সমাধানের জন্য হলেও শিক্ষার্থীদের মুক্তি দিতে হবে।
শিক্ষার্থীদের মুক্তি দিলে রাষ্ট্র অটোমেটিক ভালো চলবে। সকাল ১১টা থেকে আমরা কর্মসূচি পালন করবো। ১১টা ১ মিনিটে যদি ওপর থেকে আমাদের কাছে ফোন আসে, এবং তাদের কথায় আমাদের সমাধান করে ফেলেছে তাহলে আমরা ১১টা ২ মিনিটে আমাদের কর্মসূচি প্রত্যাহার করবো। অর্থ্যাৎ আমরা আর রাস্তায় বসতে চাচ্ছি না। আমাদের পরিকল্পনা হচ্ছে সর্বোচ্চ সিদ্ধান্ত না আসা পর্যন্ত মাঠ ছাড়া কোন অপশন শিক্ষার্থীদের নেই।
তবে দাবির বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় আজ থেকে তীব্র কর্মসূচির পালন করবেন বলে জানিয়েছেন সাত কলেজ সংষ্কার আন্দোলনের প্রতিনিধিরা।
সাত কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ের রুপান্তরের জন্য রুরেখার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ভালো এবং মন্দ দুইটার মধ্যে বেছে নেওয়ার সক্ষমতা শিক্ষার্থীদের থাকে।থাকে বলেই আজকের এই আন্দোলন।আমরা স্বায়ত্ত্বশাসিত বিশ্ববিদ্যালয় বা ফ্যাকাল্টি ভিত্তিক সিস্টেমের জন্য আবেদন করবো। এরপরে রাষ্ট্রের উর্ধর্তন কর্তৃপক্ষ আমাদের পথ দেখাবেন। আমরা বলছি তারা তিন বা চারটি মডেল দাড় করাবেন, সবচেয়ে ভালো মডেলটি শিক্ষার্থীরা বেছে নিবে। বিভিন্ন ধরণের স্টেকহোল্ডার আছেন, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ও গবেষকরা আছেন, রাষ্ট্র আছেন, সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় একটা সিদ্ধান্ত আসতে পারেন। তবে সর্বশেষ সিদ্ধান্ত শিক্ষার্থীদের বেছে নিতে হবে যে কোনটা ভালো হবে।
সাত কলেজ সংষ্কার আন্দোলনের বদরুন্নেসা মহিলা কলেজের অন্যতম প্রতিনিধি নুসরাত জাহান বলেন, সরকার বা ঢাবি থেকে আমাদের এখনো পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় রুপান্তরের কোন সিদ্ধান্ত আসে নি। গতকাল রাত ১২ টা পর্যন্ত আল্টিমেটামের সময় বেধে দেওয়া হয়েছিল। সরকারের পক্ষ থেকে উত্তর আসে নাই। এজন্য আজ থেকে আমাদের পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচি প্রকটভাবে পালন করা হবে।
বুধবারের (২৩ অক্টোবর) কর্মসূচির বিষয়ে সাত কলেজ সংষ্কার আন্দোলনের অন্যতম পৃষ্ঠপোষক জাকারিয়া বারি সাগর বলেন, পূর্বঘোষিত কর্মসূচি মোতাবেক ২৩-১০-২০২৪ (বুধবার) সকাল ১১ টায় আমরা ঢাকা কলেজের সামনে অবস্থান কর্মসূচী পালন করবো। আমাদের দাবীর সম্পূর্ণ বিবরণ ঘটনাস্থলে আপনাদের কে আমরা দিয়ে দিব। অনুগ্রহ করে আপনারা সুনির্দিষ্ট তথ্য সম্প্রচার করবেন।
উল্লেখ্য, ২০১৭ সালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশক্রমে রাজধানীর ঐতিহ্যবাহী সাত কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করা হয়। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ অধিভুক্তের আগের পরে কলেজেগুলোতে শিক্ষার মানের কোন উন্নতি হয়নি। বর্তমানে সাত কলেজে মানসম্পন্ন শিক্ষাদানের পরিবেশের অভাব, মানসম্পন্ন শিক্ষকের অভাব, অবকাঠামোগত সংকট, ল্যাব ও গবেষণার সংকট, শ্রেণিকক্ষের অপ্রতুলতা, আবাসন ও পরিবহন সমস্যা, একাডেমিক ক্যালেন্ডার ও সিলেবাস না থাকা, পরীক্ষা ও পরীক্ষার ফলাফল যথাসময়ে প্রকাশ না করা সহ অসংখ্য সংকটে জর্জরিত।