০৬ জুলাই ২০২৪, ১৮:২৮

‘প্রত্যয়’ স্কিম প্রত্যাহার আন্দোলন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের আত্মমর্যাদার লড়াই

অধ্যাপক ড. মো. নিজামুল হক ভূইয়া  © টিডিসি ফটো

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের উচ্চতর স্বতন্ত্র বেতন স্কেল প্রবর্তন, সুপার গ্রেডে অন্তর্ভুক্তকরণ ও সার্বজনীন পেনশন স্কিম ‘প্রত্যয়’ হতে শিক্ষকদের প্রত্যাহারের দাবিতে দেশব্যাপী একযোগে সর্বাত্মক কর্মবিরতি পালন করছেন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। এর আগে গত ৩০ জুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতির ঘোষণা দেয় বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন। এরপর একে একে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি এই কর্মসূচিতে একাত্মতার ঘোষণা দেয়। 

ইতোমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের অচলাবস্থা দূর করতে শিক্ষকদের সাথে গত বৃহস্পতিবার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। তবে সেই বৈঠকও পরবর্তীতে স্থগিত করা হয়। শিক্ষকরা জানিয়েছেন, দাবি আদায় না হলে আগামীকাল (৭ জুলাই) থেকে পুনরায় কর্মবিরতি শুরু করবেন তারা। শিক্ষক নেতারা মনে করেন, ‘প্রত্যয়’ স্কিম প্রত্যাহার আন্দোলন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের আত্মমর্যাদার লড়াই। তাই যেকোনো মূল্যে শিক্ষকরা দাবি আদায়ে সোচ্চার ভূমিকা পালন করবেন।

ঢাবি শিক্ষকদের আন্দোলনের চিত্র

শিক্ষকদের প্রত্যয় স্কিম প্রত্যাহারের দাবিতে চলমান আন্দোলনের সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে অবগত করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি এবং শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের মহাসচিব অধ্যাপক ড. মো. নিজামুল হক ভূইয়ার সাথে কথা হয় দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের। তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার আমাদের বৈঠক হওয়ার কথা ছিল এবং আমরা সে অনুযায়ী প্রস্তত ছিলাম। কিন্তু সকাল ১০ টার দিকে সরকারের পক্ষ থেকে আমাদের জানানাে হয় মিটিং আপাতত হবে না। তবে শীঘ্রই আমাদেরকে এ বিষয়ে আবারও আহ্বান করা হবে। সেখানে ইতিবাচক ফলাফল আসবে বলে আমরা আশাবাদী। 

আমাদের মূল দাবি হলো উচ্চতর স্বতন্ত্র বেতন স্কেল বাস্তবায়ন। পৃথিবীর সকল দেশে শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতন কাঠামো রয়েছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো একমাত্র বাংলাদেশে শিক্ষকরা এ বিষয়ে চরম অবহেলিত। আমাদের কোনো স্বতন্ত্র বেতন কাঠামো নেই। এমনকি দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে নিম্নতর বেতন স্কেল বাংলাদেশের শিক্ষকদের। এমনকি বাংলাদেশ থেকেও দরিদ্র রাষ্ট্র যেমন আলজেরিয়া, ইথিওপিয়া, ব্রাজিলেও এই কাঠামো রয়েছে। 

কিন্তু আমি বলতে চাই শিক্ষার্থীদের শ্রেণী কার্যক্রমের এই স্পিড কারা থামিয়েছে? তাদের প্রশ্ন করুন শিক্ষার্থীদের এই ক্ষতির দায়ভার কারা নেবে? কারা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে ভুল বুঝিয়েছে? যার জন্য আজকে আমাদের রাস্তায় নেমে আসতে হলো? আমরা রাস্তায় নেমে আসতে চাইনি-অধ্যাপক নিজামুল হক ভূইয়া, শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের মহাসচিব

