শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দাবিতে উত্তাল ববি ক্যাম্পাস
শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দাবি নিয়ে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মবিরতি, অবস্থান কর্মসূচি, মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করতে দেখা গেছে। তাদের আলাদা আলাদা কর্মসূচিতে উত্তাল বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় (ববি) ক্যাম্পাস।
প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকুরিতে কোটা পুনর্বহাল নিয়ে হাইকোর্টের আদেশের প্রেক্ষিতে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করেছে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) শিক্ষার্থীরা। সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে বেলা ১২ টা থেকে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেন তারা। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা চার দফা দাবি উত্থাপন করেন। দাবি আদায় না হলে আরো কঠোর আন্দোলনের যাওয়ার ঘোষণা দেন তারা।
দাবিগুলো হলো- ২০১৮ সালে ঘোষিত সরকারি চাকুরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিল ও মেধাভিত্তিক নিয়োগের পরিপত্র বহাল রাখতে হবে। ১৮ এর পরিপত্র বহাল সাপেক্ষে কমিশন গঠন করে দ্রুত সময়ের মধ্যে সরকারি চাকুরিতে (সকল গ্রেডে) অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাদ দিতে হবে এবং কোটাকে ন্যূনতম পর্যায়ে নিয়ে আসতে হবে। সেক্ষেত্রে সংবিধান অনুযায়ী কেবল অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর কথা বিবেচনা করা যেতে পারে। সরকারি চাকরির নিয়োগ পরীক্ষায় কোটা সুবিধা একাধিকবার ব্যবহার করা যাবে না এবং কোটায় যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া গেলে শূন্য পদগুলোতে মেধা অনুযায়ী নিয়োগ দিতে হবে। দুর্নীতিমুক্ত, নিরপেক্ষ ও মেধাভিত্তিক আমলাতন্ত্র নিশ্চিত করতে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, দীর্ঘদিন যাবত বিদ্যমান কোটা পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার মাধ্যমে এটা এখন পরিষ্কার যে এই কোটা পদ্ধতি সম্পূর্ণ অযৌক্তিক এবং অসাংবিধানিক।কারণ সংবিধানে বর্ণিত কোটা পদ্ধতি কোনোভাবেই এহেন নগ্ন বৈষম্যকে সমর্থন করে না সেটা বিভিন্ন বিশ্লেষণের মাধ্যমে ইতোমধ্যেই প্রমাণিত হয়েছে। যেই মহান চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে এদেশের মানুষ জীবন বাজি রেখে দেশকে স্বাধীন করেছে সুখী-সমৃদ্ধ এবং বৈষম্যহীন সমাজ গড়বার লক্ষ্যে সেই মহান চেতনার দোহাই দিয়ে যদি আবার দেশকে মেধাহীন এবং বৈষম্যের আঁতুড়ঘর বানানোর চেষ্টা করা হয়, সচেতন ছাত্রসমাজ তা কখনোই মেনে নিবেনা। আমরা আমাদের জীবন দিয়ে হলেও এই বৈষম্যমূলক কোটা পদ্ধতির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিবাদ অব্যাহত রাখব।
২০২০-২ সেশনের শিক্ষার্থী মাইনুল ইসলাম বলেন, আমাদের এ আন্দোলন সকল চাকরিতে সকল বৈষম্যমূলক কোটা বাতিলের জন্য। আমরা চাই মেধাভিত্তিক নিয়োগ পদ্ধতি। এই স্বাধীন বাংলাদেশের মেধাবীরা বৈষম্যের শিকার, তাঁদের যোগ্যতার মূল্যায়ন হচ্ছে না। এজন্য প্রয়োজনে কোনো বিজ্ঞ কমিশন গঠন করে, এমন একটা নিয়োগ পদ্ধতি প্রণয়ন করা দরকার যেখানে একই সাথে মেধাবীরা বঞ্চিত হবে না এবং পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীও সুবিধা পাবে। তবে এখন যে 'তেলা মাথায় তেল দেয়া" নিয়োগ পদ্ধতি এটাকে বাদ দিতে হবে।
এদিকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের জারিকৃত পেনশনসংক্রান্ত ‘বৈষম্যমূলক প্রজ্ঞাপন’ প্রত্যাহারের দাবিতে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি সর্বাত্মক কর্মবিরতি পালন করছে।গত রবিবারের ঘোষণা অনুযায়ী অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠদান-পরীক্ষা বন্ধ থাকবে বলে ঘোষণা দেন বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষক সমিতি। অন্যদিকে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় অফিসার্স এসোসিয়েশন ও ববির ১১-২০ কল্যাণ পরিষদও বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও কর্মবিরতি পালন করেন।এদিকে শিক্ষার্থীরা কোটা বাতিলের দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে। সোমবার (১ জুলাই) সকাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের গ্রাউন্ডে এ কর্মসূচিগুলো পালন করেছেন তারা।
এ সময় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ড. তারেক মাহমুদ আবীর জানান, আমরা দীর্ঘদিন একটি শান্তিপূর্ণভাবে এই পেনশনসংক্রান্ত 'বৈষম্যমূলক প্রজ্ঞাপন' প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে আসছি।সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের একই যৌক্তিক দাবি জানিয়ে আসছে।আমাদের দাবি যখনই সরকার মেনে নিবে,আমরা তখনই আমাদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন থেকে সরে আসবো। ‘বৈষম্যমূলক’ প্রত্যয় স্কিম থেকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় সমূহকে বাদ দেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি আমাদের অনুরোধ থাকবে।
আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় অফিসার্স ফেডারেশন পূর্বঘোষিত কর্মসূচির অন্তর্ভুক্তিতে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় অফিসার্স এসোসিয়েশনের আহ্বানে ১, ২, ৩ ও ৪ জুলাই পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালনের ঘোষণা দেন। অফিসার্স এসোসিয়েশনের সভাপতি বাহাউদ্দিন গোলাপ জানান, আমরা আমাদের দাবি অনেক আগে থেকেই জানিয়ে আসছি। সর্বজনীন পেনশন স্কিম বা বৈষম্যমূলক প্রজ্ঞাপন' প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে আসছে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তারা।আমরা স্মারক লিপি,মানববন্ধন করেছি।আমি মন করি,সরকার বিষয়টি উপলব্ধি করে এ ধরনের বৈষম্য দুর করার পদক্ষেপ নিবেন।যদি আমাদের দাবির সমাধান না করা হয়,তাহলে আগামী ৭ জুলাই থেকে সর্বাত্মক কর্মবিরতি বা লাগাতার কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে।
সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থার প্রজ্ঞাপন অবিলম্বে প্রত্যাহার এবং বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের প্রণীতব্য অভিন্ন নীতিমালা বাতিলের দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্মচারীরাও কর্মবিরতি পালন করেছে। ১১-২০ কল্যাণ পরিষদের সভাপতি মো. আরিফ সিকদার জানান, আমাদের কর্মবিরতি চলমান থাকবে,যতদিন আমাদের দাবি বাস্তবায়িত না হবে।