২১ অক্টোবর ২০২৪, ১১:০৭

পড়ুয়াদের ভাবনায় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় দিবস

তানজিদ শুভ্র, নওশীন ফারহান নওমী, সাদিয়া সামাদ দীপ্তি ও জুবায়ের আহমেদ সাব্বির  © টিডিসি

শিক্ষার্থী তালিকাভুক্তি অনুসারে দেশের বৃহত্তম বিশ্ববিদ্যালয়- জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। বর্তমানে দেশের প্রায় ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থীর উচ্চশিক্ষা গ্রহণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। ১৯৯২ সালের ২১ অক্টোবর গাজীপুরের বোর্ড বাজারে প্রতিষ্ঠিত হয় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। নানা অভিযোগ, অভিমান থাকলেও এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি আবেগ, ভালোবাসা আর মায়া জড়িয়ে আছে দেশের বিপুল শিক্ষার্থীর হৃদয়ে। বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উপলক্ষে দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে অভিমত জানিয়েছে অধিভুক্ত কলেজে পড়ুয়া কয়েকজন শিক্ষার্থী।

 

অবমূল্যায়ন থেকে মুক্তি পাক জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়

শিক্ষার্থী তালিকাভুক্তি অনুসারে দেশের বৃহত্তম শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। তবে স্বায়ত্তশাসিত এই বিশ্ববিদ্যালয়টিকে অনেকে এমনভাবে ছোট করে দেখে যে পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা নিজেদের পরিচয় দিতে হীনমন্যতায় ভোগে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়কে ছোট করে দেখার মানসিকতা অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর চেয়ে খোদ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদেরই বেশি। পড়ুয়াদের মাঝে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে জানার ঘাটতি থাকতে পারে কিংবা দায়িত্বশীলদের জানানোর আগ্রহের কমতি থাকতে পারে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ও ইউজিসি অধিভুক্ত, কিন্তু অনেক সময় দেখা যায় বিভিন্ন অনুষ্ঠানে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় আলাদা করে সম্বোধন করে তফাত সৃষ্টি করা হয়। অথচ অনেকেই একজন শিক্ষার্থীকে মূল্যায়ন করেন অধ্যয়নরত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নাম শুনে। ভর্তি পরীক্ষায় অল্প নম্বরের ব্যবধানে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ না পেয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত কলেজে ভর্তি হওয়া একজন শিক্ষার্থী এসব প্রেক্ষিতে নিজেকে ছোট মনে করে অন্য বন্ধুদের তুলনায়। এমনও হয় শিক্ষকরাও ভাবেন তুলনামূলক কম মেধাবী বলেই এখানে ভর্তি হয়েছে। কখনো কখনো শিক্ষার্থীর পূর্বের শিক্ষাক্রমের ফলাফল দেখে শিক্ষকও অবাক হন। সংকীর্ণ চিন্তাভাবনা থেকে বের হয়ে মেধার মূল্যায়নে এই বৈষম্য নিরসন সময়ের দাবি।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় মুক্তি পাক অবমূল্যায়ন ও অবহেলা থেকে। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম ছড়িয়ে পড়ুক দেশব্যাপী।

তানজিদ শুভ্র, উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগ, ভাওয়াল বদরে আলম সরকারি কলেজ, গাজীপুর।

 

চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে এগিয়ে যাক জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা, সংস্কৃতি এবং সামাজিক উন্নয়নের একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের এই বিস্তৃত পরিসরের মাঝেও যেন ঘাটতি রয়ে গেছে। কিছু বিষয়ে অগ্রগতির প্রয়োজন আবশ্যক। প্রথমত, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার গুণগত মান বাড়াতে উদ্যোগী হতে হবে। বর্তমান সময়ে, প্রতিযোগিতামূলক চাকরির বাজারে আমাদের প্রস্তুতি নিয়ে আসা একটি চ্যালেঞ্জ। বিশ্ববিদ্যালয়কে আধুনিক শিক্ষার পাশাপাশি বাস্তব জীবনের দক্ষতা বিকাশের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। অভিজ্ঞ ও প্রশিক্ষিত শিক্ষকদের উপস্থিতি আমাদের শিক্ষার মানকে আরও উন্নত করবে।

গবেষণার ক্ষেত্রেও অধিক সুযোগের প্রয়োজন। আমাদের মধ্যে অনেক সম্ভাবনাময়ী শিক্ষার্থী রয়েছে, যারা গবেষণায় অংশগ্রহণ করতে ইচ্ছুক। গবেষণা কেন্দ্রগুলোতে প্রয়োজনীয় সহায়তা এবং স্কলারশিপের ব্যবস্থা করা হলে আমরা আরও উদ্ভাবনী চিন্তাভাবনা করতে পারব।

