১৯ অক্টোবর ২০১৮, ১৮:৪৪

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে খাবারের এই মান!

ডাইনিংয়ে নোংরা পরিবেশে অপুষ্টিকর খাবার  © টিডিসি ফটো

মানুষ গড়ার কারখানা হলো স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়। এখানে দেশের সব কর্ণধারদের জন্ম হয়; যারা নিজেকে পরিপূর্ণভাবে গড়ে তোলেন দেশের জন্য, জাতির জন্য। কিন্তু সেই জাতির ভবিষ্যত কর্ণধার শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে কী খায়, তা দেখলে হতবাক হবেন সবাই। সরেজমিন খোঁজ নিয়ে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) আবাসিক হলের ডাইনিংগুলোতে অবাক হওয়ার মত এমন তথ্যই পাওয়া গেছে। 

অভিযোগ উঠেছে, হলের ডাইনিং গুলোতে নিম্নমানের খাবার রান্না ও পরিবেশন করা হচ্ছে। এক বেলা রান্না করা তরকারি খাওয়ানো হচ্ছে পরের বেলা। ডাল, তরকারি ও ভাতের মধ্যে মাছি, পোকা ও চুল পাওয়ার ঘটনাও নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার  হয়ে দাঁড়িয়েছে। এমনকি ডাইনিং ম্যানেজারদের বিরুদ্ধে বাজার থেকে কম মূল্যে নিম্নমানের বাসি ও পচা সবজি ক্রয়ের অভিযোগও রয়েছে।  যা খেয়ে দিনাতিপাত করতে গিয়ে প্রতিনিয়তই ডায়রিয়াসহ অপুষ্টিজনিত নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন এখানকার শিক্ষার্থীরা।  হল ডাইনিংগুলোতে খোঁজ নিয়ে এসব অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে।

এ বিষয়ে কনজুমার ইয়থ বাংলাদেশ ইবি শাখার সভাপতি ইমরান শুভ্র জানান, ‘পচা, বাসি খাবারের অভিযোগ প্রায়ই আসে। গত ঈদের আগে আমার কাছে অভিযোগ এসেছিলো, খাবারের মধ্যে তেলাপোকার পা পাওয়া গেছে। পরে আমরা স্যারের কাছে অভিযোগ করলে খাবারের মান কিছুটা ভাল হয়।’

এদিকে খাবারের মান নিয়ে ডাইনিং ম্যানেজারদের কাছে বারবার অভিযোগ করা হলেও তারা কর্ণপাত করেন না বলে জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। তাদের অভিযোগ, ডাইনিংয়ের ব্যাপারে শুধু ম্যানেজার নয়, হল প্রশাসনও উদাসীন। খাবারের মান পর্যবেক্ষণের জন্য রুটিন করে হলের ডাইনিংয়ে রেড দেয়ার কথা থাকলেও হল প্রশাসন তা করেন না। যে কারণে খাবারের মান বৃদ্ধিতে কোন ভ্রুক্ষেপ নেই ডাইনিং ম্যানেজারদের ।

