ববির ক্যাফেটেরিয়ায় খাবারের দাম দ্বিগুণ, নোংরা পরিবেশ
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) ক্যাফেটেরিয়ায় দীর্ঘদিন ধরেই খাবারের মূল্যতালিকার অতিরিক্ত দাম নেওয়ার অভিযোগ আছে। ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে প্রথম দিন পদার্পণ করার পর আরও একধাপ দাম বাড়িয়ে প্রায় দ্বিগুণ করে দিয়েছেন ক্যাফেটেরিয়ার ম্যানেজার। নোংরা পরিবেশ আর পরিমাণে কম দেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে।
মূল্যতালিকা অনুযায়ী মাছের দাম ২৭ টাকা, কিন্তু রুইমাছ বিক্রয় করা হচ্ছে ৫০ টাকা এবং পাঙ্গাশ ৪০টাকা। ব্রয়লার মুরগির দাম দেওয়া আছে ২৭ টাকা, বিক্রয় করা হচ্ছে ৪০ টাকা। যার এক টুকরো দিয়ে ভাত খাওয়া সম্ভব নয়। ১০০ টাকা প্লেট মোরাগ পোলাও বিক্রয় করা হলেও পরিমাণে খুবই কম। ভাতের প্লেট বিক্রয় করা হয় ১০ টাকা, যেখানে হোটেলে অতিরিক্ত প্লেটের দাম ৫ টাকা করে। সমুচার দাম ৭ টাকা দেওয়া থাকলেও বিক্রয় করা হচ্ছে ১০ টাকা। রং চায়ের দাম ৪ টাকা হলেও পাওয়া যায় না, পক্ষান্তরে ১৫ টাকায় পাওয়া যায় কফি। বলতে গেলে বাধ্য হয়েই চায়ের বদলে বেশি দামের কফি খেতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। ক্যাফেটেরিয়াতে ডিমসহ কম দামের খাবারগুলো পাওয়া যায় না। সব সময়ই থাকে বেশি দামের খাবারগুলো। চার্টে দেওয়া খাবার না রেখে রাখা হয় বার্গার, স্যান্ডউইচসহ দামি খাবারগুলো, যা সাধারণ শিক্ষার্থীদের জন্য খাওয়া কষ্টকর।
ক্যাফেটেরিয়ায় ছোলা ওপর ছত্রাক পড়ে আছে
সরেজমিনে দেখা যায়, দীর্ঘদিন ব্যবহৃত কালো, নষ্ট তেল ঢাকনা ছাড়া পড়ে আছে। যা পরবর্তী সময়ে রান্নার কাজে ব্যবহৃত হবে। অনেক দিনের পুরোনো ছোলাবুট পড়ে আছে, যার ওপর ছত্রাক পড়ে আছে। ভাজা মাছ, তেল, মসলা সবকিছুই ঢাকনা ছাড়া নোংরা পরিবেশে পড়ে আছে। রান্নাঘর, পরিবেশনের জায়গাও অপরিচ্ছন্ন, স্যাতসেঁতে ও নোংরা। ১০ হাজার শিক্ষার্থীর বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাফেটেরিয়া একজন বাবুর্চিসহ মাত্র চার-পাঁচজন লোক দিয়ে চলছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী তামিম ইকবাল রাজু বলেন, ক্যাফেটেরিয়ায় খাবারের দাম তো বেশি নেয়। তারপর ভাতে যে চাল ব্যবহার করা হয় তা খুবই নিম্নমানের। প্রায়ই বাসিপচা ভাত খেতে হয়। ভাত কোনো দিন শক্ত আবার, আবার কোনো দিন একদম নরম হয়।
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে শিক্ষার্থী ওয়াহিদ-উন নবী বলেন, ক্যাফেটেরিয়ার মাছ-মাংসের আকার খুবই ছোট, যা দিয়ে ভাত খাওয়া যায় না। একই দামে হোটেলে যে খাবার পাওয়া যায় তার মান ক্যাফেটেরিয়ার চেয়ে ভালো, মাছ-মাংসের সাইজও বড়।
শিক্ষার্থীরা জানান, তারা বেশির ভাগ সময়ই ক্যাফেটেরিয়াতে না খেয়ে বাইরের হোটেলে খান। নবাগত শিক্ষার্থীরা সবকিছু চিনে না বা জানে না বলে ক্যাফেটেরিয়ায় খান।
বারবার ব্যবহারের ফলে কালো বর্ণ ধারণ করেছে তেল
টিএসসির পরিচ্ছন্নতাকর্মী শিউলি আক্তার বলেন, ‘আমি দীর্ঘদিন ধরে এখানে চাকরি করছি। এর আগে যারা ক্যাফেটেরিয়া পরিচালনা করতেন, তারা পরিচ্ছন্নতাকর্মী রাখতেন। কিন্তু বর্তমানে ক্যাফিটেরিয়ায় পরিচ্ছন্নতাকর্মী নেই। তাই পরিবেশ নোংরা থাকা স্বাভাবিক। আমার একার পক্ষে তো সব কাজ করা সম্ভব না। ক্যাফেটেরিয়ায়র যে ময়লা হয় তা আমার পরিষ্কার করার দায়িত্বও আমার না। কথা ছিল আমাকে দুপুরে একবেলা ক্যাফেটেরিয়াতে খাওয়াবেন, আগে যারা ছিল তারাও খাওয়াত। কিন্তু বর্তমান ম্যানেজার খাওয়াচ্ছে না।’
এ বিষয় জানতে চাইলে ক্যাফেটেরিয়ার ম্যানেজার মো. মামুন বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকলে ক্যাফেটেরিয়াও বন্ধ থাকে। তাই বাবুর্চিসহ লোকজন চলে যায়। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির ফলে নির্ধারিত মূল্যে বিক্রি করা সম্ভব না। তাই আমি চিন্তা করেছি ক্যাফেটেরিয়া ছেড়ে দেব।’