ছাত্রীদের নিয়ে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য শিক্ষকের, উত্তাল ইবি
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হাফিজুল ইসলামের বিরুদ্ধে ছাত্রীদের নিয়ে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য, গালিগালাজ, রেজাল্ট কমিয়ে দেওয়া, পোশাক নিয়ে বাজে মন্তব্য, ফেল করানোর ভয় দেখানো, মানসিক অত্যাচারসহ নানা গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কাছে ওই শিক্ষককে বিভাগ থেকে অপসারণের দাবি তুলছেন শিক্ষার্থীরা।
সোমবার (৭ অক্টোবর) তার অপসারণসহ যথাযথ শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেন শিক্ষার্থীরা। পরে প্রধান ফটকে এসে তালা দিয়ে ঝুলিয়ে দেন তারা। প্রায় দুই ঘণ্টা পর উপাচার্যের সঙ্গে সাক্ষাতের আশ্বাসে গেট খুলে দেন। পরে উপাচার্যের সঙ্গে তাদের প্রতিনিধি দল সাক্ষাৎ করে। এ সময় উপাচার্য তদন্ত কমিটি করে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন।
সহকারী অধ্যাপক হাফিজুল ইসলামের বিরুদ্ধে ছাত্রীরা নানা অভিযোগ গুরুতর। তিনি সব সময় কারও পোশাক নয়ে, কারও ফেসবুকের ছবি নিয়ে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করেন; সময়-অসময়ে তাদের মেসেজ দেন; যেকোনও বিষয়ে তাদের অশ্লীল ভাষায় সম্বোধন-ইঙ্গিত করেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের ছাত্রী মৌমিতা তাসনিয়া রহমান অভিযোগ করে বলেন, তিনি আমাদের ফেসবুক ঘাঁটাঘাঁটি করেন। সেখান থেকে বিভিন্ন স্ক্রিনশট নিয়ে আবার ক্লাসে সেগুলো নিয়ে বাজেভাবে অপমান করে। হাফিজ স্যার আমাদের বলেন ‘তোরা ফেসবুকে ছবি দেও কেন? কাস্টমার ধরার জন্য?’ তিনি আমাদের এক বান্ধবীর তথ্য আরেক বান্ধবীর থেকে নেন। সময়-অসময়ে মেসেজ দেন। বিভাগের তথ্য পাওয়ার জন্য গোয়েন্দা রাখেন প্রতিটি ব্যাচে।
বিভাগের শিক্ষার্থী লামিয়া হোসেন বলেন, ‘আমি প্রতিনিয়ত আতঙ্কে থাকতাম। আমি কি পোশাক পরবো, কোথায় যাবো, কী খাবো, সেই স্বাধীনতাটুকু তিনি কেড়ে নিয়েছিলেন। দুদিন বিভাগে না যাওয়ায় আমাকে ফ্যানে ঝুলিয়ে পেটাতে চেয়েছেন। বিভাগের মেয়েদের ওপেনে গালিগালাজ করেন। তিনি মেয়েদের অশ্লীল ভাষায় সম্বোধন করেন। যে স্যারের গুণগান গাইবে, সে ইন্টার্নালে পাবে ২৭ আর আমি পাবো ১৭। আমার বন্ধুদের রাতের বেলায় ডেকে নিয়ে আমার বিরুদ্ধে বদনাম করেন।’
বিভাগের শিক্ষার্থী জান্নাতুল ফেরদৌস সিনা বলেন, ‘আমি নাকি ফেসবুকে ছবি ছাড়ি কাস্টমার ধরার ধান্দায়। এ শিক্ষক আমাদের বন্ধুদের সঙ্গে এসব কথা বলেছে। একজন কতটা ব্যক্তিত্বহীন হলে এমন কথা বলতে পারেন। এ ছাড়া একদিকে ক্লাস নিতেন না, অন্যদিকে অ্যাসাইনমেন্ট-পরীক্ষায়ও ইচ্ছেমতো নম্বর দিতেন। এ জন্য অনেকের রেজাল্ট খারাপ হয়েছে। আমরা তার অপসারণ চাই।’
এ বিষয়ে বিভাগে ছাত্র হৃদয় বলেন, ‘একজন শিক্ষক কখনো অন্যের ব্যক্তিগত বিষয়ে মেন্টালি অ্যাটাক করতে পারেন না। কিন্তু তিনি সব শিক্ষার্থীর সঙ্গে কোথায় থাকবো, কোথায় আড্ডা দেবো, কোন হলে থাকবো, এসব নিয়ে বাড়াবাড়ি করেন। আমাকে হল থেকে নামিয়ে দেন। পরে তার মাধ্যমে হলে ওঠার জন্য বলেন। আমাকে লাল পানি দিয়ে ধরিয়ে দেওয়ার হুমকি দেন।
এসব অভিযোগ বিষয়ে জানতে সহকারী অধ্যাপক হাফিজুল ইসলামের মুঠোফোন নম্বরে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
বিভাগের সভাপতি সহকারী অধ্যাপক আতিফা কাফি বলেন, ‘আমি লিখিত অভিযোগ এখনো পাইনি। উপাচার্য স্যার তদন্ত কমিটির আশ্বাস দিয়েছেন। তদন্ত কমিটি পরবর্তী পদক্ষেপ নেবেন।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের নবনিযুক্ত প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহীনুজ্জামান বলেন, একজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে তার বিভাগের শিক্ষার্থীরা যেসব অভিযোগ তুলেছেন, সেগুলো সত্য হলে অবশ্যই প্রশাসন যথাযথ ব্যবস্থা নেবে। কিন্তু যেকোনও বিষয়ের একটা পদ্ধতি আছে। আমরা শিক্ষার্থীদের বলেছি তাদের একটি প্রতিনিধি দল গিয়ে উপাচার্যের সঙ্গে কথা বলতে। তারা চাইলে প্রশাসন অবশ্যই তাদের কথা শুনবে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ বলেন, ‘আজ তাদের অভিযোগগুলো শুনেছি। আমরা দ্রুত সময়ের মধ্যে একটি কমিটি গঠন করে তদন্ত সাপেক্ষে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।’