প্রায় দুই মাস পর বন্ধ দরজা খুলেছে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের
উপাচার্য অধ্যাপক ড. এএফএম. আবদুল মঈনের সঙ্গে শিক্ষক সমিতির দ্বন্দ্বে দীর্ঘদিন বন্ধ ছিল কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়। অবশেষে আজ রবিবার (২৩ জুন) প্রায় দুই মাস পর খুলেছে বিশ্ববিদ্যালয়টির বন্ধ দরজা। তবে শিক্ষক সমিতি বলছে, তারা ক্লাসে ফিরলেও কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন। আর উপাচার্যের আশা, আজকে খোলার মাধ্যমে ক্যাম্পাসটিতে শিক্ষার স্বাভাবিক ফিরবে।
পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ক্লাসে ফিরলেও তারা দুই ঘণ্টা কর্মবিরতি পালন করবেন। এছাড়া ২০ জুলাইয়ের মধ্যে তাদের দাবি বাস্তবায়ন না হলে ফের ক্লাস-পরীক্ষা নিয়ে তারা নতুন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন।
জানা যায়, ৭ দফা দাবিতে শিক্ষক সমিতি গত ১৩ থেকে ২৩ এপ্রিল পর্যন্ত দফায় দফায় শ্রেণি পাঠদান থেকে বিরত থাকে। পরে দুদিনের জন্য ক্লাসে ফিরলে শিক্ষকদের উপর হামলার ঘটনায় ফের ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দেয় শিক্ষক সমিতি। এরপর সর্বশেষ গত ৩০ এপ্রিল ৯৩তম সিন্ডিকেট মিটিংয়ে অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়টি বন্ধ ঘোষণার সিদ্ধান্ত হয়।
খোলার প্রথম দিন বিশ্ববিদ্যালয় ঘুরে দেখা যায়, দীর্ঘ ছুটি কাটিয়ে ক্লাসে ফিরেছেন বেশিরভাগ শিক্ষক-শিক্ষার্থী। প্রশাসনিক ভবনে ব্যস্ত সময় পার করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তবে ঈদের ছুটি কাটিয়ে এখনো কিছু শিক্ষার্থী ক্লাসে ফেরেননি। সংশ্লিষ্টদের আশা, খোলার পর আগামী সপ্তাহের মধ্যে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের পদচারণা মুখর হয়ে উঠবে পুরো ক্যাম্পাস।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থী সাইফুল ইসলাম বলেন, গতকাল রাতে হলে এসেছি। আজ ক্লাস শুরু হয়েছে। ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের সেরকম আনাগোনা নেই। আগামী সপ্তাহের মধ্যে ক্যাম্পাস শিক্ষার্থীদের আনাগোনা বেড়ে যাবে। আশা থাকবে উপাচার্য ও শিক্ষক সমিতির দ্বন্দ্ব কেটে যাবে। আর শিক্ষকদেরও পূর্বের মতো কোনো ধরনের ঝামেলা আমাদের শিক্ষার্থীদের মুখোমুখি হতে হবে না।
শিক্ষক প্রতিনিধিরা জানান, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শিক্ষকরা ক্লাসে ফিরেছেন। শিক্ষার্থীদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে শিক্ষার্থীদের সাথে সমন্বয় করে শনিবারে অনলাইনে ক্লাস নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে উপাচার্যের অপসারণ দাবিতে দুপুর ১২টা থেকে ২টা পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি পালন কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে। দাবি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত নতুন নিয়োগও বন্ধ রাখতে হবে।
শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. আবু তাহের বলেন, শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করে আমরা ক্লাসে ফিরেছি। উপাচার্যের কথায় আমরা বিশ্বাস রাখতে পারছি না। আমাদের দাবিগুলো পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত প্রতিদিন ২ ঘণ্টা কর্মবিরতি থাকবে। দুপুর ১২টা থেকে ২টা পর্যন্ত শিক্ষকরা প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করবেন। দাবিগুলো বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত আমরা এই অবস্থান কর্মসূচি পালন করে যাব।
জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এএফএম. আবদুল মঈন বলেন, আমরা শিক্ষকদের সকল দাবি দাওয়া মেনে নিয়েছি। এর বাইরে কিছু দাবি রয়েছে, যেগুলো আসলে পলিসি রিলেটেড। সেগুলোর জন্য কমিটি গঠন করে দিয়েছি। কমিটিগুলো এ বিষয়ে কাজ করছে। যেহেতু শিক্ষকদের দাবিগুলো মেনে নেওয়া হয়েছে সেক্ষেত্রে আমরা আশা রাখবো, শিক্ষকরা এখন থেকে ক্লাসে নিয়মিত হবেন।
শিক্ষকরা ক্লাসে ফিরলেও তাদের আন্দোলন অব্যাহত রাখার বিষয়টি উপাচার্যের দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, প্রশাসন শিক্ষকদের দাবি মেনে নিয়েছে। এখন শিক্ষকদের কাজ তারা ক্লাসে পাঠদান করবেন, গবেষণা করবেন। দাবি-দাওয়া মেনে নেওয়ার পরও শিক্ষকদের আন্দোলনের যৌক্তিকতা আছে কিনা, সে বিষয়ে আমরা বলতে পারবো না।