শিক্ষক অপসারণের দাবিতে ইবি শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ, কুশপুত্তলিকা দাহ
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. হাফিজুল ইসলামের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ এনে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তাকে বহিষ্কারের দাবিতে বিক্ষোভ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের মেইন গেটে অভিযুক্ত ওই শিক্ষকের কুশপুত্তলিকা টাঙিয়ে জুতা নিক্ষেপ এবং আগুনে পুড়িয়ে দিয়েছে বিভাগের শিক্ষার্থীরা।
মঙ্গলবার (২২ অক্টোবর) বেলা ১২ টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের রবীন্দ্র-নজরুল কলা ভবনের সামনে শিক্ষার্থীরা এ বিক্ষোভ কর্মসূচি শুরু করেন। পরে ক্যাম্পাসের মীর মোশাররফ হোসেন অ্যাকাডেমিক ভবনের সামনে জড়ো হয়ে শিক্ষকের বিরুদ্ধে স্লোগান দেন তারা। এসময়ে ভবনের ভেতরে অর্থনীতি বিভাগের সভাপতির কক্ষে তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের বিষয়ে গঠিত তদন্ত কমিটির নিকট নিজ বক্তব্য উপস্থাপন করার কথা ছিল সহকারী অধ্যাপক হাফিজের, কিন্তু তিনি উপস্থিত হননি।
বিভাগের শিক্ষার্থীরা জানান, তদন্ত কমিটির সাক্ষাৎকারের জন্য হাফিজের ক্যাম্পাসে আসার কথা ছিল। সেই পরিপ্রেক্ষিতে তারা কর্মসূচি ঘোষণা করেন। এসময় শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ হয়ে মেইন গেট আটকে তার কুশপুত্তলিকাও দাহ করেন। বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা জানান, শিক্ষককে যদি আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা না হয়, তাহলে এই আন্দোলন চলমান থাকবে। আমাদের দাবি ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে হবে। যতক্ষণ পর্যন্ত ন্যায়বিচার হবে না ততক্ষণ পর্যন্ত ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ পরিবার তাকে এই ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত এবং বিভাগে বয়কট করা হয়েছে। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে শিক্ষার্থীদের আশা আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন হবে বলে আশাবাদী শিক্ষার্থীরা।
ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগগুলোর মধ্যে নারী শিক্ষার্থীদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ, কথার অবাধ্য হলে পরীক্ষায় নাম্বার কম দেওয়া, ক্লাসে মেয়েদের জামা কাপড় নিয়ে কথা বলা, নর্তকী, পতিতা, বাজারের মেয়ে বলে গালিগালাজ, শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে হেনস্তা, ফ্যানের সঙ্গে ঝুলিয়ে মারার ও ছাদ থেকে ফেলে দেওয়ার হুমকি, ব্যক্তিগত রুমে নিয়ে গিয়ে শিক্ষার্থীদের শারীরিকভাবে নির্যাতন, দাড়ি থাকলে শিবির ট্যাগ দিয়ে হেনস্তা, ইচ্ছাকৃতভাবে ফলাফল খারাপ করে দেওয়া, অন্যান্য শিক্ষকদের নাম নিয়ে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন বিষয়ে অপমান, অপদস্থ এবং চাপ প্রয়োগ।
এ বিষয়ে বিভাগের শিক্ষক সহকারী অধ্যাপক এ এইচ এম নাহিদ বলেন, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আমি বিব্রত। যেহেতু তদন্তাধীন বিষয় এবং কমিটিতে আমাকেও ডাকা হয়েছিল, আমি আর মন্তব্য করতে চাচ্ছি না।
জানতে চাইলে তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. কাজী মোস্তফা আরীফ জানান, ‘শিক্ষার্থীরা রবীন্দ্র নজরুল ভবনে ১২ টার দিকে আন্দোলন শুরু করে মীর মোশাররফ ভবনের নিচে চলে আসলে আমি বিষয়টি জানতে পারি। তারা কুশপুত্তলিকা পুড়িয়েছে বলেও শুনেছি। ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে গতকাল শিক্ষার্থীদের বক্তব্য শুনেছি। আমাদের তদন্ত কমিটির কার্যক্রম প্রায় শেষের দিকে। পরবর্তী সিদ্ধান্ত আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে হবে।’
এর আগে গত ৭ অক্টোবর ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থী হেনস্তা, আপত্তিকর মন্তব্য, শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনসহ ২৭ দফা অভিযোগ তুলে অপসারণের দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফটক আটকে ঘণ্টাব্যাপী বিক্ষোভ করেন বিভাগের শিক্ষার্থীরা। পরে তারা উপাচার্যের কাছে লিখিত ও মৌখিক অভিযোগ করলে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন ইবি উপাচার্য।