স্থবির ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়, অভিভাবকহীন সারাদেশের ১৫৬৪ মাদ্রাসা
মাদ্রাসা শিক্ষাব্যবস্থার আধুনিকায়ন ও যুগোপযোগী করতে ২০১৩ সালে প্রতিষ্ঠা করা ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়। সরকার পতনের পর ১৫ আগস্ট পদত্যাগ করেন বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আবদুর রশীদ। পরদিন ১৬ আগস্ট থেকে অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে অনুপস্থিত রয়েছেন উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মুহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ। একই কারণ দেখিয়ে ২২ আগস্ট থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে যাচ্ছেন না কোষাধ্যক্ষ এস এম এহসান কবীর। উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির শীর্ষ প্রশাসকদের অনুপস্থিতিতে কার্যত স্থবির হয়ে পড়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনস্থ ১ হাজার ৫৬৪ মাদ্রাসার কার্যক্রম। আর বেতন আটকে আছে বিশ্ববিদ্যালয়টির ২১৯ শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের।
জানা গেছে, প্রশাসনিক শূন্যতা নিরসনে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে চিঠি পাঠানো হলেও বিশ্ববিদ্যালয়ে দায়িত্ব নেওয়ার মতো কোনো অধ্যাপক না থাকায় স্থবির হয়ে আছে প্রশাসনিক ও আর্থিক কার্যক্রম। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে সমাধান চেয়ে ২ সেপ্টেম্বর শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পক্ষ থেকে চিঠি পাঠানো হয়েছে।
ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান অবস্থা নিয়ে আমরা অবগত আছি। আমরা চেষ্টা করছি কয়েকদিনের মধ্যেই এই সংকট সমাধানের। যতদ্রুত সম্ভব এখানে উপাচার্য নিয়োগ করা হবে। - শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ
চিঠিতে বলা হয়, এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন পরিচালিত ১৫’শ মাদ্রাসার প্রশাসনিক, একাডেমিক ও আর্থিক কাজে স্থবিরতা বিরাজ করছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ প্রশাসনিক ও আর্থিক কার্যক্রমও পরিচালনা করা যাচ্ছে না। উপাচার্য, উপ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ অনুপস্থিত। ডিন, বিভাগীয় চেয়ারম্যান এবং কোনো অধ্যাপকও নেই। ফলে ‘জ্যেষ্ঠ অধ্যাপককে সাময়িকভাবে আর্থিক ও প্রশাসনিক দায়িত্ব’-সংক্রান্ত মন্ত্রণালয়ের দেওয়া নির্দেশনা বাস্তবায়ন সম্ভব হচ্ছে না।
আরও পড়ুন: ভিসি নিয়োগের দাবিতে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম চবি শিক্ষার্থীদের
এতে আরও বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী জরুরি প্রশাসনিক ও আর্থিক দায়িত্বসহ অন্যান্য কার্যক্রম স্বাভাবিকভাবে পরিচালনার জন্য শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের পক্ষ থেকে বারবার উপ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষকে বিশ্ববিদ্যালয়ে উপস্থিত হতে অনুরোধ করা হলেও তারা আসেননি। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী দায়িত্বও গ্রহণ করেননি। এ অবস্থায় উপাচার্য নিয়োগের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে চিঠিতে অনুরোধ করা হয়।
জানতে চাইলে আজ বুধবার (১১ সেপ্টেম্বর) বিকেলে শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান অবস্থা নিয়ে আমরা অবগত আছি। আমরা চেষ্টা করছি কয়েকদিনের মধ্যেই এই সংকট সমাধানের। যতদ্রুত সম্ভব এখানে উপাচার্য নিয়োগ করা হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ড. মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় বরাবর চিঠি দিয়ে অসুস্থতা জনিত কারণ দেখিয়ে ছুটিতে আছেন। কোষাধ্যক্ষ উপাচার্য দপ্তর বরাবর প্রথমে ১০ দিন এবং পরে ১৫ দিন ছুটির চিঠি দেন যার অফিস নথি তার দপ্তরে আসে।
তিনি বলেন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য মহোদয় চলে যাওয়ার পর এই দায়িত্ব পাওয়ার কথা উপ-উপাচার্য মহোদয়ের। তিনি অনেকদিন বিশ্ববিদ্যালয়ে না আসায় এবং জ্যেষ্ঠ কোন শিক্ষকও না থাকায় কেউ দায়িত্ব নিতে পারছেন না।
আরও পড়ুন: বিসিএসের প্রশ্নফাঁসের প্রমাণ পায়নি পিএসসি
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ শারীরিক ও মানসিক অসুস্থতার কারণ দেখি প্রথমে ১০ দিনের জন্য ছুটির চিঠি জমা দেন। তারপর প্রেসক্রিপশন যুক্ত করে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ঘরে বিশ্রাম নিতে আরও ১৫ দিনের ছুটির চিঠি জমা দেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার দপ্তরের সেকশন অফিসার মো. রুহুল আমিন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, আমাদের পরিবারগুলো নির্ভর করে থাকে আমাদের বেতন ভাতার ওপর, সব জায়গায় স্বস্তি ফিরে এলেও আমাদের এখানে আশা আলো দেখতে পাচ্ছি না। বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর থেকে আমাদের যে লক্ষ্য বা, আকাঙ্ক্ষা ছিল তা কখনোই পূরণ হয়নি। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে একই পদে থাকা কর্মকর্তারা এখনো পদোন্নতির মুখ দেখেন নি। আমাদের প্রত্যাশা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সমস্যাগুলো সমাধানে পদক্ষেপ নিবে।
বিষয়টি জানতে উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মুহাম্মদ আবুল কালাম আজাদের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। কোষাধ্যক্ষ এস এম এহসান কবীরের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।