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের প্রত্যয় স্কিমে অন্তর্ভুক্তির বিরোধিতা করে এই অধ্যাপক বলেন, আমরা শিক্ষকরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি। আমাদেরকে যদি বিশেষ কোন কাঠামোতে অন্তর্ভুক্ত করতেই হয় স্টেকহোল্ডার হিসেবে আমাদের কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করার প্রয়োজন ছিল। সেটি না করে কোন প্রকার পরামর্শ ছাড়া আপনারা হঠাৎ সকাল বেলা উঠেই যদি বলেন আপনাদের জন্য এই প্রত্যয় স্কিম, এটিই আপনাদের মানতে হবে। তাহলে আমি বলব এটি কোন যৌক্তিক বিবেচনা নয়। আমরা প্রত্যয় স্কিমের বিরোধী নয়, প্রত্যয় স্কিমে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকরা থাকবে না, এটিই হলো আমাদের দাবি। প্রত্যয় স্কিমকে আমরা স্বাগত জানাই। তবে যাদের জন্য প্রযোজ্য এখানে তাদের অন্তর্ভুক্ত করা হোক। 

শিক্ষকদের আন্দোলনের যথার্থতা তুলে ধরে তিনি বলেন, এই আন্দোলন আমাদের জন্য নয়, প্রতিভাবান শিক্ষার্থী যারা রয়েছে, আগামী দিনে যেন একটা সম্মানজনক পেশা হিসেবে শিক্ষকতায় আসতে পারে তাদের জন্যই আমাদের এই আন্দোলন। স্বাধীনতা যুদ্ধে আমাদের পূর্বসূরিদের রক্ত ঋণের বিনিময়ে আমাদের আজকের এই অবস্থান। তাদের পরে জাতি গঠনে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের মতো অবদান অন্য কারো নেই। 

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক এবং বুদ্ধিজীবীদের ছাড়া জাতি বুদ্ধিহীন। আজকে যখন আমরা দেশের জন্য কিছু দিতে চাচ্ছি তখনি একটি স্বার্থান্বেষী মহল সুকৌশলে এটিকে ভিন্নভাবে উপস্থাপন করার চেষ্টা করছে। কিন্তু আমি মনে করি আমরা সরকারের সাথে বসে আমাদের বক্তব্য উপস্থাপন করলে আশা করি তারা আমাদের বক্তব্যের সাথে একমত হবেন। 

শিক্ষার্থীর অ্যাকাডেমিক কার্যক্রমে ব্যাঘাত ঘটায় দুঃখ প্রকাশ করে তিনি বলেন, বিষয়টি অনাকাঙ্ক্ষিত। কিন্তু আমরা ত রাস্তায় নেমে আন্দোলন করার কথা ছিল না। এমনকি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের মতো আবেগপূর্ণ অনুষ্ঠানে আমরা উপস্থিত হতে পারিনি। যেখানে নবীনরা ক্লাসে আসবে, নতুন শিক্ষাকার্যক্রম শুরু হবে। যদিও তারা ক্লাস শুরু করবে কিন্তু যেই স্পিড ছিল সেটা পুনরায় আসবে না। কিন্তু আমি বলতে চাই শিক্ষার্থীদের শ্রেণী কার্যক্রমের এই স্পিড কারা থামিয়েছে? তাদের প্রশ্ন করুন শিক্ষার্থীদের এই ক্ষতির দায়ভার কারা নেবে? কারা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে ভুল বুঝিয়েছে? যার জন্য আজকে আমাদের রাস্তায় নেমে আসতে হলো? আমরা রাস্তায় নেমে আসতে চাইনি। 

জবি শিক্ষকদের আন্দোলনের চিত্র

শিক্ষকদের আন্দোলন নিয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী যে স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখিয়েছেন, মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি হিসেবে শিক্ষকরা পাঠদানের মাধ্যমে সেটার বাস্তবায়নে নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছে। কিন্তু বর্তমানে আমরা একটি যৌক্তিক দাবি নিয়ে কথা বলছি। বর্তমানে দেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের নিয়ে আন্দোলন অব্যাহত রেখেছি। শীঘ্রই এ বিষয়ে সরকারের সাথে আমাদের বৈঠক হবে। কাজেই দাবি বাস্তবায়নের বিষয়ে আমরা আশাবাদী। আমরা বিশ্বাস করি দ্রুতই এ বিষয়ে ইতিবাচক ফলাফল আসবে।

শিক্ষক আন্দোলনে দলমতের কোন স্থান নেই দাবি করে তিনি বলেন, শিক্ষকরা প্রথমে শিক্ষক। আমরা সবাইকে শিক্ষক হিসেবে দেখছি। এখানে আমরা কোনো রাজনীতি দেখছি না। কাজেই কোনোপ্রকার দ্বিধাবিভক্তি করার চেষ্টা করলে সেটি আমাদের আন্দোলনকে প্রভাবিত করবে না।