অনির্দিষ্টকালের জন্য খুবি বন্ধ ঘোষণা, হল ছাড়ার নির্দেশ
কোটা সংস্কারপন্থি শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনকে কেন্দ্র করে এবার অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় (খুবি)। একই সাথে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির সবগুলো আবাসিক হলও। পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের জরুরি সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্তানুযায়ী সকল শিক্ষা কার্যক্রম পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ থাকবে। আজ ১৭ জুলাই (বুধবার) বিকাল ৫টার মধ্যে ছাত্রদের এবং আগামীকাল ১৮ জুলাই (বৃহস্পতিবার) সকাল ১০.৩০ মিনিটের মধ্যে ছাত্রীদের হল ত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন: স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ে ছুটি ঘোষণা করার এখতিয়ার আছে ইউজিসির?
এর আগে মঙ্গলবার দুপুরের পর কোটা সংস্কারের দাবিতে চলমান আন্দোলনে থাকা এক শিক্ষার্থীকে গুলি করে পুলিশ। পরে ঘটনাস্থলেই মৃত্যুবরণ করেন আবু সাঈদ বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) ওই শিক্ষার্থী। নিহত আবু সাঈদ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ২০১৯-২০ সেশনের শিক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয়টির কোটা আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক ছিলেন।
এরপর রাতে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনে হামলা এবং আগুনের ঘটনা ঘটেছে। এরপর জরুরি সিন্ডিকেটে বসে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বৈঠকে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছুটির পাশাপাশি হলও বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। পরবর্তীতে রাত ১০.০০ টার পর একটি জরুরি নির্দেশনায় দেশের সকল সরকারি এবং বেসরকারি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের নির্দেশনা জানিয়েছে দেশের উচ্চশিক্ষার তদারক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি)।
আরও পড়ুন: সব স্কুল কলেজ মাদ্রাসা ও পলিটেকনিক অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ
একই সাথে ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে দেশের সব মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছুটি ঘোষণার কথা জানায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ফলে ছুটির আওতায় রয়েছে—দেশের সব মাধ্যমিক স্তর থেকে শুরু করে উচ্চশিক্ষাস্তর পর্যন্ত সব ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। তবে ছুটি ঘোষণা করা হয়নি দেশের প্রাথমিক স্তরের শিক্ষালয়গুলোতে।
এর আগে মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) চলমান আন্দোলনে সারাদেশে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায় এখন পর্যন্ত সাতজন নিহত হয়েছেন। মঙ্গলবার সকাল থেকেই রাজধানীসহ সারাদেশে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষ খবর পাওয়া যায়। নিহতের মধ্যে চট্টগ্রামে তিনজন, ঢাকায় তিনজন ও রংপুরে একজন রয়েছে।
এদিন বেলা তিনটার দিকে চট্টগ্রাম নগরের মুরাদপুরে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা হয়। এ সময় কয়েকজন অস্ত্রধারীকে গুলি করতে দেখা যায়। শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে হাতবোমার বিস্ফোরণও ঘটানো হয়। যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা এ হামলা চালিয়েছেন বলে শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন।
আরও পড়ুন: কোটা আন্দোলনের সংঘর্ষে আরেকজনের মৃত্যু, নিহত বেড়ে ৭
চট্টগ্রামে নিহত তিনজনের মধ্যে দুজনের পরিচয় জানা গেছে। তাঁরা হলেন মো. ফারুক (৩২) ও মো. ওয়াসিম (২২)। ফারুক একটি আসবাবের দোকানের কর্মচারী এবং ওয়াসিম চট্টগ্রাম কলেজের ছাত্র ও কলেজ শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক বলে জানা গেছে। অপরজনের পরিচয় জানা যায়নি। এ ছাড়া আহত অন্তত ২০ জন হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।
এরপর বিকেলে রাজধানীর ঢাকা কলেজের সামনে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীদের সংঘর্ষের মধ্যে এক যুবক নিহত হয়েছেন। তাঁর মাথায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। নিহত ওই যুবককে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। তাৎক্ষণিকভাবে তাঁর নাম-পরিচয় জানা যায়নি। এছাড়াও সন্ধ্যায় সিটি কলেজের সামনে থেকে রক্তাক্ত একজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
এর আগে রবিবার বিকেলে প্রধানমন্ত্রীর চীন সফর শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধার নাতি-পুতিরা কোটা পাবে না, তো কি রাজাকারের নাতি-পুতিরা পাবে?’ এমন বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদে মুখর হয়ে পড়েন।
আরও পড়ুন: অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ বেরোবি, দুপুরের মধ্যে হল হল ত্যাগের নির্দেশ
এরপর সোমবার রাত থেকেই কোটা সংস্কার ইস্যুতে চলমান আন্দোলন নতুন রূপ পেতে শুরু করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন হল থেকে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। এরপর রাত দুইটার দিকে তারা হলে ফিরে যান এবং আজ সকালে থেকেই আন্দোলন নতুন দানা বাধতে থাকে। পরবর্তীতে বিকেলের দিকে ছাত্রলীগ আন্দোলনরত সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালালে সংঘর্ষ ও আহত হওয়ার ঘটনা ঘটে। এখন পর্যন্ত নিহতের পাশাপাশি কয়েক শতাধিক শিক্ষার্থীর আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।