ডাইনিংয়ের ভেতরের চিত্র এমনই নোংরা, অস্বাস্থ্যকর

জানা যায়, বাজারের দর বিবেচনা করে এক বেলা খাবারের মূল্য ২০ টাকা থেকে ২২ টাকা নির্ধারণ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রভোস্ট কাউন্সিল। কিন্তু এতেও খাবারের মান বৃদ্ধি পায়নি। বরং শুরু হয়েছে ২৫, ৩০, ৩৫ ও ৫০ টাকার নতুন ব্যবসা। ফলে শিক্ষার্থীরা বাধ্য হয়ে একটু ভাল খাওয়ার আশায় চড়া মূল্যের এই খাবার গ্রহণ করছে ছাত্র-ছাত্রীরা। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, সকলেই যেন বেশি মূল্যের খাবার গ্রহণ করে, তাই ২২ টাকার খাবার ইচ্ছে করেই খারাপ করে ডাইনিং কর্মচারীরা। ২২ টাকার টোকেনে বেগুন, পুঁইশাক, লাউ অথবা আলুর সঙ্গে থাকে এক টুকরো মাছ, একটুকরো বয়লারের মাংস অথবা ডিম। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ জিয়াউর রহমান হলের আবাসিক শিক্ষার্থী হাসান আল মামুন বলেন, ‘ডাইনিংয়ের খাবারে পুষ্টি নয়, অপুষ্টিতে ভরপুর। স্যাঁতসেঁতে নোংরা পরিবেশে রান্না ও পরিবেশনের ফলে এসব খাবার খেয়ে শিক্ষার্থীরা প্রায়ই অসুস্থ হয়ে পড়ে। ২৫/৩০ টাকার খাবারটা একটু খাওয়া গেলেও তাতে তেল ও মসলা অতিরিক্ত ব্যবহার করা হয়।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টারে কর্মরত এক ডাক্তার জানান, ‘আমাদের কাছে যেসব রোগী আসে, তার মধ্যে প্রায়শ ফুড পয়জনিংয়ে আক্রান্ত শিক্ষার্থী থাকে। স্বাস্থ্যসম্মত খাবার গ্রহণের মাধ্যমে এসব সমস্যা থেকে বেঁচে থাকা যায়।’

তথ্যমতে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭টি আবাসিক হলে প্রায় সাড়ে তিন হাজার শিক্ষার্থী অবস্থান করেন।  অধিকাংশ শিক্ষার্থী নিয়মিত তিন বেলা হলের ডাইনিং থেকে খাবার গ্রহণ করে। বর্তমানে ক্যাম্পাস সময় সকাল ৯টা থেকে বিকাল সাড়ে ৪ টা পর্যন্ত হওয়ায় অনাবাসিক শিক্ষার্থীরাও সারা দিন ক্যাম্পাসে অবস্থান করেন। তাই প্রায় সকলেই (আবাসিক-অনাবাসিক শিক্ষার্থী) দুপুরের খাবার গ্রহণ করেন হলের ডাইনিংয়ে। ক্যাম্পাসের ক্যাফেটেরিয়া, ক্যান্টিন ও অন্যান্য খাবার হোটেলে সর্বনিম্ন ৩৫ টাকায় এক বেলা খাবার পাওয়া যায়।  তাই সকলে নিরুপায় হয়ে হলের নিম্নমানের খাবার খায়।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রভোস্ট কাউন্সিল সূত্রে জানা যায়, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে ২৯ হাজার টাকা, সাদ্দাম হোসেন হলে প্রায় ৩৯ হাজার, শহীদ জিয়াউর রহমান হলে ৩২ হাজার, লালন শাহ হলে ৩২ হাজার, দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলে ১০ হাজার, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলে ১২ হাজার ও খালেদা জিয়া হলে ১৬ হাজার টাকা হল প্রশাসনের পক্ষ থেকে ভর্তুকি দেওয়া হয়।  হল প্রশাসনের দেয়া এ ভর্তুকি যৎসামান্য বলে দাবি ডাইনিং ম্যানেজারদের।

এ বিষয়ে সাদ্দাম হোসেন হল ডাইনিং ম্যানেজার আবেদ বলেন, ‘ভর্তুকির টাকা পুরো পাই না।  প্রতি মাসে কর্মচারীদের বেতন দিয়ে আমার ঘাটতি থাকে।’এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রভোস্ট কাউন্সিল সভাপতি ও সাদ্দাম হোসেন হল প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. আতিকুর রহমান বলেন, ‘এখন পর্যন্ত আমার কাছে কেউ অভিযোগ করেনি। যাদের সমস্যা আছে তারা আমাদের কাছে নামসহ অভিযোগ করুক। আর শিক্ষার্থীরা আমাদের কাছে আবেদন করলে আমরা বিষয়টি দেখব।’

সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. সেলিম তোহা বলেন, আমরা হল প্রভোস্টদের সঙ্গে বসে যাচাই-বাচাই করে খাবারের মান উন্নতির জন্য দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করব। হলের ভর্তুকি ম্যানেজারদের সময় মত দেওয়া হয় বলেও দাবি করেন তিনি।