কিন্তু, কিছু বিষয় আমাকে হতাশ করে। যেমন, সেশনজট আমাদের পড়াশোনায় বিঘ্ন ঘটায় এবং সময়মতো গ্রাজুয়েশন শেষ করতে অসুবিধা তৈরি করে। সিলেবাস ও পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের মধ্যে অসঙ্গতি আমাদের পড়াশোনায় বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে। ছাত্রদের মনোবল বৃদ্ধি করার জন্য ফলাফল প্রকাশে দেরি এবং প্রশাসনিক জটিলতা দূর করতে হবে। এ ছাড়া, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে যোগাযোগের অভাব শিক্ষার্থীদের সমস্যা সমাধানে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে।

সবশেষে, আমি আশা করি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে আমাদের শিক্ষার পরিবেশকে আরও উন্নত করবে। আমাদের ভবিষ্যৎ দেশের উন্নয়নকে সমর্থন করতে পারে, যদি আমরা একসাথে কাজ করি। আশা করি, আমাদের এই আশা ও হতাশার কথাগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্টদের কাছে পৌঁছাবে এবং পরিবর্তনের সূচনা হবে।

নওশীন ফারহান নওমী, রসায়ন বিভাগ, সরকারি আজিজুল হক কলেজ, বগুড়া।

 

শিক্ষার্থীদের স্বপ্নপূরণে উদ্যোগী হোক জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে পড়াশোনা করা অনেক শিক্ষার্থীর মাঝে হতাশা একটি সাধারণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। দীর্ঘ সেশনজট, সময়মতো পরীক্ষা না হওয়া, ফলাফল প্রকাশে বিলম্ব, ভুতুড়ে ফলাফল সহ নানা কারণে শিক্ষার্থীরা শিক্ষাজীবন নিয়ে হতাশ হয়ে পড়ে। তারা অনেকেই পরিকল্পিত সময়ে চাকরি শুরু করতে পারে না বা উচ্চতর শিক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিতে বাধার সম্মুখীন হয়। 

এই ধরনের পরিস্থিতি শিক্ষার্থীদের স্বপ্ন ভঙ্গ করে এবং তাদের মানসিক চাপ বাড়িয়ে তোলে। পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে অনেকেই হতাশায় ডুবে যায়। প্রায় ৩৫ লক্ষ শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ জড়িয়ে আছে এই জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে। শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎকে আরও উজ্জ্বল করতে এবং এই হতাশা কাটিয়ে উঠতে প্রয়োজন সময়মতো সঠিক পদক্ষেপ ও শিক্ষাব্যবস্থার সংস্কার।

শিক্ষার্থীরা একটি সুন্দর ও নিশ্চিত ভবিষ্যতের আশায় কঠোর পরিশ্রম করে, তাই জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উচিত শিক্ষার্থীদের সেই আশা পূরণে যথাসম্ভব দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা।

সাদিয়া সামাদ দীপ্তি, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, ভাওয়াল বদরে আলম সরকারি কলেজ, গাজীপুর।

 

আস্থা ফিরুক জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি

জীবনের খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা সময়ে এসে আমরা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পা রাখি। মনের মধ্যে বিশালতার স্বপ্ন, বুকের মাঝে চলমান আবেগ নিয়েই শুরু করে ছিলাম এই জার্নি। কোভিড-১৯ পরবর্তী সময় হওয়ায় ভেবেই নিয়ে ছিলাম এই জার্নিটা অল্প সময়ে শেষ হয়ে যাবে। আজ ২ বছর ৪ মাস পেরিয়ে যাচ্ছে কিন্তু ২য় বর্ষের পরীক্ষার রুটিন এখনো পেলাম না। অপেক্ষা যেন দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হতে চলছে। নির্দিষ্ট কোন বাৎসরিক ক্যালেন্ডার রয়েছে বলে সন্দিহান আমরা। দেশের লাখ লাখ শিক্ষার্থীর স্বপ্ন ও আবেগ মিশে থাকা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় যেন আমাদের জন্য অভিশপ্ত অধ্যায়। শিক্ষা জীবন শেষ করে কর্ম জীবনে পা রাখতে ৪ বছরের বদলে ৬/৭ বছরও লেগে যাচ্ছে শিক্ষার্থীদের।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী হিসেবে হতাশার সঙ্গে রয়েছে অনেক প্রত্যাশা সুনির্দিষ্ট একটি একাডেমিক ক্যালেন্ডার, নিয়মিত ক্লাস, পাঠদানের মানোন্নয়ন, জবাবদিহিতাপূর্ণ প্রশাসন, কলেজগুলো জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতি মেনে চলে শিক্ষার্থী উপস্থিতি বাড়ানো। আমার মতো অনেক শিক্ষার্থীর মাঝে একই প্রত্যাশা রয়েছে বলেই বিশ্বাস করি।

আমাদের বিশ্বাস বর্তমান প্রশাসন উক্ত বিষয় গুলোতে নজর দিলে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল সমস্যা দূরীকরণের দিকে এগিয়ে যাবে। শিক্ষার্থীদের আস্থা ফিরবে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি।

জুবায়ের আহমেদ সাব্বির, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, ভাওয়াল বদরে আলম সরকারি কলেজ, গাজীপুর।

 

সংকলক: তানজিদ শুভ্র, সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ তরুণ কলাম লেখক ফোরাম, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় শাখা।