দখলদারিত্ব ও র্যাগিংমুক্ত হল-ক্যাম্পাস চান ঢাকা কলেজের ছাত্র-শিক্ষকরা
স্বৈরাচারমুক্ত স্বাধীন বাংলাদেশে সৃষ্ট মুক্ত পরিবেশে দেশ সংস্কারের সাথে সাথে ক্যাম্পাসের সার্বিক অবস্থাসহ সংস্কারমূলক উন্নত শিক্ষার পরিবেশ প্রত্যাশা করে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। তার ধারাবাহিকতায় দখলদারিত্ব ও র্যাগিংমুক্ত ক্যাম্পাস চান ঢাকা কলেজের ছাত্র- শিক্ষকবৃন্দ।
বিগত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দেশের প্রতিটি ক্যাম্পাসের রাজনৈতিক শক্তি অপব্যবহার করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের হলগুলোতে গেস্টরুম, গণরুমের মতো নিপীড়নমূলক ভয়ের সংস্কৃতি কায়েম করে ছাত্রলীগ। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মাধ্যমে তাদের পতনের পরে ইতোমধ্যে দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন ক্যাম্পাস ও হলগুলোতে রাজনীতিমুক্ত এবং নিপীড়নমূলক বিভিন্ন কর্মকাণ্ড বিলুপ্ত করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
ঢাকা কলেজের পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী ইমরান হোসাইন বলেন, সম্পূর্ণ ছাত্র রাজনীতিমুক্ত ক্যাম্পাস করতে হবে। র্যাগিংমুক্ত ও গেস্টরুম, গণরুমুক্ত ক্যাম্পাস চাই। শিক্ষকরা নিয়মিত ক্লাস নিবে। ছাত্র শিক্ষকদের সম্পর্ক বন্ধুর মতো হতে হবে। লাইব্রেরির জন্য অধিক বই এবং নিরাপদ পরিবেশ পড়ার জন্য রাখতে হবে। মাদকমুক্ত ক্যাম্পাস রাখতে হবে। ক্যাম্পাসে কোনে ধরনের সিগারেট বিড়ি, জর্দা তামাক নিষিদ্ধ করতে হবে। শেষে আমি চাই হলের খাবার এর মান উন্নত করতে হবে, এবং মিলরেট কমাতে হবে।
ঢাকা কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মোস্তাকিম বিল্লাহ বলেন, নিরাপদ ক্যাম্পাস চাই যেখানে অবাধ বিচরণ করা যাবে, স্বাধীনভাবে ছাত্রবান্ধব কাজ করা যাবে। উন্মুক্ত রাজনীতি চর্চা করা যাবে। গণরুম বা গেস্টরুম কালচার হলে চাই না। সকল শিক্ষার্থীর নিরাপদ আশ্রয় হোক হল। খাবারের মান বৃদ্ধি করা হোক।ক্যাম্পাসে র্যাগিং নিষিদ্ধ চাই এবং র্যাগিং করলে শাস্তির আওতায় আনতে হবে। র্যাগিং স্বীকার হওয়া শিক্ষার্থী জানে কত ভয়াবহ ট্রমার ভিতরে থাকতে হয়।
ঢাকা কলেজ অনার্স ক্লাস কমিটির আহবায়ক অর্থনীতি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান পারভীন সুলতান হায়দার বলেন, এ ব্যাপারে ছাত্ররা যা চাই তার সাথে আমরা একমত। আমরা চাই শুধু ছাত্ররা হলে থাকবে, কোন অছাত্র না। ছাত্ররা হলে থাকবে পড়াশোনা করার জন্য, এখানে কোন রাজনীতি হবে না। আমরাও ওটা চাই। শিক্ষাঙ্গনে শিক্ষার পরিবেশ থাকবে, আমরা ছাত্রদের স্বতঃস্ফূর্তভাবে পড়াতে পারবো। ওরাও আমাদের কাছে আসবে, সমস্যার কথা, পড়াশোনার কথা বলবে। আমরা সমস্যার সমাধান করে দিবো এরকমটা হওয়া উচিত বলে মনে করি। তাহলে আমরাও শান্তিতে চাকরি করতে পারবো ওরাও নিরাপদে কলেজ ক্যাম্পাসে এসে পাস করে যেতে পারবে। এটা আমার বিশ্বাস যদি সেরকম একটি পরিবেশ তৈরি হয়। আশা করি হবে।
ছাত্রাবাসের সিট বরাদ্দের বিষয়ে তিনি আরও বলেন, ছাত্ররা আমাদেরকে যে সমস্ত নীতিমালা আমাদের দিয়েছেন আমরা সে নীতিমালা মেনেই হলে সিট বরাদ্দ দেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি, আমরা ঢাকা কলেজে সব বিভাগীয় প্রধানরা। এর কোন ব্যতয় ঘটবে না। প্রথমত মেধা, দ্বীতিয় আর্থিক অস্বচ্ছলতা। আমরা এ বিষয়গুলো মেনে ফেয়ারলি হলের সিলেকশন দিবো, যেন কেউ বঞ্চিত না হয়। আমার সিট বরাদ্দের ক্ষেত্রে কোন আনফেয়ার হবে না ইনশাল্লাহ।
এসকল বিষয়ে সাউথ হলের প্রভোস্ট আনোয়ার মাহমুদের মন্তব্য জানতে চাইলে বলেন, সাধারণ শিক্ষার্থীদের সহযোগিতায় আমরা গণরুম, গেস্টরুম বাদ দিয়ে, যে রুমে যত জন শিক্ষার্থী থাকা যায় ততজন থাকার ব্যবস্থা করবো। কারণ এটা আমার দীর্ঘদিনের স্বপ্ন। এক রুমে অতিরিক্ত শিক্ষার্থী না থাকলে পড়ার একটা পরিবেশ আসবে।
এছাড়া এইচএসসির শিক্ষার্থীদের বিজয় ২৪ হলের মতো অন্যন্য হলে সমবন্টনের মাধ্যমে পড়ার একটি পরিবেশ তৈরী হবে। আমার বিশ্বাস এর মাধ্যমে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা একসময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে প্রতিযোগিতা করবে। হলের সিট রেসিয়ো অনুযায়ী বন্টন করা হবে। আমাদের নীতিমালায় দারিদ্র্যতা ও মেধার ভিত্তিতে হলের সিট বনৃটনের কথা বলে হয়েছে। আশা করি বিভাগগুলো সে অনুযায়ী সিট বন্টন করবে।