৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:০৬

ইবির প্রধান ফটক সংলগ্ন কুষ্টিয়া-খুলনা মহাসড়কের বেহাল অবস্থা

ইবির প্রধান ফটক সংলগ্ন কুষ্টিয়া-খুলনা মহাসড়কের বেহাল অবস্থা  © টিডিসি ফটো

সড়কের এখানে সেখানে গর্ত, গর্তের চারপাশে আবার ছোট বড় ইট-পাথরের নুড়ি। রাস্তার কোথাও উঁচু তো পাশেই ততটাই নিচু। ছোট বড় খানাখন্দের সাথে মিশেছে বৃষ্টির পানি। ফলে ইট-পাথর-কাঁদার সংমিশ্রণে নাজেহাল অবস্থা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) প্রধান ফটক সংলগ্ন কুষ্টিয়া-খুলনা মহাসড়কের।

কুষ্টিয়া থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার একমাত্র সড়কটি সংস্কারের অভাব, অতিরিক্ত ওজনবাহী ট্রাক চলাচল এবং মেরামতের অভাবে দিনের পর দিন ধুঁকছে। খানাখন্দে ভর্তি সড়কের একপাশ চলাচলের অনুপযোগী হওয়ায় অপরপাশ দিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ভাবেই চলছে রাজশাহী, পাবনা, কুষ্টিয়া থেকে ছেড়ে আসা যশোর, খুলনা, বেনাপোলগামী গণপরিবহন গুলো। একইসাথে যেকোন সময় দুর্ঘটনার শংকায় থাকা শিক্ষার্থীরাও বাধ্য হয়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবেই চলাচল করছে।

শিক্ষার্থীরা জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের দুপাশে বেশ কয়েকবার গতিরোধক স্থাপন ও ভাঙা হয়েছে। বারবার ভাঙ্গাগড়ার এই চক্র রাস্তার বেহাল দশার অন্যতম কারণ বলে। এছাড়াও, বেনাপোল সীমান্ত থেকে খালাস হওয়া ভারত থেকে আসা পণ্যবাহী ট্রাক গুলো এই রাস্তা দিয়েই কুষ্টিয়া, পাবনা সহ উত্তরবঙ্গে যাতায়াত করে। এতে করে আরো বেহাল দশা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের চলাচলকারী একমাত্র এই সড়কের। এ রাস্তায় আগেও অনেক দুর্ঘটনা ঘটেছে বলেও জানান তারা।

সরজমিনে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে ব্যবহৃত সড়কটির লক্ষীপুর বাজার এলাকা থেকেই যাচ্ছেতাই অবস্থা। এরপরে শান্তিডাঙ্গা এলাকা থেকেই ছোট বড় গর্তে ভরা রাস্তাটির সবচেয়ে বাজে অবস্থা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সীমানা প্রাচীর থেকে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের মেইন গেট পর্যন্ত। এছাড়া ইবি ল্যাবরেটরি স্কুলের বিপরীতে এবং নির্মাণাধীন একাডেমিক ভবন-২ এর সামনের অংশের রাস্তাও ভাঙ্গাচোরা। সবচেয়ে বেহাল অবস্থা ইবির প্রধান ফটক থেকে উভয় দিকে ৫০ গজ পর্যন্ত এলাকার। বিশ্ববিদ্যালয়ের উত্তর সীমানাপ্রচীর সংলগ্ন বি.এম.এস ছাত্রাবাসের সামনে অহরহ ঘটে দুর্ঘটনা।  

এছাড়াও, বিশ্ববিদ্যালয়ের মেইন গেটের দুপারের গতিরোধকের আগের অংশে খানাখন্দের কারণে রাস্তার একঅংশ চলাচলের অনুপযোগী। ডাবল লেনের রাস্তাটি মূলত এখন এক লেনে পরিণত হয়েছে। ফলে কুষ্টিয়া থেকে ছেড়ে আসা বাস-ট্রাক গুলোর বাম দিক দিয়ে যাওয়ার কথা থাকলেও তারা চলাচল করে মূলত রাস্তার ডান দিক দিয়ে। ফলে বিপরীত দিক থেকে আসা যানবাহনের সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষের শতভাগ সম্ভাবনা রয়েছে। অধিকাংশ সময়েই যশোর, খুলনা থেকে ছেড়ে আসা কুষ্টিয়া গামী যানবাহন গুলোকে রাস্তার বামে অপেক্ষায় থাকতে দেখা যায়। 

ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের এক ট্রাকচালক বলেন, মাসে আমাদের কোম্পানির নিম্নে ৮/৯ টি ট্রিপ থাকে। এতে করে আমরা মাসে মোটামুটি ১৬/১৭ বার এই রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করি। ভাঙ্গাচোরা রাস্তার কারণে আমাদের ডেলিভারির প্রোডাক্ট ভেঙ্গে যায়, গাড়ির পার্টস নষ্ট হয়। অন্য রাস্তায় আমরা যে পার্টস পাতি দিয়ে ২ মাস চালাতে পারি, এই রোডে ট্রিপ মারলে আমাদের ১ মাসেই সেগুলো খারাপ হয়ে যায়। আমরা রংপুর থেকে যশোর, সাতক্ষীরা বিভিন্ন রুটে যাই কিন্তু এই অংশের মতো খারাপ রাস্তা অন্য কোথাও দেখা যায় না। একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের রাস্তার এই যাচ্ছেতাই অবস্থা মেনে নেওয়া যায় না।

কুষ্টিয়া-খুলনা মহাসড়কে চলাচলকারী রূপসা বাসের চালক জানান, ভারি ট্রাক যায়ে যায়ে রাস্তা ভেংগে গেছে। আমরা ত রেগুলার চলি, সেম গাড়ি নিয়ে কিন্তু ভারতের পণ্যের ট্রাক চলায় রাস্তায় প্রেসার পড়ে বেশি। বাস ভর্তি যাত্রী নিয়ে ভার্সিটির সামনের এই জায়গায় বাম দিয়ে যাইতে নিলে যাত্রীদের ঝাঁকি বেশি লাগে। তাই আমরা রাস্তার ডান সাইড দিয়ে যাই। বৃষ্টি হওয়ায় পানি জমে থাকায় বোঝাও যায় না রাস্তায় গর্ত কোথায় আর ভালো কোথায়।

পার্শ্ববর্তী ছাত্রাবাসের এক শিক্ষার্থী বলেন, শান্তিডাঙ্গার মোড় থেকেই রাস্তা ভাঙ্গা। তাও রূপসা-গড়াই বাস বেপরোয়া গতিতে চলে। আবার রাত ৮টা/৯টা বাজলেই পণ্যবাহী ট্রাক চলাচল শুরু হয়। রাস্তা এটা অনেক আগে থেকেই খারাপ। মাঝে জোড়াতালি দিয়ে মেরামত করে দিয়ে গেলেও এবছরের বৃষ্টিতে অবস্থা আবার খারাপ হয়ে গেছে। গর্তের কারণে মাঝেমধ্যেই দুর্ঘটনা ঘটে, ট্রাক উল্টে যায়। রাস্তার বাম সাইড ভাঙ্গা থাকায় বাস-ট্রাক সব ই সাদা রেখার বাইরে দিয়ে বেপরোয়া গতিতে আমাদের গা ঘেঁষে বেরিয়ে যায়। এতে আমাদের অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ ভাবে চলাচল করতে হচ্ছে।

এবিষয়ে জানতে চাইলে সওজের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী লিটন আহমেদ খান বলেন, ইতোপূর্বেই আমরা রাস্তা সংস্কারে বরাদ্দ চেয়ে একটি বাজেট দিয়েছিলাম, সেটার প্রেক্ষিতে প্রায় ৯ কিলোমিটার সড়কের জন্য ৩০ কোটি টাকা পাশও হয়েছিল। কিন্তু সরকার পরিবর্তনের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা মহোদয় ব্যয় সংকোচন নীতি গ্রহণ করে প্রতিটি বরাদ্দ পুনরায় পর্যালোচনা সাপেক্ষে বাস্তবায়নের নির্দেশনা দিলে আমরা আবারও পুনর্বিবেচনা করে এই মাসের প্রথম সপ্তাহে কাগজপত্র পাঠিয়েছি। এখন প্রকল্পটি অনুমোদনের সিদ্ধান্ত এলেই আমরা টেন্ডার দিয়ে ডিসেম্বর নাগাদ কাজ শুরু করতে পারবো বলে আশা করি।