ইবিতে বেড়েছে বহিরাগত, নিরাপত্তা শঙ্কায় নারী শিক্ষার্থীরা
শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর থেকে দেশের বেশিরভাগ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে এখনো স্থবিরতা বিরাজ করছে। সর্বোচ্চ প্রশাসনিক কর্তা ব্যক্তিদের পদত্যাগের হিড়িকে প্রায় অচলাবস্থা বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর। গতকাল ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়োগ হলেও এখনো যোগদান করেননি তিনি। আজই তিনি ক্যাম্পাসে যোগদান করবেন বলে জানা গেছে।
এছাড়া, প্রো-ভিসি, ট্রেজারার, প্রক্টর ও হল প্রভোস্টদের অনুপস্থিতিতে হল গুলোতে বিচ্ছিন্ন ঘটনা সহ বেড়েছে বহিরাগতদের আনাগোনা। এমন অবস্থায় নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করছেন শিক্ষার্থীরা। সংশ্লিষ্টদের মতে, বিশ্ববিদ্যালয়ে জরুরি কোনো পরিস্থিতি তৈরি হলে তা সামাল দেওয়া কঠিন হবে।
জানা যায়, গত ৮ আগষ্ট ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, উপ-উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষ রাষ্ট্রপতি বরাবর পদত্যাগপত্র পাঠান। ১৭ আগষ্ট প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহাদৎ হোসেন আজাদ ও ছাত্র-উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. বাকী বিল্লাহ পদত্যাগপত্র জমা দেন। পরবর্তীতে ছয়টি হলের প্রভোস্টও পদত্যাগ করেন। প্রভোস্টদের পদত্যাগ করায় হলগুলোর পরিবেশও স্বাভাবিক নয়। প্রভোস্ট পদত্যাগ করায় তাদের দায়িত্ব পালন করছেন স্ব স্ব হলের হাউজ টিউটরগণ।
তবে সকল সময়ে হাউজ টিউটরদের পাওয়া যায় না বলেও অভিযোগ করেছেন অনেকে। প্রভোস্ট না আসা অবধি হলের অন্যান্য অনেক সমস্যার সমাধান না হওয়াতেও ভোগান্তিতে রয়েছেন শিক্ষার্থীরা। এদিকে প্রক্টরের পদত্যাগে প্রক্টরিয়াল বডির কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ায় সন্ধ্যার পর ক্যাম্পাসে ও মেয়েদের হল গুলোর সামনেও অনেক রাত পর্যন্ত বহিরাগতদের আনাগোনা লক্ষ্য করা যায়।
শেখ হাসিনা হলের আবাসিক এক শিক্ষার্থী বলেন, প্রায় দুই মাস হলো প্রভোস্ট ছাড়াই হল চলছে। হলের অনেক কাজও প্রভোস্টের জন্য আটকে রয়েছে। তবে নিরাপত্তার দিক বিবেচনা করলে আমাদের মধ্যে শঙ্কা রয়েছে। কারণ একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের যেখানে কোন প্রক্টর, প্রভোস্ট কেউ নেই, হাউজ টিউটরের কাজের প্রতিও অনিহা দেখেছি। রাতে কোন শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়লে তার দায়ভার নেওয়ার মতোও কেউ নেই এখন। একজন আনসার আমাদের নিরাপত্তার জন্য আছে তারপরও আমাদের একটা ভয় থেকেই যায়। আমার মতে একটি ছাত্রী হলে অবশ্যই প্রভোস্ট থাকা গুরুত্বপূর্ণ৷ যতো দ্রুত সম্ভব প্রভোস্ট নিয়োগের দাবী আমাদের সবার।
বঙ্গমাতা হলের আরেক শিক্ষার্থী বলেন, ক্যাম্পাসে ভিসি না থাকায় আমারা চরম নিরাপত্তা সংকটে ভুগছি। ক্যাম্পাসের কোথাও কোন নিরাপত্তার ব্যারিকেড নাই। প্রক্টর না থাকায় অভিযোগ করার মতোও কোন জায়গা না। এতো দিন হয়ে গেলো ভিসি নিয়োগ হলোনা। আমরা চাই অনতিবিম্বে ভিসি নিয়োগ করা হোক। এবং ক্যাম্পাসের সার্বিক বিষয়ে অস্থিরতা দুর হোক।
এদিকে ক্যাম্পাসের বাহিরে থাকা শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, দীর্ঘদিন যাবত বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনবিহীন থাকায় সবচেয়ে নিরাপত্তা শঙ্কায় ভুগছেন ক্যাম্পাসের বাহিরে বিভিন্ন মেসে থাকা নারী শিক্ষার্থীর। উপাচার্য, প্রক্টর, ছাত্র উপদেষ্টা গুরুত্বপূর্ণ তিন প্রশাসনিক পদে কেউ না থাকায় তাদের কোনো সমস্যায় পাচ্ছে না তাৎক্ষণিক কোনো প্রতিকার। তাই অভিভাবক শূন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজেদের একপ্রকার অহায় বলে দাবি করেছেন তারা। একইসাথে একাডেমিক কাজে স্থবিরতা অপসারণে উপাচার্য নিয়োগ এখন সময়ের দাবি বলে উল্লেখ করেছেন তারা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ও আর্থিক দায়িত্বপ্রাপ্ত জ্যেষ্ঠ অধ্যাপক ড. আ ব ম ছিদ্দিকুর রহমান আশ্রাফী বলেন, আমি প্রশাসনিক এবং আর্থিক দায়িত্ব পেলেও সবদিকেই খেয়াল রাখার চেষ্টা করছি। হলগুলোতে বর্তমানে প্রভোস্টের অনুপস্থিতিতে প্রভোস্টের দায়িত্ব পালন করছেন হাউজ টিউটরগণ। নারী শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার জন্য হলের গেটে সার্বক্ষনিক আনসার মোতায়নের পাশাপাশি হাউজ টিউটরদের বলা হয়েছে যেন তারা শিক্ষার্থীদের কাছে যায়, তাদের সাথে কথা বলে, তাদের সুবিধা-অসুবিধা জেনে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে। যেমন খালেদা জিয়া হলের শিক্ষার্থীদের আবাসন ব্যবস্থা আমাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ ছিলো। আমরা চেষ্টা করেছি দ্রুত তাদের এই সমস্যা সমাধানের।
এদিকে, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) ১৪ তম উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ। আগামী চার বছর তিনি এ দায়িত্ব পালন করবেন। এ নিয়োগের মধ্য দিয়ে তিনি ১৩তম উপাচার্য অধ্যাপক ড. আবদুস সালামের জায়গায় স্থলাভিষিক্ত হলেন।
কর্মস্থলে যোগদানের পরে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা না জানানোর অনুরোধ জানিয়েছেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) নবনিযুক্ত উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ। আজই তিনি ক্যাম্পাসে যোগদান করবেন বলে জানা গেছে।