পদত্যাগের হিড়িক, ব্যতিক্রম খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি মাহমুদ হোসেন
শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর প্রায় সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিসি পদত্যাগের দাবি উঠলেও খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর মাহমুদ হোসেনের পদত্যাগের দাবি তোলেননি শিক্ষার্থীরা। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা তাদের বিপদের সময় পাশে থাকা ভিসিকেই স্বপদে রাখতে চান।
রবিবার (১৮ আগস্ট) বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্য প্রফেসর ড. মাহমুদ হোসেন পদত্যাগ করবেন এমন গুঞ্জনে বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থীরা। তারা উপাচার্যের দপ্তর অবরুদ্ধ করে রাখেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তারা জানান, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপচার্য দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করেছেন।
এ সময় উপাচার্য শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘ তোমাদের এই উপস্থিতি, তোমাদের দাবি; আমার শিক্ষকতা জীবনের এটি একটি বড় পাওয়া।
তিনি আরো বলেন, এখানে একটি টিম কাজ করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নে সবাই কাজ করেন। তোমরা যে বিষয় নিয়ে আসছো- তা আমি ভেবে দেখবো এবং এ বিষয়ে আমি আমার টিমের সাথে কথা বলে তারপর তোমাদের সাথে আবার কথা বসব। সেই পর্যন্ত তোমাদের সঙ্গে আছি। তোমরা শান্ত থাকো।
শিক্ষার্থীরা জানান, তিনি (উপাচার্য) তাঁর দায়িত্বকালীন সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়, শিক্ষার্থী, শিক্ষক-কর্মকর্তাসহ খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারকে অগ্রাধিকার দিয়েছেন। কখনো কোনো দলের স্বার্থ দেখা বা মনোভাব প্রকাশ করেননি। উল্টো ছাত্র-জনতার আন্দোলনে সব চাপ উপেক্ষা শিক্ষার্থীদের সুরক্ষায় ক্যাম্পাসে আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীকে ঢুকতে দেননি। অবকাঠামো, গবেষণা, শিক্ষা সব ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে শৃঙ্খলা ফিরেছে। তাই কোনো সিদ্ধান্তেই উপাচার্যকে পদত্যাগ করতে দেওয়া হবে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের সাত হাজার শিক্ষার্থী উপাচার্যের সঙ্গে থাকবে।
এর আগে, উপাচার্য কোটা আন্দোলনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত কঠিন অবস্থার মুখেও সাহসের সাথে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকতে দেননি কোনো পুলিশ, হতে দেননি রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ। ক্যাম্পাসে যাতে পুলিশ না ঢোকে সেজন্য সেই কঠিন চাপের মুখেও তিনি ছিলেন অনড়। এসময় একটি ফেসবুক স্ট্যাটাস ভাইরাল হয়। তাতে দেখা যায় উপাচার্য প্রফেসর মাহমুদ হোসেন অফিসে বসার একটি ছবির সাথে নীচে লেখা ‘খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে কোনো পুলিশ ঢোকবে না, এখানে আমিই প্রশাসন’। এটা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মনোবল আরও চাঙ্গা করে।
এদিনের পর পুলিশ কয়েকজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। এ খবর শোনার পরপরই উপাচার্য ছাত্রবিষয়ক পরিচালকের দপ্তরকে থানায় পাঠান। নিজে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ ( কেএমপি) কমিশনারসহ সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে তার বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের ছেড়ে দেওয়ার কথা বলেন। ছাত্র বিষয়ক পরিচালকের দপ্তরের পরিচালক ও সহকারী পরিচালকদেরকে নির্দেশনা দেন যতক্ষণ শিক্ষার্থীদের থানা থেকে ছেড়ে না দেওয়া হয় ততক্ষণ সেখানে থাকার।