আবু সাঈদ হত্যার বিচার চেয়ে আ.লীগ পন্থীদের তোপের মুখে বেরোবি শিক্ষক
আবু সাঈদ হত্যার বিচার চাওয়ায় রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়য়ের (বেরোবি) শিক্ষক ড ইলিয়াছ প্রামানিক উগ্র আওয়ামী লীগপন্থী শিক্ষকদের তোপের মুখে পরেন।
গত শনিবার (৩ আগস্ট) আবু সাঈদের হত্যাকে কেন্দ্র করে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ৭০-৮০ জন শিক্ষকের উপস্থিতিতে শিক্ষক সমিতির এক জরুরী সভায় শহীদ আবু সাঈদের হত্যার প্রেক্ষাপট, প্রশাসনের ব্যর্থতা, শিক্ষকদের উস্কানি মূলক আচরণসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনার সময় এমন ঘটনা ঘটে। সভার অধিকাংশ শিক্ষকের একটা দাবী খুবেই স্পষ্ট ছিল যে "সাঈদ হত্যার বিচার চাই"।
এসময় আবু সাঈদ হত্যার বিচারের প্রসঙ্গ টেনে ড. প্রামানিক বলেন, প্রোক্টরিয়াল বডির পদত্যাগ, ভিসির পদত্যাগ আবু সাঈদ হত্যার ন্যায় বিচারের চূড়ান্ত সমাধান নয়। আবু সাঈদ হত্যার ন্যায় বিচার তখনেই হবে যদি উপরের দিকে পরিবর্তন আসে। তখন কয়েকজন শিক্ষক জানতে চান উপরের দিক বলতে আপনি কাকে বুঝাচ্ছেন? উত্তরে ড প্রামানিক বলেন, সরকার পরিবর্তন। এই কথা বলা মাত্র উগ্র আওমীপন্থী কয়েকজন শিক্ষক উচ্চ গলায় চিৎকার শুরু করেন এ সরকার আমার সরকার, এ সরকার আমার সরকার । এ সময় সাধারণ শিক্ষকরা অনেকটা ভিতসন্ত্রস্থ হয়ে পরেন।
ড প্রামানিক বলেন, আমি একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। স্বাধীনভাবে মত প্রকাশের স্বাধীনতা আমার সাংবিধানিক অধিকার। আপনারা পারেন না আমার কণ্ঠ রোধ করতে। আমার বক্তব্য আপ্রসঙ্গিক হলে সমিতি আমার কথা এক্সপাঞ্চ করবে। আপনারা আমার দিকে তেরে আসছেন কেন? আমাকে আমার কথা বলতে দিন, বিরক্ত করবেন না।
তিনি বলেন,পুলিশ আমার ক্যাম্পাস থেকে ১০-১৫ হাত দূর থেকে আবু সাঈদের পাতানো বুকে গুলি করে ছেলেটির বুক ঝাঁজরা করে দেয়, ছেলেটি ওখানেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পরে। সেই সময় হেলমেট পরে উগ্র আওমীলিগ পন্থি একজন শিক্ষক পুলিশের সাথে অবস্থান করেছিলেন। সাঈদ হত্যার আগের দিন সাধারণ শিক্ষার্থীদের রাজাকারের সন্তান আখ্যা দিয়ে তাঁদের কোন ক্লাস নিবেন না বলে একজন শিক্ষক ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন যা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যাপক অসন্তোষ ও ক্ষোভের সঞ্চার করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন প্রশাসনিক দায়িত্বে না থেকেও সেই দিন পুলিশের সাথে হেলমেট পরে ঐ শিক্ষকের অবস্থান স্বাভাবিক ভাবে সবার মনে প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।
