১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২২:৪৭

৪ বছরের স্নাতক শেষ হয়নি সাড়ে ৬ বছরেও, আন্দোলনে শিক্ষার্থীরা

অবস্থান কর্মসূচি  © টিডিসি ফটো

একাডেমিক কার্যক্রমে শিক্ষকদের অবহেলা এবং ফলাফল প্রকাশে দীর্ঘসূত্রিতার কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সাড়ে ৬ বছরেও স্নাতক সম্পন্ন করতে পারেনি জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা। 

মঙ্গলবার (১০ সেপ্টেম্বর) শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ হয়ে বিজ্ঞান অনুষদ এবং প্রশাসনিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে। চলতি বছরের মার্চ মাসে শিক্ষার্থীরা স্নাতকের সর্বশেষ পরীক্ষা শেষ করলেও নানা জটিলতায় প্রকাশ হয়নি ফলাফল। একই চিত্র দেখা যায় বিভাগটির অন্যান্য শিক্ষাবর্ষেও। 

এসময় একদিনের মধ্যে ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের স্নাতকের ফলাফল প্রকাশ, সেশনজট নিরসন, একাডেমিক ক্যালেন্ডার প্রবর্তন ও বাস্তবায়ন এবং শিক্ষকদের জবাবদিহিতার আওতায় আনাসহ ১৫ দফা দাবি উত্থাপন করেন শিক্ষার্থীরা। এরপর ঘটনাস্থলে এসে শিক্ষার্থীদের সাথে আলোচনার আহ্বান জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থিক ও প্রশাসনিক দায়িত্বপ্রাপ্ত অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ইমদাদুল হুদা। পরে বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সাথে এক ঘণ্টার বৈঠক শেষে শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস প্রদান করেন ড. ইমদাদুল হুদা।

শিক্ষার্থী মৃত্তিকা দাশ দূর্বা বলেন, আমাদের বিভাগে স্নাতকোত্তর চালু নেই৷ এ কারণে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে আমাদের স্নাতকোত্তর করতে হয়। কিন্তু অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে আবেদনের সময়ও প্রায় শেষ। অথচ পরীক্ষা দেওয়ার প্রায় ৬ মাস পেরিয়ে গেলেও এখনো আমাদের স্নাতকের ফলাফল প্রকাশিত হয়নি। ৪ বছরের স্নাতক ৭ বছরেও শেষ হচ্ছে না! আমরা গত গ্রীষ্মকালীন (এপ্রিল-সেপ্টেম্বর) স্নাতকোত্তর সেশনে ভর্তি হতে পারিনি, এখনও যদি আমাদের রেজাল্ট না দেওয়া হয় তাহলে শীতকালীন (অক্টোবর-মার্চ) সেশনেও আমরা ভর্তি হতে পারবো না। ফলে আমরা আবারও পিছিয়ে যাবো। 

এ বিষয়ে ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী অমিত হাসান জানান, আমরা ৫ বছর ৭ মাস পরে এসেও চার বছর মেয়াদি স্নাতকের ৮ম সেমিস্টারের ক্লাস করছি। গত ২৩ এপ্রিল আমাদের ৭ম সেমিস্টারের পরীক্ষা শেষ করার ৬ মাস পেরিয়ে গেলেও ফলাফল প্রকাশিত হয়নি। ৮ম সেমিস্টারের ক্লাস-পরীক্ষাও ঠিকমতো চলছে না৷ অথচ আমাদের শিক্ষাবর্ষের অন্যান্য বিভাগের শিক্ষার্থীরা স্নাতক শেষ করেছে অনেক আগেই। অন্যদিকে বিভাগটির ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা ৪ বছর ৭ মাস পর এসে আট সেমিস্টারের মধ্যে সবেমাত্র পঞ্চম সেমিস্টার শেষ করতে পেরেছে। 

এরপর বিভাগটির শিক্ষক-শিক্ষার্থী এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের আলোচনায় আজকের মধ্যে ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের স্নাতকের ফলাফল প্রকাশ, বুধবার দুপুরের মধ্যে ট্রান্সক্রিপ্টের আবেদন, একাডেমিক মিটিং করে ১৫ দফা দাবির বিষয়ে কার্যবিধি প্রণয়ন এবং রবিবারের মধ্যে ট্রান্সক্রিপ্ট ও মাইগ্রেশন সার্টিফিকেট প্রদানের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। 

এছাড়াও আগামী ৯ মাসের মধ্যে ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের ৩ টি সেমিস্টার সম্পন্ন এবং শিক্ষার্থীদের সাথে আলোচনা করে একাডেমিক ক্যালেন্ডার প্রণয়নের সিদ্ধান্ত হয়। তবে দাবি আদায় না হলে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেন শিক্ষার্থীরা। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থিক ও প্রশাসনিক দায়িত্বপ্রাপ্ত অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ইমদাদুল হুদা বলেন, আজকের মধ্যেই ফলাফল প্রকাশিত হবে এবং আগামী রবিবারের মাঝেই মাইগ্রেশন সার্টিফিকেট দেওয়া যাবে। বুধবার সকল শিক্ষকদের নিয়ে বিভাগীয় প্রধান একাডেমিক মিটিং করবেন এবং সংশ্লিষ্ট পরীক্ষা কমিটির দায়িত্বশীল শিক্ষকদের একাডেমিক ক্যালেন্ডার তৈরির দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।

বিভাগীয় প্রধান মো. রকিবুল হাসানের তিনি বলেন, আজ শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের আলোচনা হয়েছে। আগামীকাল বিভাগে একাডেমিক মিটিংয়ে শিক্ষার্থীদের দাবির বিষয়ে যাবতীয় সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।