ইবির পাখি চত্বরের বৈচিত্র্য ফেরাতে অভয়ারণ্যের উদ্যোগ
অযত্ন-অবহেলা এবং নির্মাণ কাজে সম্পৃক্ততার চক্করে নানা প্রজাতির পাখিদের অবাধ বিচরণভূমি ও কিচির-মিচিরপূর্ণ ‘পাখি চত্বর’ দীর্ঘদিন যেন হারিয়ে খুঁজছে নিজের অস্তিত্ব। শিক্ষার্থীদের কাছে বৈচিত্র্যময় এই স্থানটিকে তার হারানো সৌন্দর্য ফিরিয়ে দিতে এবার মাঠে নেমেছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবাদী সংগঠন এবং ‘পাখি চত্বর ও মেহেদী উদ্যান’ প্রজেক্টের রূপকার অভয়ারণ্য। কেন্দ্রীয় মসজিদের পেছনে ও প্রকৌশল দপ্তরের পাশে অবস্থিত স্থানটি অভয়ারণ্যের হাত ধরে তার পুরোনো বৈচিত্র্যে ফিরে যাবে বলে ধারণা সাধারণ শিক্ষার্থীদের।
বৃহস্পতিবার (৩ অক্টোবর) বিকাল সাড়ে ৪ টার দিকে পাখি চত্বরের বৈচিত্র্য রক্ষায় এবং পার্শ্বস্থ মেহেদী উদ্যানের সুরক্ষায় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযান চালায় সংগঠনটি। এছাড়াও পাখি চত্বরের বিভিন্ন গাছে থাকা পাত্রে পাখিদের জন্য খাদ্যের ব্যবস্থা করে তারা৷
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, অতিথি পাখির আগমন ও ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য রক্ষায় পাখি চত্বর স্থাপনের উদ্যোগ নেয় প্রশাসন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লান্ত শিক্ষার্থী ও পর্যটকদের জন্য বেঞ্চ বানিয়ে সাময়িক বিশ্রামের ব্যবস্থাও করা হয়। কিন্তু কয়েক বছর পরেই পুকুর সংস্কারে উত্তোলনকৃত মাটিতে চাপা পড়ে যায় বসার বেঞ্চগুলো। ঠিকাদারের ভুল পরিকল্পনায় এমনটি হয়েছে বলে মনে করে থাকে শিক্ষার্থীরা। এছাড়াও পুকুরের আয়তন বাড়াতে কেটে ফেলা হয় পুকুর পাড়ের প্রথম সারির গাছ যেগুলোতে প্রায় ৭০ থেকে ৮০টি পাখির খাদ্যের পাত্র ছিল।
তবে বৈচিত্র্য হারাতে বসা এই পাখি চত্বরের বৈচিত্র্য ফেরাতে উদ্যোগী হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবাদী সংগঠন অভয়ারণ্যের সদস্যরা। মেহেদী উদ্যানের আগাছা পরিষ্কার করে মেহেদী পাতা ও গাছ রক্ষার্থে চারপাশে বাশের পুঁতে দড়ি টানিয়ে দিয়েছে তারা। এছাড়াও কয়েকটি গাছে পাখির পাত্র স্থাপন, পুরাতন পাত্র গুলো পরিষ্কার ও পাত্র গুলোতে নতুন করে খাদ্য দিয়েছে তারা৷ বেঞ্চগুলোর চারপাশে জন্মানো আগাছাও খুব দ্রুতই পরিষ্কার করা হবে বলে জানা গেছে।
জানতে চাইলে অভয়ারণ্যের সভাপতি ইশতিয়াক ইমন বলেন, শুরুতে অভয়ারণ্যের ইচ্ছা ছিল ক্যাম্পাসে পাখিদের জন্য অভয়ারণ্য গড়ে তোলা। আর এখন আমাদের লক্ষ্য পাখি চত্বরের বৈচিত্র্য পুনরায় ফিরিয়ে আনা। পাশাপাশি আমাদের এই মেহেদী উদ্যানে এখন ৬০টি মেহেদী গাছ আছে। খুব শীঘ্রই এই মেহেদী উদ্যানের মেহেদী দিয়ে ক্যাম্পাসে একটা মেহেদী উৎসব করার পরিকল্পনা আছে আমাদের। অভয়ারণ্যের সদস্যরা যদি ক্যাম্পাসে সফল হতে পারি তাহলে দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়েও পাখিদের জন্য কিছু করার স্বপ্ন আছে আমাদের।
উল্লেখ্য, বছরের শীত মৌসুমে অতিথি পাখির আনাগোনা দেখা যেত বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের এই জায়গাগুলোতে। এসব পাখির নিরাপদ আশ্রয় গড়ে তুলতে ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নিয়েছিল ইবি প্রশাসন। ২০২১ সালের বুদ্ধিজীবী দিবসে আনুষ্ঠানিকভাবে এই স্থানকে পাখি চত্বর হিসেবে উদ্বোধন করে তৎকালীন প্রশাসনের নেতৃবৃন্দ। তবে কয়েক বছরের ব্যবধানে বৈচিত্র্য হারায় এই পাখি চত্বর৷