আমেরিকায় পিএইচডি করতে এসে কি পাপ করেছি, প্রশ্ন কুবি শিক্ষকের
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ও নিয়ম অনুসারে সহকারী অধ্যাপক পদে স্থায়ী না হওয়া, সিলেকশন বোর্ডের সিদ্ধান্ত না জানানো ও নতুন একজনকে পদটিতে নিয়োগ দেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক মোহাম্মদ আকবর হোসেন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে দেওয়া চিঠিতে ‘আমেরিকায় পিএইচডি করতে এসে কি পাপ করেছি’, এমন প্রশ্ন করেছেন তিনি। গত ২৮ মে পাঠানো চিঠির সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
চিঠিতে আকবর হোসেন বলেন, সহকারী অধ্যাপক পদে সিলেকশন বোর্ড অনুষ্ঠিত হওয়ার প্রায় দেড় বছরেও আমাকে ওই নিয়োগ বোর্ডের সিদ্ধান্ত জানানো হয়নি। কিন্তু নানা সূত্রমতে আমি জানতে পেরেছি, বিভাগীয় প্রার্থী হিসেবে আমাকে বাদ দিয়ে বাইরে থেকে নতুন একজনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। সিলেকশন বোর্ড এবং সিন্ডিকেটের এমন সিদ্ধান্ত আমাকে হতবাকই শুধু করেনি, করেছে সংক্ষুদ্ধ। বারবার মান হয়েছে, আমেরিকার মতো উন্নত দেশের একটি নামজাদা বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি করতে এমে আমি কি কোন ‘পাপ’ করেছি, যার জন্য আমাকে শাস্তি পেতে হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মোহাম্মদ আকবর হোসেন বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটিতে পিএইচডিতে অধ্যয়নরত আছেন। ২০১৩ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগে প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন তিনি। যোগদানে পর ২০১৬ সালে তিনি সহকারী অধ্যাপক পদে আপগ্রেডেশন পান। পরে প্রশাসনের বিজ্ঞপ্তির পর সে অনুযায়ী আবেদন করে গত বছরের ১৮ জানুয়ারি প্রশাসনের অনুমতি সাপেক্ষে জুমে সিলেকশন বোর্ডে উপস্থিত হন তিনি।
এদিকে সিলেকশন বোর্ডের এমন সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণ বিধিবহির্ভূত উল্লেখ করে তিনি বলেন, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রচলিত আইন ও নর্মস’র সুস্পষ্ট লঙ্ঘন হয়েছে। কুবি এবং অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রচলিত প্র্যাকটিস হলো, স্থায়ী পদ সৃষ্টি হলে জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে বিভাগে যিনি অস্থায়ী (আপগ্রেডেড) পদে আছেন, তাকে স্থায়ী করা। কিন্তু আমার সঙ্গে প্রশাসন যা করল, তা শুধু যে ‘অন্যায়’ তা নয়, এটি অভূতপূর্ব। সুস্পষ্টভাবে, আমাকে আমার ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে।
আরো পড়ুন: এনটিআরসির মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগের ব্যবস্থা করেননি ভিকারুননিসার সাবেক অধ্যক্ষ
বিষয়টি পুনর্বিবেচনার আবেদন জানিয়ে আকবর হোসেন চিঠিতে বলেন, আমেরিকার কঠিন শিক্ষাব্যবসায় পিএইচডির কোর্সওয়ার্ক ও গবেষণার চাপ রয়েছে। সে কারণেই অ্যাকাডেমিক জগতে উত্তর আমেরিকার উচ্চশিক্ষাকে অন্য যেকোনো দেশের থেকে বেশি প্রাধান্য দেয়া হয়। এসবের মধ্যে যখন নিজের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অন্যায় ও বিমাতাসুলভ আচরণ পাই, তখন আমাদের মন ভেঙে যায়। আশা করি, আমার প্রতি যে ‘অন্যায়’ কারা হয়েছে, তা পুনর্বিবেচনা করে আমার স্থায়ী পদ আমাকে ফিরিয়ে দেবেন। এতে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় সাম্প্রতিক সময়ে যে ভাবমূর্তির সংকটে পড়েছে, তার কিছু হলেও লাঘব হবে বলে বিশ্বাস করি।
এ বিষয়ে কুবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মেহেদি হাসান বলেন, যেহেতু আমাদের সে সহকর্মী এখানকারই শিক্ষক, তাই তার ক্ষেত্রে বর্তমান উপাচার্যের দুর্নীতি করার সুযোগ ছিল না। নিয়োগ পাওয়া সে প্রার্থী নতুন হওয়ায় দুর্নীতির মাধ্যমে অযোগ্য প্রার্থীকে তিনি শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন। যদি এভাবে চলতে থাকে, তাহলে আশংকা রয়েছে- অদূর ভবিষ্যতে বাহিরে অধ্যয়নরত আমাদের সহকর্মীরা তাদের কর্মস্থলে হয়তো ফেরত আসতে চাইবেন না। ওই প্রার্থীর নিয়োগ বাতিল করে সহকর্মী আকবর হোসেনের ন্যায্য অধিকার যেন দ্রুত ফিরেয়ে দেয়া হোক।
বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এফ এম আবদুল মঈনকে একাধিকবার কল দিলেও তার সাড়া পাওয়া যায়নি।