প্রশাসন ভবন খালি, কর্মকর্তারা ব্যস্ত আমবাগানের দাবা—লুডুর বোর্ডে
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একাংশ অফিস না করে ক্যাম্পাসের আমবাগানে সময় কাটান বলে অভিযোগ রয়েছে। ক্যাম্পাস সূত্রে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ কর্মকর্তারা অফিসে এসে আম বাগানে, চায়ের দোকানে সময় কাটান। সেখানে দাবা খেলা এবং খোশ গল্পে মেতে থাকেন। ফলে শিক্ষার্থীরা তাদের কাঙ্খিত সেবা পান না। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেক শিক্ষার্থী। তাদেরকে পুরো সময় অফিসে থাকার দাবি জানিয়েছেন।
শিক্ষার্থীরা প্রশাসনিক ভবনে একাডেমিক ট্রান্সক্রিপ্ট, সার্টিফিকেটসহ অন্যান্য কাজে গেলে সেবা পান না তারা। শিক্ষার্থীদের মাঝে প্রচলিত আছে অনার্স-মাস্টার্স করার থেকেও সার্টিফিকেট উত্তোলন বেশি কষ্ট। শিক্ষার্থীরা প্রতিনিয়ত হয়রানির শিকার হন। এটি সমাধানের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এবং কর্মকর্তা সমিতির নেতৃবৃন্দ চেষ্টা করেও বারবার ব্যর্থ হন শিক্ষার্থীরা।
কয়েকজন কর্মকর্তা জানান, অনেক সময় অফিসে কোনো কাজ থাকে না। তখন আমরা একটু রিফ্রেশের জন্য বাইরে যায়। চায়ের স্টলে একে অপরের সঙ্গে একটু কথাবার্তা বলি। তবে কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারী দেখি সবসময় দোকানে বসে থাকেন। কেউ কার্ড খেলেন, আবার কেউ দাবা খেলেন। তবে এটা সবাই করে না। এজন্য যারা অফিস ফাঁকি দিয়ে এগুলো করে তাদেরকে অনুরোধ করতে হবে তার উপর অর্পিত দায়িত্ব পালনের জন্য। তবে ঢালাওভাবে সবাই অফিস ফাঁকি দেয় না। যারা কাজ করে সেসব কর্মকর্তাদের সারাবছরই কাজ করতে হয়। এটা একটা ট্রেন্ড হয়ে গিয়েছে।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিস টাইম সকাল ৯ টা থেকে ৪ টা পর্যন্ত হলেও অধিকাংশরা অফিস সময়ের আগে চলে যান। সম্প্রতি এ নিয়ে দুই কর্মকর্তার মধ্যে মারামারির ঘটনাও ঘটেছে। গত মাসের শেষ সপ্তাহে কর্মকর্তারা ২ টায় বাসায় ফেরার জন্য বাসে ওঠেন। শিক্ষার্থীরা তাদের নেমে যেতে বলেন। এ সময় কয়েকজন কর্মকর্তা নেমে শিক্ষকদের বাসে উঠে চলে যান। অন্যরা বাসেই বসেছিলেন। বাসের পাশে কয়েকজন কর্মকর্তা দাঁড়িয়েছিলেন।
এ সময় পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অফিসের শাখা কর্মকর্তা বিল্লাল হোসেন এসে ধমকের সঙ্গে কর্মকর্তাদের ৪ টা পর্যন্ত অফিস করতে বলেন। সেখানে দাড়িয়ে থাকা রেজিস্ট্রার অফিসের কর্মকর্তা সাখাওয়াত হোসেন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন নেই, তেমন কাজও নেই। এ জন্য দ্রুত বাসায় যায়। এ নিয়ে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে কর্মকর্তা বিল্লাল হোসেন চড়, থাপ্পড় এবং লাথি মারেন এবং অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ইমরান বলেন, আমরা ক্যাম্পাস জীবনের শুরু থেকেই দেখে আসছি দুপুর ২ টার ট্রিপে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একটা ভীড় লেগে থাকে। অথচ তাদের অফিস ছুটি হয় বেলা ৪ টায়। তারা অফিস ফাঁকি দেয়, উপরন্তু তারা ছাত্রদের বাসে উঠে ভীড় করে এবং সামনের সিটগুলো অন্যায়ভাবে দখল করে নেয়। দীর্ঘদিন এই অন্যায় হয়ে আসছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী সবুজ হোসেন বলেন, কর্মকর্তারা ঠিকমত অফিস করেন না, আমবাগানে বসে থাকেন। আবার ২ টার বাসে তারা চলে যায়। তাদেরকে এভাবেই গত ছয় বছর দেখে আসছি। এদিকে প্রশাসনিক ভবনে গেলে খারাপ ব্যবহার করে। এদেরকে শাস্তির আওতায় নিয়ে আসতে হবে। শিক্ষকদেরও ফুল টাইম অফিস নিশ্চিত করা জরুরি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী শাহীন আলম বলেন, ক্যাম্পাসে থাকতে প্রশাসন ভবনে বিভিন্ন কাজে গিয়েছি। তবে সবচেয়ে বিপত্তিতে পরেছি সার্টিফিকেট উত্তোলন করতে। আমাদের সাথে বাড়ির চাকরের মতো আচরণ করছে কর্মকর্তারা। গেলেই বলত পরে আসেন। ওদিকে তারা আমবাগানে চা আর বিড়ি ফুাকাতো। যা মেনে নেওয়া কষ্টসাধ্য ছিল।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক এস এম সুইট বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উচিত নিজ দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করা। তাহলে আর শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করার সুযোগ পাবে না। শিক্ষার্থীদেরও উচিত বিশ্ববিদ্যালয় সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করতে সহযোগিতা করা।
কর্মকর্তা সমিতির সভাপতি দেওয়ান টিপু সুলতান গণমাধ্যমকে বলেন, কর্মকর্তাদের অবশ্যই ফুল টাইম অফিস করতে হবে। শিক্ষার্থীরা যেন ভালো সেবা পান সেজন্য নির্দেশনা দিয়েছি। এছাড়া উপাচার্য নিয়োগ হলে আমাদের সকল সমস্যা নিয়ে মতবিনিময় করে সেগুলো সংশোধন করার চেষ্টা করব।