০৮ নভেম্বর ২০১৮, ১৪:৫৯

সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হলেও প্রশ্নপত্রে নানা অসঙ্গতি

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়  © টিডিসি ফটো

চলতি বছরের স্নাতক (সম্মান) শ্রেণির ভর্তি পরীক্ষা শেষ হয়েছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি)। এ পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস, প্রক্সি কিংবা জালিয়াতির মত কোন ধরণের অপ্র্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। তবে চারটি ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় তিনটিতে প্রশ্নপত্রে ভুল, নিয়মবর্হিভূত প্রশ্ন ও বেশকিছু অসঙ্গতি লক্ষ্য করা গেছে। এর মধ্যে একটি ইউনিট নিয়ে ইতোমধ্যে তদন্ত কমিটিও গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

ক্যাম্পাস সূত্রে জানা যায়, এ বছর আটটি ইউনিটের পরিবর্তে চারটি ইউনিটে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিদিন মোট চার শিফটে দুইদিনে চার ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া এবারের ভর্তি পরীক্ষায় এমসিকিউ এর পাশাপাশি লিখিত পরীক্ষার প্রশ্ন সমন্বয় করে প্রশ্নপত্র প্রণয়ন করা হয়। 

গত রবিবার (৪ নভেম্বর) দিনের প্রথম শিফটে অনুষ্ঠিত হয় ধর্মতত্ত্ব অনুষদভুক্ত ‘এ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা। পরীক্ষার শুরুতেই বেশ কিছু অসঙ্গতি লক্ষ্য করা যায়। এর মধ্যে নির্ধারিত সময়ে পরীক্ষা শুরু হলেও কয়েকটি কেন্দ্রে প্রশ্ন পৌছায় দেরিতে। এই ইউনিটের পরীক্ষায় কোন প্রকার বিরাম চিহ্ন ব্যবহার করা হয়নি। এছাড়া লিখিত পরীক্ষায় এক কথায় প্রশ্ন-উত্তর থাকার কথা থাকলেও একাধিক সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ছিল।

এরপর একই দিনে দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ শিফটে মানবিক ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এই ইউনিটের প্রশ্নপত্র নিয়েও ভর্তিচ্ছুরা অভিযোগ তোলে। তারা জানায়, ‘বি’ ইউনিটের যে প্রশ্ন করা হয়েছে তা সিলেবাস বর্হিভূত। তাদের দাবি ভর্তি পরীক্ষায় সাধারণত মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের প্রশ্ন করা হয়। কিন্তু এবারের ভর্তি পরীক্ষায় কিছু প্রশ্ন করা হয়েছে যেগুলো অনাস বা মাস্টার্স পর্যায়ের। এতে করে তারা পরীক্ষায় পাশ করা নিয়ে শংকায় আছে।

এদিকে, ভর্তি পরীক্ষার দ্বিতীয় দিনে প্রথম শিফটে ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদভুক্ত ‘সি’ ইউনিটের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। পরীক্ষায় প্রশ্নপত্রের সাথে ওএমআর শিটের অমিলের অভিযোগ আনে শিক্ষার্থীরা। পরে প্রশ্নপত্রে দেখা যায়, মোট ৬০ নম্বরের এমসিকিউ প্রশ্নে ১ থেকে ৩০ ক্রমিক নম্বর পর্যন্ত ইংরেজী, ৩১ থেকে ৪৫ পর্যন্ত ব্যবসায় শিক্ষা, ৪৬ থেকে ৬০ পর্যন্ত হিসাব বিজ্ঞান বিষয় ক্রমবিন্যাস করা হয়। তবে ওএমআর শিটে প্রথমে ইংরেজী (১ থেকে ৩০) পরে হিসাব বিজ্ঞান (৩১ থেকে ৪৫) এবং ব্যবসায় শিক্ষা (৪৬ থেকে ৬০) বিষয়টি ক্রমবিন্যাস করা হয়। এতে প্রশ্নপত্র এবং ওএমআর শিটের সাথে অমিলের বিষয়টি উঠে আসে।

ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীরা জানায়, প্রশ্নপত্রে ৩১ থেকে ৪৫ নং এমসিকিউগুলোর ক্রমবিন্যাসে ব্যবসায় শিক্ষা থাকলেও মুলত এগুলো হিসাব বিজ্ঞান বিষয়ের। অপরদিকে প্রশ্নপত্রে ৪৬ থেকে ৬০ নং এমসিকিউগুলোর ক্রমবিন্যাস হিসাব বিজ্ঞান বিষয়ের দেয়া থাকলেও এগুলো মুলত ব্যবসায় শিক্ষা বিষয়ের। এছাড়া ২০ নম্বরের লিখিত পরীক্ষাতেও প্রশ্নপত্রের সাথে ওএমআর শিটেরও অমিল পাওয়া যায়। প্রশ্নপত্রে ৬১ থেকে ৮০ ক্রমিক নম্বর পর্যন্ত লিখিত পরীক্ষার প্রশ্নের ক্রমবিন্যাস করা হয়। তবে প্রশ্নপত্রে এই ৬১ থেকে ৮০ নম্বর পর্যন্ত ক্রমবিন্যাস করা হলেও ওএমআর শিটে ক্রমবিন্যাস করা হয় ১ থেকে ২০ পর্যন্ত।

এরপর গত মঙ্গলবার ‘সি’ ইউনিটের প্রশ্নপত্রের সাথে উত্তরপত্রের অমিল থাকায় বিষয়টি অনুসন্ধানে তদন্ত কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। একইসাথে ওই ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা কমিটিও বাতিল করা হয়। তদন্ত কমিটিকে পরবর্তী পাঁচ কার্যদিবেসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়।

এ দিকে এবারের ভর্তি পরীক্ষায় প্রশ্নপত্রে ভুল, নিয়মবর্হিভূত প্রশ্ন ও অসঙ্গতি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন মহলে তৈরী হয়েছে নানা তর্কবিতর্ক। অনেকে মনে করছেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যদি আরো বেশি সচেতন ও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতো তাহলে প্রশ্নপত্র নিয়ে এসব অসঙ্গতি এড়ানো সম্ভব হত।

এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিশ্ববিদ্যালয়ের এক জ্যেষ্ঠ অধ্যাপক বলেন, ‘প্রশ্নপত্র তৈরীর মত জায়গায় আমাদের আরো সতর্ক হতে হবে। এটি একটি স্পর্শকাতর দায়িত্ব। দক্ষ এবং যোগ্য শিক্ষক দিয়েই এই কাজগুলো করানো দরকার।’

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক হারুন উর রশিদ আসাকারী বলেন, ‘আমরা যেভাবে ভর্তি পরীক্ষা সম্পন্ন করার পরিকল্পনা নিয়েছিলাম, তাতে সফল হয়েছি। তবে কিছু অসঙ্গতি দেখা গেছে, যা নিরসনের চেষ্টা চলছে। ইতোমধ্যে আমরা তদন্ত কমিটিও গঠন করেছি।’

প্রসঙ্গত, গত ৪-৫ নভেম্বর ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক (সম্মান) শ্রেণির ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।