ছয় দফার উপর নির্মিত প্রথম ভাস্কর্য সোহরাওয়ার্দী কলেজের মুক্তির সনদ

 ছয় দফার উপর নির্মিত বাংলাদেশের প্রথম ভাস্কর্য ‘মুক্তির সনদ’
ছয় দফার উপর নির্মিত বাংলাদেশের প্রথম ভাস্কর্য ‘মুক্তির সনদ’  © টিডিসি ফটো

রাজধানী পুরান ঢাকার লক্ষীবাজারে অবস্থিত সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ। ঐতিহ্যবাহী এ কলেজেই প্রতিষ্ঠিত হয় ছয় দফার উপর নির্মিত বাংলাদেশের প্রথম ভাস্কর্য ‘মুক্তির সনদ’। ২০২০ সালের ২৪ মার্চ উদ্বোধনের পরে থেকে সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিকট এ ভাস্কর্যটি হয়ে উঠে গর্বের বিষয়। এ ভাস্কর্যটির উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ সরকারের সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি।

পাকিস্তান সৃষ্টির পর থেকে পূর্ব পাকিস্তানের উপর পশ্চিমা শাসকগোষ্ঠীর অব্যাহত বৈষম্য ও শোষণ নীতি চলতেই থাকে। যার প্রেক্ষিতে ১৯৬৬ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানের লাহোরে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর একটি জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে এই ‘ছয় দফা দাবি’ পেশ করেন।

ছয় দফা দাবির মূল উদ্দেশ্য ছিলো পাকিস্তান হবে একটি ফেডারেল রাষ্ট্র, ছয় দফা কর্মসূচির ভিত্তিতে এই ফেডারেল রাষ্ট্রের প্রতিটি অঙ্গরাজ্যকে পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন দিতে হবে। ছয় দফা কর্মসূচির ভিত্তি ছিল ১৯৪০ সালের ঐতিহাসিক লাহোর প্রস্তাব। পরবর্তীকালে এই ৬ দফা দাবিকে কেন্দ্র করে বাঙালি জাতির স্বায়ত্তশাসনের আন্দোলন জোরদার হয়। যার ফলশ্রুতিতে আমরা পাই আমাদের লাল-সবুজের বাংলাদেশ। এই আন্দোলন এতোই গুরুত্বপূর্ণ যে একে ম্যাগনাকার্টা (Magna Carta) বা বাঙালি জাতির মুক্তির সনদও বলা হয়।

ভাস্কর্যটির বিশেষত্ব ব্যাখ্যা করলে জানা যায়, বঙ্গবন্ধু ঠিক যেরকম ভাষায় যেরকম বানানে লাহোরে বিরোধী দলগুলোর সম্মেলনে ছয় দফা দাবি উপস্থাপন করেছিলেন। সে ভাষাতেই রাখা হয়েছে ছয় দফার ছয়টি স্তম্ভ। ভাস্কর্যটির অন্যতম আরেকটি বিশেষত্ব হচ্ছে, ভাস্কর্যটি স্থানান্তরযোগ্য। অর্থাৎ যেকোনো সময় যদি প্রয়োজন হয় তবে ভাস্কর্যটি স্থানান্তর করে অন্যত্র স্থাপন করা যাবে।

উদ্বোধনের পরে থেকে যেকোনো জাতীয় অনুষ্ঠান যেমন স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, জাতীয় শোক দিবসে মুক্তির সনদে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে আসছে। এছাড়াও সাংবাদিক সমিতির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর মতো অনুষ্ঠানেও মুক্তির সনদে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়ে থাকে।

১৯৪৯ সালের ১১ নভেম্বর কায়েদ-ই-আজম নামে কলেজটির কার্যক্রম শুরু হয়। স্বাধীনতার পরবর্তীতে ১৯৭২ সালে কলেজটির নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ। ১৯৮৪ সালের ১লা নভেম্বর কলেজটিকে সরকারি কলেজে পরিণত হলে এর নামকরণ করা হয় ‘সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ।'

সর্বশেষ ২০১৭ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে ঢাকার ঐতিহ্যবাহী সাত কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করা হয়, সেখানে স্থান পায় সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ।

‘মুক্তির সনদ’ ভাস্কর্য সর্ম্পকে অধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. মোহসিন কবীর বলেন , ‘মুক্তির সনদ হচ্ছে বাংলাদেশে ছয় দফার উপর নির্মিত প্রথম ভাস্কর্য। যেহেতু এই কলেজের ভবনগুলো একটু পুরাতন তাই সে সব কিছু মাথায় রেখে এ ভাস্কর্যটি করা হয়েছে স্থানান্তর যোগ্য। অর্থাৎ যেকোনো প্রয়োজনে এটি স্থানান্তর করা যাবে অতি অল্প সময়ে এবং কম খরচে। বাঙালির ঐতিহাসিক এই ছয় দফার যে দাবিগুলো অনেকে নিজের মনে মত করে মাধুর্য মিশিয়ে লিখতে শুরু করেছিল। কিন্তু এখানে বঙ্গবন্ধু ঠিক যে ভাষায় এই দাবিগুলো তৎকালীন লাহোরে বিরোধী দলের অধিবেশনে তুলে ধরেছিলেন সে ভাষায়ই এ দাবিগুলো তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে ছয়টি স্তম্ভে।’


সর্বশেষ সংবাদ