আলোচনার এক পর্যায়ে ড ইলিয়াছ প্রামানিক তাঁর আলোচনায় - আবু সাঈদ হত্যার ন্যায় বিচার হওয়ার সম্ভবতার কিছু দিক তুলে ধরেন। তিনি তাঁর বক্তৃতায় অতীতের কিছু উদাহরণ তুলে ধরেন। বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি আব্দুল জলিল স্যারের দুর্নীতির বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে গিয়ে রাস্তায় শুয়ে ড ইলিয়াছ প্রামানিকে লাঠি দিয়ে পিঠিয়ে আহত করে পুলিশ, সেদিন তিনি সৌভাগ্যক্রমে বেঁচে যান। হাঁসপাতালে দীর্ঘ চিকিৎসার পর সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরেন। বাসায় এসেই তিনি জানতে পারেন তাঁর নামে রাষ্ট্রীয় সম্পদ ভাংচুরের মিথ্যা ফৌজদারি মামলা হয়েছে। বিচার তো দুরের কথা ভিসি,প্রোক্টর সব পরিবর্তন হওয়ার পরেও মিথ্যা মামলাটি নিষ্পত্তি হতে দীর্ঘ সময় লেগেছিল।
এরপর ড ইলিয়াছ প্রামানিক শহীদ আবু সাঈদের ব্যাপারে কিছু সুস্পষ্ট দাবী কাছে তুলে ধরেন-
১। জাতিসঙ্ঘের অধীনে আবু সাঈদ হত্যার নিরপেক্ষ তদন্ত করতে হবে।
২। বিশ্ববিদ্যালয়ের যে সকল শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী এই হত্যাকাণ্ডের প্রেক্ষাপট তৈরি করেছিলেন তাঁদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
৩। আবু সাঈদের পরিবারকে মাসিক ৭৫০০০ টাকা করে দিতে হবে, বুয়েট যেমন আবরারের পরিবারকে দিচ্ছে।
৪। ১৬ জুলাইকে বেরোবিতে শোক দিবস ও সাধারণ ছুটি ঘোষণা করতে হবে।
৫। আবু সাইদের নামে ছাত্রদের একটি হল নির্মাণ করতে হবে।
৬। আবু সাঈদকে হত্যার হুমকি ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা যে ছাত্র সংগঠনের দ্বারা নির্যাতনের শিকার হয়েছিল তাঁদের রাজনীতি ক্যাম্পাসে নিষিদ্ধ করতে হবে।
আলোচনা সভায় অবস্থানরত প্রকৌশল ও প্রযুক্তি অনুষদের ডিন ড. মো: মিজানুর রহমান বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, ড. ইলিয়াছ প্রামানিকের সরকার পরিবর্তনের প্রস্তাবে গণিত বিভাগের মসিউর রহমান,গণসংযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের তাবিউর রহমান , মার্কেটিং বিভাগের শেখ মাজেদুল হক, কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের জসিম, ফাইন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগের সাখাওয়াতসহ সভায় উপস্থিত অর্ধেকের কাছাকাছি শিক্ষক বিষয়টির তীব্র বিরোধিতা করেছিল। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিষয় এর মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকার কথা বলেছিলেন।
এ বিষয়ে ইতিহাস ও প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ইউসুফ বলেন, একজন শিক্ষক তার অভিমত ব্যক্ত করতেই পারেন, তাই বলে তার উপর এমন চড়াও হওয়া নেক্কারজনক ঘটনা। সেদিন ইতিহাস ও প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের গোলাম রব্বানী, লোক প্রশাসন বিভাগের জোবায়ের ইবনে তাহের বিষয়টির ঘোর বিরোধিতা করে। শিক্ষক সমিতির সভাপতি বিজন মোহন চাকি এবং সেক্রেটারি আসাদ মন্ডল প্রস্তাবটি সরাসরি নাকোচ করেছিল।
উল্লেখ্য, সেইদিনে প্রোক্টর মোঃ শরিফুল ইসলাম তাঁর কর্মকাণ্ডের কথা বিস্তারিত তুলে ধরলে উপস্থিত শিক্ষকগন প্রোক্টরিয়াল বডির অনতিবিলম্বে পদত্যাগ দাবী করেন। অনেকে ভিসির অপসারণ দাবী করেন।