অসদাচরণের অভিযোগে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারিক বরখাস্ত
রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারের দুই কর্মকর্তা মধ্যে বাগবিতণ্ডার এক পর্যায়ের এক কর্মকর্তা স্থানীয় লোকজনকে ডেকে এনে সিসিটিভি ক্যামেরা বন্ধ করে নারীর সহকর্মীর সঙ্গে অসদাচরণ করেন। এ সময় শিক্ষার্থীরা বাধা দিতে এলে তাদের গায়ে হাত তোলেন ওই কর্মকর্তা। অভিযোগ রয়েছে, গ্রন্থাগারে পড়তে থাকা শিক্ষার্থীদের মোবাইল চেক করেন ডেকে আনা স্থানীয় লোকজন।
এ ঘটনায় শিক্ষার্থীরা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চেয়ে উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি দিলে অভিযুক্ত সহকারী গ্রন্থাগারিক মীর ইয়ামিন আলীকে সাময়িক বরখাস্ত করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থায়ী কেন্দ্রীয় লাইব্রেরিতে সহকারী গ্রন্থাগারিক মীর ইয়ামিন আলীর সঙ্গে নারী সহকর্মীর (প্রশাসনিক কর্মকর্তা) বাগবিতণ্ডার এক পর্যায়ে কয়েকজন স্থানীয় ব্যক্তিকে ডেকে এনে গালাগাল করতে থাকলে লাইব্রেরিতে পড়তে থাকা শিক্ষার্থীরা এসে স্থানীয়দের চলে যেতে অনুরোধ করেন এবং তাদের সমস্যা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে সমাধানের অনুরোধ জানান। পরবর্তী সময়ে মীর ইয়ামিন আলী স্থানীয় আরও কয়েকজনকে নিয়ে এসে ওই নারী কর্মকর্তার সঙ্গে বাগবিতণ্ডায় জড়ান এবং অকথ্য ভাষায় গালাগাল করেন। এক পর্যায়ে ভুক্তভোগীর গায়ে হাত তুলতে ঔদ্ধত্য হলে এক শিক্ষার্থী বাধা দিতে এলে তাকেও ধাক্কা দেয় মীর ইয়ামীন।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী জানান, ‘এমন ঘটনায় আমি মানসিকভাবে অনেকটা ভেঙে পড়েছি। পড়তে গিয়ে এমন সমস্যার সম্মুখীন হব কল্পনাও করিনি।’
আরও পড়ুন: তিন পদে লোক নেবে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়
ওই শিক্ষার্থী আরও বলেন, ‘কর্মকর্তাদের ঝামেলার এক পর্যায়ে ওই নারী কর্মকর্তার ওপর মারমুখী হলে আমি থামাতে চেষ্টা করি। এ সময় বহিরাগতরা ওই নারী কর্মকর্তাকে বলছিলেন, ১৫ বছর অনেক খেয়েছেন কিছু বলতে পারি নাই। এ কথা বলার পর আমি বহিরাগতদের বলছি, ভাই, আপনারা কার জন্য আসছেন? আপনারা যার জন্য এসেছেন উনিও তো আওয়ামী লীগের লোক। এই কথা বলাতেই গ্রন্থাগারিক ইয়ামিন আমাকে ধাক্কা দেন এবং বলে আমি বিএনপি পরিবারের সন্তান।’
আরেক ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী জানান, ‘আমি লাইব্রেরিতে টেবিলে বসে আমার অ্যাসাইনমেন্ট লিখছিলাম। এমন সময় কয়েকজন স্থানীয় পেছন থেকে এসে টান দিয়ে আমার মোবাইল নিয়ে যায় ও মোবাইল চেক করে। এ সময় তারা একজন আরেকজনকে বলে ভিডিও করেছে কি না, চেক করে দেখ।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত সহকারী গ্রন্থাগারিক মীর ইয়ামিন আলী মুঠোফোনে বলেন, ‘ঝামেলাটা আমার কলিগের সাথে। এখানে শিক্ষার্থীদের সাথে আমার কোনো ঘটনাই ঘটেনি। পূর্বে প্রশাসনিক কর্মকর্তা ছারা খাতুন আমাকে লোকজন নিয়ে এসে আমার অফিসে হুমকি দিয়েছিল। ফোনেও আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। আজকে তার মীমাংসা জন্য আমরা বসেছিলাম। আগে যে হুমকি দিছিল তার সিসিটিভি ফুটেজ আছে।’
আরও পড়ুন: আট হাজার পরীক্ষার্থীর জন্য প্রস্তুত রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়
ভুক্তভোগী নারী কর্মকর্তা মুঠোফোনে বলেন, ‘মীর ইয়ামিন আলী প্রথমে দুজন বহিরাগত এনে আমাকে এক ঘণ্টার মতো হেনস্তা করেন। পরে আরও ছয়-সাতজন এনে আমার রুমে থাকা স্টাফদের বের করে দিতে চান। আমাকে একা রুমে বন্দী করার উপক্রম হলে আমি দ্রুত রুম থেকে বের হয়ে যাই। পরে বাইরে আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন এবং মারতে আসলে সেখানে বাধা দিতে গেলে একজন শিক্ষার্থীকে ধাক্কা দেন।’
এদিকে স্থানীয়দের ডেকে সহকারী গ্রন্থাগারিককে শাসানোর অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ওই নারী কর্মকর্তা জানান, তিনি স্থানীয় কাউকে ডাকেননি।
তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গ্রন্থাগারের এক কর্মচারী বলেন, ‘ম্যাডামের (ভুক্তভোগী) কোন একটা বিষয়ে কিছুদিন আগে কয়েকজন ব্যক্তি ইয়ামিন স্যারের সাথে কথা বলেছিলেন। কী বিষয়ে কথা বলেছে, তা বিস্তারিত বলতে পারছি না ‘
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর নজরুল ইসলাম বলেন, ‘ঘটনার সম্পর্কে তাৎক্ষণিকভাবে অবহিত করা হলে উপাচার্যের সদয় নির্দেশনায় প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা লাইব্রেরিতে উপস্থিত হয়। উপস্থিত বিভিন্নজনের সাক্ষ্যের ভিত্তিতে প্রক্টোরিয়াল বডি একটি প্রাথমিক প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। শিক্ষার্থীরাও একটি স্মারকলিপি দিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বিধি মোতাবেক যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করছে। সে পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের ধৈর্য ধরার আহ্বান জানাচ্ছি।’