সার্টিফিকেট পেতেই ২৫ বছর, কেন চাইব না ৩৫?
তরুণদেরকে ৩০-এর গণ্ডিতে বেঁধে রাখা হচ্ছে! অথচ মধ্যম আয়ের ও উন্নত দেশের স্বপ্ন দেখতে হলে সব তরুণের মেধা কাজে লাগানো সবচেয়ে বেশি জরুরি। লিখেছেন- সাধন সরকার
বতর্মানে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ১৮-৩০ বছর। তবে মানসম্মত চাকরি (১ম-২য় শ্রেণি) পেতে হলে অনার্স-মাস্টার্স শেষ করতে করতে প্রায় ২৫-২৬ বছর লেগে যায়। আগের চেয়ে গড় আয়ু বেড়েছে (বতর্মানে ৭২ বছর)। বেড়েছে অবসরের বয়সসীমাও। তবে কেন চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩০ এ থমকে থাকবে?
পৃথিবীর ১৬০ টিরও অধিক দেশে (রাশিয়া, যুক্তরাজ্য, কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, সুইডেন, ভারতসহ অধিকাংশ উন্নত দেশে) চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩০ এর অধিক। পাশ্ববর্তী ভারতের পশ্চিমবঙ্গে চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৪০, রাশিয়াতে অবসরের আগের দিনও সরকারি চাকরিতে প্রবেশে করা যায়। আফ্রিকায় কোনো সীমাবদ্ধতা নেই। যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় কোনো কোনো ক্ষেত্রে ৫৯ বছরের আগের যে কোনো সময় চাকরিতে প্রবেশ করা যায়। বিশ্ববিদ্যালয় বা কলেজের একাডেমিক লেখাপড়া শেষ করতে সেশনজট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ক্ষমতার দ্বন্দ্ব প্রভৃতি কারণে প্রায় ২৬ বছর লেগে যাচ্ছে! একাডেমিক পড়াশোনা শেষ করতে করতে এবং চাকরির পড়াশোনা শুরু করতে করতে বয়স ৩০ পার হয়ে যাচ্ছে। ফলে লক্ষ লক্ষ তরুণ চাকরি না পেয়ে হতাশায় ভুগছেন।
বাস্তবতা হলো, বতর্মানে লক্ষ লক্ষ ছেলেমেয়ের উচ্চশিক্ষা আছে, সনদ আছে কিন্তু চাকরি নেই। বয়স ৩০ পার হওয়া মানে অজির্ত সার্টিফিকেট মেয়াদ শেষ! সহজ কথায়, একজন তরুণকে ৩০ এর গণ্ডি মধ্যে বেঁধে রাখা হচ্ছে! ফলে বয়স ৩০-এর মধ্যে চাকরি না পাওয়া একজন তরুণকে নিমর্ম বাস্তবতার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। অথচ মধ্যম আয়ের ও উন্নত দেশের স্বপ্ন দেখতে হলে সব তরুণের মেধা কাজে লাগানো সবচেয়ে বেশি জরুরি! তাই সময়ের দাবি চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৩৫ করা হোক। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ‘শ্রমশক্তি জরিপ ২০১৬-১৭’ অনুসারে বতর্মানে প্রায় ২৭ লাখ বেকার। এদের প্রায় অধের্ক অংশই স্নাতক-স্নাতকোত্তর শেষ করা চাকরিপ্রত্যাশী। বতর্মানে শিক্ষিতদের হার বেড়েই চলেছে এবং প্রত্যেক বছর গত বছরের চেয়ে আরও বেশি চাকরিপ্রত্যাশী চাকরির বাজারে প্রবেশ করছে।
বেকারত্বের জ্বালা সহ্য করতে না পেরে অনেকে সামাজিক অপরাধে জড়িয়ে পড়ছেন। অনেক মেধা আবার বিদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে। ২০১১ সালে সরকারি চাকরিতে অবসরের বয়সসীমা ২ বছর বাড়িয়ে ৫৯ বছর করা হয়। এ ছাড়া অন্যান্য কিছু পেশায় কমর্কতাের্দর অবসরের বয়স আরও বেড়েছে, অথচ নিচের দিকে প্রবেশের বয়স বাড়েনি। ফলে ভারসাম্য না রাখার ফলে শুধু বেকারত্ব বেড়েছে, বেড়েছে তরুণদের হতাশা। চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানো মানে তো চাকরি দেওয়া নয়। বরং একটি সম্ভাবনাময় শেষ হওয়া জীবনগাড়ির চাকা নতুন করে সচল করা। এতে বাড়তি টাকার অপচয়ও হবে না। যে যার মেধা ও যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরি পাবে। তাছাড়া একটু বেশি বয়সে চাকরিতে প্রবেশ করলে জ্ঞানের চচার্ও অব্যাহত থাকবে। বিভিন্ন রাষ্ট্রে বেকার তরুণদের জন্য বেকার ভাতা চালু আছে। কিন্তু আমাদের দেশে বেকার ভাতা না হোক, অন্তত চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়িয়ে তরুণদের বেকারত্বের হাত থেকে তো মুক্তি দেওয়া যেতে পারে!
সব দিক বিবেচনা করে চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ বছর করার সুপারিশ করেছে (একাধিকবার) জনপ্রসাশন মন্ত্রণালয় ‘সম্পকির্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি’। তাই তরুণ সমাজের প্রাণের দাবি জনশক্তির অপচয় রোধে চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৩৫ করা হোক। এতে করে লক্ষ লক্ষ তরুণ তাদের হারিয়ে যাওয়া সম্ভাবনাকে আবার ফিরে পাবে। দেশের প্রত্যেকটি মেধা কাজে লাগবে। দেশ এগিয়ে যাবে।
লেখক: সাবেক ছাত্র, ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।