বেরোবিতে কর্মকর্তা পদোন্নতি: ইউজিসির নির্দেশনা না মেনে ‘গোপনে বসছে’ নিয়োগ বোর্ড
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) একাধিক কর্মকর্তাকে অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার (৪র্থ গ্রেড) ও সমপর্যায়ের পদে পদোন্নতি দিতে ‘গোপনে নিয়োগ বোর্ড’ ডেকেছেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হাসিবুর রশীদ। ইউজিসি বলছে, এ ধরনের নিয়োগ-পদোন্নতির কোনো ধরনের বৈধতা নেই। তারা এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেবে।
বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আজ শুক্রবার (৩১ মে) বিকেল ৩টায় ক্যাম্পাসের প্রশাসনিক ভবনে এ সভা অনুষ্ঠিত হবে। অনেকটা গোপনীয়তার আশ্রয় নিয়ে প্রার্থীদের মুঠোফোনে কল করে বোর্ডে উপস্থিত হওয়ার জন্য জানানো হয়েছে। একইসাথে এই নিয়োগ দ্রুত অনুমোদনের জন্য পরের দিন ১ জুন (শনিবার) দুপুর ১২টায় সিন্ডিকেট সভা আহ্বান করা হয়েছে।
এর আগেও একাধিকার এ নিয়োগের বাছাই বোর্ডের আয়োজন করলেও ইউজিসির নিষেধাজ্ঞায় সেটা কার্যকর হয়নি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এবার তাই উপাচার্য ভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে এ নিয়োগ কার্যকর করতে চাচ্ছেন। এবারে বাছাই বোর্ডের জন্য প্রার্থীদের কোনো কার্ড ইস্যু করা হয়নি, দেওয়া হয়নি কোনো ই-মেইল কিংবা এসএমএসও।
জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্থাপন শাখার অফিসিয়াল মোবাইল নম্বর থেকে উপ-রেজিস্ট্রার শামীমা সুলতানা গত বুধবার বিকেল ৫টার পর থেকে ২৫ জন প্রার্থীকে মোবাইলে কল করে ৩১ মে (শুক্রবার) বিকেল ৩টায় প্রশাসনিক ভবনে উপস্থিত থাকার জন্য বলেছেন। বাছাই বোর্ডে উপস্থিত হতে ডাক পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন একাধিক প্রার্থী।
বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার ও সমমর্যাদার চতুর্থ গ্রেডের পদসমূহে কর্মকর্তাদের নিয়োগের ক্ষেত্রে ইউজিসির বিদ্যমান নীতিমালা অনুযায়ী উন্মুক্ত বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে নিয়োগ কার্যক্রম সম্পন্ন করতে হয়। এ বিষয়ে ২০২১ সালের ৩১ অক্টোবর সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য একটি নির্দেশনা প্রদান করে ইউজিসি।
এতে বলা হয়েছে, প্রত্যেক বিশ্ববিদ্যালয়ে রেজিস্ট্রার, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক, অর্থ ও হিসাব এবং লাইব্রেরি— এই চার দপ্তরে ৪র্থ গ্রেডভুক্ত অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার বা সমমানের পদ থাকবে। এই পদসমূহে ইউজিসির অনুমোদন সাপেক্ষে উন্মুক্ত বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে সরাসরি নিয়োগ দিতে হবে। এসব পদসমূহে পদোন্নতি/আপগ্রেডেশন দেওয়া যাবে না।
ইউজিসির এই নির্দেশনা অমান্য করে এর আগেও ২০২২ সালের ১৯ ডিসেম্বর প্রথমবারের মতো বেরোবি উপাচার্য অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার/সমমানের পদে পদোন্নতি দেওয়ার জন্য বাছাই বোর্ডের আয়োজন করেছিলেন। বিষয়টি ইউজিসির নজরে আসলে ওই বছরের ১১ ডিসেম্বর পদোন্নতি বা আপগ্রেডেশন কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়। একইসঙ্গে ইউজিসির পক্ষ থেকে এ বিষয়ে দুই কার্যদিবসের মধ্যে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়।
এরপর ২০২৩ সালের ১১ ডিসেম্বর পুনরায় একই পদে আপগ্রেডেশনের জন্য বাছাই বোর্ডের সভা আহ্বান করা হয়। এরপর একইভাবে কমিশন সভার একদিন আগে ওই নিয়োগ সংক্রান্ত সব কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশনা দেন। এবারও এ নিয়োগ কার্যক্রমের বিষয়ে চাওয়া হয় লিখিত ব্যাখ্যা। ফলে দ্বিতীয় দফায়ও এ নিয়োগ বোর্ডের কার্যক্রম ভেস্তে যায়।
ইউজিসির নিষেধাজ্ঞার কারণে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হাসিবুর রশীদ সর্বশেষ বাছাই বোর্ডের মাধ্যমে কর্মকর্তাদের আপগ্রেডেশন দিতে না পেরে সরকারি ‘চাকরি [স্ব-শাসিত এবং রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানসমূহ] (বেতন ভাতাদি) আদেশ ২০১৫ এর অনুচ্ছেদ-১২’ এর অপব্যাখ্যা করে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তাদের ৪র্থ গ্রেড প্রদানের কার্যক্রম গ্রহণ করেন। এ দফায়ও কমিশন চিঠি দিয়ে নিয়োগের সব কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্থাপন শাখার কর্মকর্তা শামীমা সুলতানার সঙ্গে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করেও তার থেকে কোনো ধরনের প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
এ ধরনের বাছাই বোর্ড আয়োজন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্থাপন শাখা। শাখা সূত্রে জানা যায়, ওই বাছাই বোর্ডে উপাচার্যের সভাপতিত্বে ট্রেজারার অধ্যাপক ড. মো. মজিব উদ্দিন আহমেদ এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের উপসচিব এ বি এম ইফতেখারুল ইসলাম খন্দকার উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে।
বাছাই বোর্ডের সদস্য এ বি এম ইফতেখারুল ইসলাম খন্দকার বলেন, নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে আমি কিছু জানিনা। বিষয়টি বোর্ড চেয়ারম্যান (উপাচার্য) ভালো বলতে পারবেন।
ইউজিসির নির্দেশনা উপেক্ষা করে বারবার এ ধরনের বাছাই বোর্ড আয়োজনের বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হাসিবুর রশীদের কাছে জানতে তার সঙ্গেও একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়েছে। তার থেকেও এ বিষয়ে কোনো ধরনের প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
জানতে চাইলে ইউজিসি সচিব ড. ফেরদৌস জামান শুক্রবার দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, কমিশনের পক্ষ থেকে গতকাল বোর্ড বন্ধের জন্য চিঠি দেয়া হয়েছে। আমরা তো পুলিশ না যে বোর্ড বন্ধের জন্য মাথায় বারি দিতে পারি। এরপরেও যদি আপগ্রেডেশন দেয়া হয় তাহলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।